নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা সাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত (১৮৬৩-১৯২২খ্রীষ্টাব্দ)।
কে.সি.আই.ই
নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা ছিলেন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সংবাদপত্রের সম্পাদক, বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য,বেঙ্গল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য, কলকাতা হাইকোর্টের পূর্ববঙ্গের প্রথম বিচারপতি এবং প্রেসিডেন্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল। নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদার ১৯৬২ খৃষ্টাব্দে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ গ্রামে(গোকর্ণ সাহেব বাড়িতে) জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে ত্রিতল বিশিষ্ট ভবনটি ‘গোকর্ণ নবাব বাড়ি কমপ্লেক্স’ নামে পরিচিত। পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া কুমিল্লা জেলার অন্তরভুক্ত ছিল এবং ভারত বিভাজন এর পূর্বে পার্বত্য ত্রিপুরার অন্তর্গত ছিল।
তাঁর দাদা সৈয়দ শাহ শরাফত উল্লাহ ছিলেন আইনজীবী, চট্টগ্রাম বিচার বিভাগের সাব‑জজ। তাঁর পিতা সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ ছিলেন আইনজীবী, ফার্সী কবি, তৎকালে কলকাতা থেকে প্রচারিত দুরবীন পত্রিকার সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষিত দুইটি ফার্সী পান্ডুলিপি “ফাওয়াদ‑ই-শামসিয়া” ও “ইসতিলাহাতুল সুয়ারা” প্রনেতা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে। এক কথায় ধর্মিশক্ষা এ পরিবারের চিরন্তন অনুরাগের কথা সর্বজন স্বীকৃত। শামসুল হুদা উত্তরাধিকারী সূত্রে ঐসব গুনের অধিকারী হন।
তিনি সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দীন রহঃএর পঞ্চম অধস্থন পুরুষ সৈয়দ ইসমাঈল (রঃ)এর বংশের একজন সুযোগ্য অধস্থন। সৈয়দ ইসমাঈল (রঃ) থেকে বংশক্রম তার পিতা সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ (রহ:) পর্যন্ত নিম্নরুপঃ-সৈয়দ ইসমাইল (রহ:)[গোকর্ণ আদি]> সৈয়দ শাহজালাল রহ:>সৈয়দ আহমদ (রহ:)>সৈয়দ আজিম উদ্দিন রহ>সৈয়দ শাহ ওয়াজি উদ্দিন>সৈয়দ আসাদুল্লাহ(রহ:)>সৈয়দ শাহ মহিবুল্লাহ>সৈয়দ শাহ কুদরত উল্লাহ>সৈয়দ শাহ শরাফত উল্লাহ>সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ।
সৈয়দ শামসুল হুদা তার নিজ গৃহে পিতার নিকট থেকে আরবি, ফারসি, উর্দু, বাংলা ও ইসলাম বিষয়ক প্রথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ঐতিহ্যগত শিক্ষা সমাপনের জন্য হুগলী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। আধুনিক শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন ও ১৮৮৪ সালে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৮৮৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব ল’ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৮৮৯ সালে ফার্সীতে সুনামের সহিত প্রেসিডেন্সী কলেজে হতে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।সৈয়দ শামসুল হুদা প্রতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে বিংশ শতাব্দীর গুড়ার দিকে তার সমকালীন সময়ের মুসলিম পণ্ডিত হিসাবে খ্যাতি অর্জন করলেন।
সৈয়দ শামসুল হুদা কলকাতা মাদ্রাসায় প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন এবং একই বছরে মাওলানা উবাইদুল্লাহ আল উবাইদি সাহরাওয়ারদি মারা গেলে সৈয়দ শামসুল হুদা আরবি ও ফার্সি বিভাগে অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। পাশাপাশি ১৮৮৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট‑এ আইন চর্চা শুরু করেন।এর কিছু দিনের মধ্যে তাঁর অপূর্ব প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের একজন প্রথম শ্রেণীর আইনজীবী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। সে সময় কলকাতা হাইকোর্টে তাঁরমত জাদরেল মুসলিম আইনজীবী আর কেহ ছিল না। ওকালতিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করায় শামসুল হুদার প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ১৮৯৪ সালে শামসুল হুদাকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশীপ প্রদান করা হয়। ১৯০২ খৃস্টাব্দে তাঁকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের “ঠাকুর আইন অধ্যাপক” নিযুক্ত করা হয়। ঐ অধ্যাপনার সময় দন্ডিবিধি আইন সম্পর্কে তিনি যে ধারাবাহিক বক্তৃতা দেন, সেগুলো পরবর্তী সময়ে “বৃটিশ দন্ডবিধি আইন” (The Principle of the Low of Crimes in British India) নামে প্রকাশিত হয়। ঐ সময় হতে তাঁর আইনাভিজ্ঞতার খ্যাতি দেশময় ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্র প্রাসাদ এক সময় সৈয়দ শামসুল হুদার এ্যাপ্রেনটিস ক্লার্ক ছিলেন, তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে শামসুল হুদার ওকালতি সম্পর্কে বলেন,:-“He was a famous lawyer and was considered a leader of the Muslims. He was held in high esteem both by the judges and his clients. He had a very good practice and always had many briefs in hand.”
বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার বিকাশে তাঁর বেশ অবদান রয়েছে। তিনি বাংলা সংবাদপত্র ‘সুধাকর’প্রকাশ করেন এবং ‘মিহির ও সুধাকর’ এর প্রকাশনা স্বত্ব ক্রয় করেন। ১৮৮৯ সালে একজন ভারতীয় মুসলিম কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম ইংরেজী সাপ্তাহিক ‘মোহামেডান অবজারভার’-কে তিনি আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন এবং এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
উনিশ শতকের শেষার্ধে স্যার সৈয়দ আহমাদ (১৮১৭-১৮৯৮) ও তাঁর সহযোগীরা যখন উত্তর ভারতে মুসলিম রেনেসাঁ আন্দোলনের মশাল জ্বেলে রেখেছিলেন, তখন বাংলার অনুরূপ আন্দোলনের দিকপাল ছিলেন নওয়াব আব্দুল লতিফ, সৈয়দ আমির আলী, মাওলানা আব্দুর রউফ, উবায়দুল্লাহ সোহরাওযার্দী প্রমুখ। কিন্তু ঐ আন্দোলন বিশ শতকে পদার্পন করার পূর্বেই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়লে বাংলার মুসলমানরা সেই অগ্রযাত্রার পথে অনেকটা নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। তাঁদের মৃত্যুর পর সৈয়দ আমির আলীর “ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশন”(১৮৭৭) ও নওয়াব আব্দুল লতিফের “মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি“র (১৮৬৩) স্লথ গতি দেখে মুসলিম সামজ হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়ে। ভারতের তখন মুসলিম নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা যায়।এই অবস্থার প্রেক্ষিতে নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমেদ, ব্যারিস্টার সুলাইমান প্রমূখ তরুন ও নবীন মুসলিম নেতাদের নিয়ে নব উদ্দিপনায় ১৮৯৩ সালে কলকাতায় “ক্যালকাটা মোহামেডান ইউনিয়ন” নামক একটি সক্রিয় মুসলিম সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
যখন হিন্দু কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ বিভক্তির দিকে এগিয়ে গেলেন,টিক তখনই ১৮৯৫ সালে মুসলিম নেতৃবৃন্দ কলকাতা ইউনিয়নের দ্বিতীয় বাৎসরিক সভার আয়োজন করেন। সৈয়দ শামসুল হুদা উক্ত সভায় যোগ দেন এবং বিভক্তির দিকে না গিয়ে সকল জনতাকে এক হওয়ার জন্য আওভাণ করে ‘ভারতীয় রাজনীতি এবং হযরত মোহাম্মাদ (সঃ)’ এ শিরোনামে বক্তব্য রাখেন। তিনি তার স্পর্শকাতর বক্তৃতায় ভারতীয় মুসলিমদের রাজনৈতিক নীতি ও আদর্শ এবং কীভাবে কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে প্রস্তাব রাখেন।বাজেটকৃত বরাদ্দের সমূদয় অর্থ ভারতের রাজধানী কলকাতার নিকটে অবস্থিত জেলা সমূহে স্কুল, কলেজ, হাঁসপাতাল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যয় হয় বিধায় সৈয়দ শামসুল হুদা সর্বপ্রথম ১৯০৫ সালে বাজেটের বিরোধিতা করেন এবং সমভাবে পূর্ববাংলার উন্নয়নের জন্য নীতি গ্রহণের সুপারিশ করেন। তিনি এ বিষয়টি সুপ্রতিষ্ঠা করেন যে, এ উন্নয়ন পূর্ববাংলার মুসলিম জনতার জন্য সুবিধাজনক হবে যদিও উচ্চ বর্ণের হিন্দুগণ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতন ও বিদ্বান হিসাবে সৈয়দ শামসুল হুদা নতুন সত্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন যা তিনি তার নিজের ভাষায় লিখেছেন:
(ইংরেজি)
(বাংলা)
« I claim that after the creation of the new Province, East Bengal has received a great deal more of personal attention. Before the Partition the largest amount of money used to be spent in districts near Calcutta. The best of Colleges, Hospitals and other institutions were founded in or near about the capital of India. Bengal alone now reaps the benefit of those institutions towards which both the Provinces had contributed. We have inherited a heritage of the accumulated neglect of years and cannot be blamed if [we] require large sums to put our house in order.”
“They [Hindus] have benefited for very many years out of the revenues of Eastern Bengal and have paid very little for its progress and advancement … I will only say that if Eastern Bengal now for some years costs money, and if that money is to come from any province outside East Bengal, it should come from Western Bengal and the members from that province should not as any rare grumble at it.
« আমি মনেকরি, নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হওয়ার ফলে পূর্ববাংলার প্রতি সকলেরই ব্যক্তিগত মনোযোগ আকর্ষিত হয়েছে। বিভাগপূর্বকালে বিপুল পরিমাণ অর্থ কলকাতার অদূরে অবস্থিত জেলাসমুহে ব্যয় করা হতো। সেরা কলেজ, হাসপাতাল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমুহ ভারতের রাজধানী অভ্যন্তরে অথবা তার কাছাকাছি এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন উভয় প্রদেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল, বাংলা এখন থেকে একাকী ঐ সকল সুবিধাদি পাওয়ার অধিকারী। আমরা বিগত বছরের সঞ্চিত অবহেলার এক ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকারী তাই [আমরা] যদি বড়অঙ্কের অর্থ নিজভূমের উন্নয়নের স্বার্থে রেখেদেয়ার দাবী করি তবে তাতে নিন্দা করার কিছু নেই।”
“তারা [হিন্দুগণ] পূর্ববঙ্গের রাজস্বে বহু বছর ধরে উপকৃত হয়ে আসছে, কিন্ত, এর উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য যৎসামান্যই ব্যয় করেছে…আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে, যদি পূর্ববঙ্গ এখন কয়েক বছরের জন্য অর্থ ব্যয় করে এবং উক্ত অর্থ পূর্ব বাংলার বাইরে কোনো প্রদেশ থেকে আসে, তাহলে তা পশ্চিম বঙ্গ থেকে আসা উচিৎ এবং এতে, সেই প্রদেশের সভ্যদের এতটা অসন্তোষ প্রকাশ করার কিছু নেই।”
M. Ahdullah, op.cit.;The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯‑৫
১৯০৪ সালে রাজশাহীতে ‘বঙ্গীয় প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলনে’ তিনি সভাপতিত্ব করেন। ঐ অধিবেশনে শামসুল হুদা ইংরেজীতে এক গুত্বপূর্ণ ভাষন দেন। ঐ ভাষনে তিনি শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসা-বানিজ্য, ভু-সম্পত্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলার মুসলমানদের পতনশীল অবস্থা এবং তার কারণসমূহ তুলে ধরেন।
সৈয়দ শামসুল হুদা ১৯০৯ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের ‘আইন সভা’র সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বছর তিনি (১৯১০ সালে) পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে “কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের” (Imperial Legislative Council) এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১১ সালে আইন সভায় তাঁর বাজেট বক্তৃতার উপর ২৮ মার্চ ১৯১১ কলকাতায় ‘The Statement’ পত্রিকায় লিখেছেন, “Syed Shamsul Huda referred to the large Surplus in the Opinion revenue which is the imperial Govt. to make large grants to the Different Province for Education and Sanitation.”
শামসুল হুদার মুসলিম হিতৈষনার প্রতি লক্ষ্য করে তাঁকে ১৯১২ সালে “অল-ইন্ডিয়া মুসলিমলীগ” এর সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গীয় শাসন পরিষদের সদস্য হিসেব যোগদানের সময় তিনি সেই পদ ত্যাগ করেন। এই সময় তিনি পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গের মুসলিম রেনেসা ও রাজনৈতিক মূলক সব আন্দোলনের সাথেই তিনি কমবেশী জড়িত ছিলেন এবং স্বাধীনভাবে মুসলিম বাংলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তখনো কোন সরকারী খেতাব পাননি, তবুও দিল্লীর কারনেশন উৎসব উপলক্ষে ১৯১১ সালে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত “Who’s who is in India’ নামক গ্রন্থে তাঁর পরিচিতি প্রসংগে বলা হয়েছিল, “He is one of the leader of Public opinion in his province, and is on the fore-front of all movements Concerning the Muhammadan Community”.
১৯১২ সালে বৃটিশ সরকার নবাব শামসুল হুদাকে “বেঙ্গল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল” এর সদস্য হওয়ার আহবান করেন। শামসুল হুদা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য হতে যাচ্ছেন এ সংবাদ তাঁর আনুষ্ঠানিক নিযুক্তির পূর্বেই দেশময় ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর এই নিয়োগ বার্তাকে স্বাগত জানায়।
মওলানা মোহাম্মদ আলী ০৩-০২- ১৯১২ তারিখের ‘কমরেড’ পত্রিকায় শামসুল হুদার আসন্ন নিয়োগের আবাস পেয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, The duties of a member of council are varied and onerous and only a man of great strength of character and of mind, having the power of handle all administrative problems with true insight, judicious temper and broad and statesman like outlook, can discharge then well. The Hon’ Mr. Shamsul Huda eminently satisfies the test of fitness, if we have all these qualifications in mind.
মার্চ ২৪, ১৯১২ তারিখে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে দুইজন ইউরোপিয়ান এবং সৈয়দ শামসুল হুদাকে একই পত্রে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত করা হয়। ঐ পত্রে শামসুল হুদা-কে কলকাতা হাইকার্টের ‘খ্যাতনামা উকিল’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। ঐ কাউন্সিলে তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম ভারতীয় সদস্য। এ যাবতকাল ঐ কাউন্সিলে ইউরোপীয় লোকেরাই সদস্য থাকেতন।
১৯১৯ সালের দ্বৈত শাসন পদ্ধতি ও শাসন সংস্কার আইন প্রবর্তন হওয়ার পূর্বে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যগণরাই তখন মন্ত্রী পর্যায়ভূক্ত ছিলেন। তারা গভর্ণরের বিভিন্ন বিভাগীয় গুরু দায়িত্ব পালন করতেন। তাদের হাতে ছিল বিরাট ক্ষমতা। শামসুল হুদা ঐ কাউন্সিলে “স্থানীয় শায়ত্ব শাসন” ও “শিক্ষা বিভাগের” দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ছিলেন গভর্ণরের আস্তাভাজন ব্যক্তি। ১৯১৭ সালে তিনি ঐ কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। তিনি সব সময় পরিস্থিতি নিজ আয়ত্বে রাখেতন এবং কাউন্সিলে তিনি সকল সম্প্রদায়ের সাথে অভিন্ন আচরণ করেতন।
লর্ড কারমাইকেল বলেন;- In all my endeavours to promote the welfare and to meet the legitimate desires of your community (Musalmans) I have been ably advised by my colleague the Honable Nawab Sir Syed Shamsul Huda and I am glad to take this opportunity to testify to the fact that in my judgement the Mohamedan community in Bengal could have had no more sympathetic or better advocate than he has been.(আমার পক্ষ থেকে কল্যাণের সকল প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়ন করা এবং আপনাদের সম্প্রদায়ের (মুসলিমগনের) ন্যায্য দাবী সমূহ সঠিক ভাবে পূরণ করার জন্য আমার সহকর্মী মাননীয় নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদার কাছে থেকে যে পরামর্শ পেয়েছি, আমি এই সুযোগে তার সত্যতা স্বিকার করার মাধ্যমে আনন্দিত হচ্ছি যে, আমার বিচারে বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়র জন্য তাঁর চেয়ে সহানুভূতিশিল বা উপযুক্ত কোন সমর্থক হতে পারে না।)
Englishman, 19th March 1917.;The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯‑৫
“His term of office as the first President or the Bengal Legislative Council under the reformed constitution was the crowning distinction of a career in which he had already earned honours enough to satisfy the ambition of most men. In accepting that office he rendered the greatest service within his power to Bengal and to the Reforms — a service which will always be held in honourable remembrance. Until failing health compelled his retirement he gave his energies and his exceptional abilities ungrudgingly for the benefit of his countrymen, who will treasure his memory, with gratitude.”
(“তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট বা বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (সংশোধিত সংবিধানের অধীনে) অভিষেককৃত সভ্যের উচ্চ পদমর্যাদাপূর্ণ আসন অর্জন করেছিলেন যার প্রতি মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে থাকে। উক্ত আসন গ্রহণে ও অর্জিত ক্ষমতার সুষ্ঠু প্রয়োগে বাংলা এবং তার অবকাঠামোগত সংস্কার আনয়নের মাধ্যমে যে প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়েছিল, তা সর্বদা সম্মানের সাথে স্মরণ করা হবে। ভগ্ন স্বাস্থ্য তাঁকে অবসর গ্রহনে বাধ্য না করা পর্যন্ত তিনি নিজেকে এবং তার ব্যতিক্রমী ক্ষমতাকে দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন, তা যে-কেও স্মৃতির মণিকোঠায় কৃতজ্ঞতাভরে বন্দি করে রাখবে।”)
The Calcutta-based Statesman, 10 October 1922; The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯‑৫

Lord Carmichael সেন্ট্রাল মোহামেডান কর্তৃক তা উদ্দশ্যো দেয়া বিদায় সম্ভাষনে নওয়াব শামসুল হুদাকে উদ্দেশ্য করেন বলেন, “I have had near my as my colleague through out five years the Hon: Nowab Sir Syed Shamsul huda K.C.I.E At my council Board the Nowab Shamsul Huda has always fearless erotic of the Government measure and through perfect by fair to all, a strong advocate of Mohamedans interests.
এর আগে শামসুল হুদা ১৯১৩ সালে ‘নওয়াব’ এবং উজ্জ্বল প্রতিভাবলে ১৯১৬ সালে‘ কে,সি,আই,ই’ (Night Commander of Indian Emperor) উপাধি লাভ করেন। সিপাহশালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহঃ) এর বংশধরদের মধ্যে একমাত্র সৈয়দ শামসুল হুদাই এ উপাধিতে ভূষিত হন।তিনি ১৯১৭ সালে সৈয়দ আমীর আলী পর কলকাতা হাইকোর্টে বাংলার দ্বিতীয় মুসলিম বিচারপতি হিসাবে অধিষ্ঠিত হন।১৯২১ সালে অবিভক্ত বাংলার সংস্কারকৃত লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় মুসলিম প্রেসিডেন্ট হন।

এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে ৫ বছর থাকাকালে তিনি বাংলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যান, বিশেষ করে মুসিলম স্বার্থে বেশ কয়েকিট গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন।
• মুসলমানদের প্রতি বড় অবদান হলো, তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারী চাকুরীতে শতকরা ৩৩ জন মুসলমান নিয়োগের সার্কুলার জারী করা হয় ফলে বঙ্গীয় মুসলমানদের শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়। প্রশাসনে ভারতীয়দের অংশ গ্রহণে অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। বড় বড় পদে ভারতীয়দের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
• স্থানীয় সংস্থাসমূহকে সুসংহত করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট দেশীয় কর্মকর্তাদের হাতে অধিকতর ক্ষমতা অর্পিত করা হয়।
• পানি সরবরাহের উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হতো তাতে জনগনকে এক তৃতীয়াংশ ব্যয় বহন করতে হতো। শামসুল হুদা ঐ প্রথা রহিত করেন এবং শহর সমূহে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধি করেন।
• স্বাস্থ্য বিষয়ক পন্থার উৎকর্ষ সাধনে অধিকতর ফলপ্রসু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর এসব সংস্কারের ফলে মোগল আমলের পঞ্চায়েত প্রথার জের বিলুপ্ত হয়ে আধুনিক পদ্ধতির স্বায়ত্বশাসনের ভিত স্থাপিত হয়। অল্প কথায় স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের উন্নিত বিধানে শামসুল হুদার অবদান অনস্বীকার্য।
• এক্সিকউটিভ কাউন্সিলে থাকাকালে শামসুল হুদা মুসলমানেদর স্বার্থের কথা ভুলে যাননি। বড়লাট ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ববাংলার মুসিলম শিক্ষার জন্য একজন ‘স্পেশাল অফিসার’ নিয়োগ করারও অঙ্গীকার করেন। কিন্তু কার্যত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ন্যায় ‘স্পেশাল অফিসার’ নিয়োগের বিষয়িটও শিকায় তুলে রাখা হয়। ১৯১২ সালের শেষের দিকে শামসুল হুদার চেষ্টায় গোটা বঙ্গ প্রেসিডেন্সী মুসলিম শিক্ষার জন্য “এ্যসিসটেন্ট ডিরেক্টর ফর মোহামেডান এডুকেশন” এর পদ সৃষ্টি করা হয় এবং তাঁরই উদ্যোগে ১৯১৪ সালের ৩০জুন মুসলিম শিক্ষার উন্নিতকল্পে ডব্লিও.ডব্লও হার্নেলের নেতৃত্বে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট “মোহামেডান এডুকেশন এডভাইজার কমিটি” গঠিত হয়।
নবাব শামসুল হুদার উদ্যোগে প্রত্যেক বিভাগে একজন করে মোট ৫(পাঁচ) জন মুসলমান ইন্সেপক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়।
• শিক্ষা ক্ষেত্রে নওয়াব শামসুল হুদার বহু অবদান রয়েছে। এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য থাকাকালে শামসুল হুদা একটি মুসলিম কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে ৯(নয়) লক্ষ টাকার বিনিময়ে কলকাতার ওয়েলেসলী স্টীটে একখন্ড জমি ক্রয় করেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দরুন তাঁর পক্ষে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ১৯২৬ সালে এ.কে ফজলুল হকের উদ্যোগে বহু চেষ্টার পর “কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ” নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐ কলেজটি বর্তমানে “মাওলানা আযাদ কলেজ” নামে অবহিত।
• নারী শিক্ষার প্রতিও তাঁর বিশেষ লক্ষ্য ছিল। মুসলিম বালিকাদের শিক্ষার উন্নিতকল্পে তিনি কলকাতা ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স স্কুলে ও ‘সোহরাওয়ার্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’সহ অনেক স্কুলে সরকারী সাহায্য বৃদ্ধি করেন। কলকাতা ‘বেকার হাস্টেলে’র জন্য তিনি গভর্নমেন্টের নিকট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা আদায় করে দেন।
• মহসিন ফান্ড থেকে মুসলিম শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হতো। তিনি শিক্ষকদের বেতন সরকারী ফান্ড থেকে দিয়ে মহসিন ফান্ডের ঐ অর্থ মুসলিম ছাত্রদের বৃত্তির খাতে ব্যয় করার ব্যবস্থা করেন।
• তিনি দরিদ্র ছাত্রদের জন্য কলকাতায় ‘কড়েয়া মুসলিম স্কুল’ স্থাপন করেন। কলকাতার বৈঠকখানা রোডে ‘কারমাইক্যাল হোস্টেল’ তারই সৃষ্টি।
• তিনি তার পৈত্রিক সম্পত্তির উপর ১৯১৫ সালে বিদ্যালয় স্থাপন করেন, পরে তিনি উক্ত বিদ্যালয়টি তার সমবয়সী চাচার নামে উৎসর্গ করে দেন। এটি গোকর্ণ সৈয়দ উয়ালী উল্লাহ হাই স্কুল নামে পরিচিত।এটিই নাসিরনগর উপজেলায় স্থাপিত প্রথম বিদ্যালয় যেখানে হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেয়েছিল।ব্রাহ্মনবাড়ীয়া অন্নদা স্কুলের ছাত্রদের জন্য স্ত্রীর নামে নির্মান করেন “আসমাতুন্নেছা ছাত্রাবাস”।
• মক্কায় পবিত্র হজ্জ্ব গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের তত্বাবধানের জন্য তাঁরই প্রচেষ্টায় Protector of pilgrims নামে একটি পদের সৃষ্টি করেন।
• ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে লর্ড রোনাল্ডসে (১৯১৭-১৯২২ সাল) কর্তৃক স্থাপিত হয়।তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর রোনাল্ডশে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (বর্তমান সিনেট) আজীবন সদস্য ঘোষনা করেন।তখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রোকেয়া হলে’র পূর্ব নাম ছিল তাঁরই নামানুসারে ‘হুদা হাউজ’। সৈয়দ শামসুল হুদার সুপারিশে স্যার এ. এফ. রাহমান কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট মনোনীত করা হয়, তিনি পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়-এ কার্যরত ছিলেন।
কলকাতা হাইকার্টের বিচারপিতঃ
দীর্ঘ ৫ বছর Bengle Executives Council এর সদস্য থাকার পর ১৯১৭ সালের জুন মাসে নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা-কে কলকাতা হাইকার্টের বিচারপিত নিযুক্ত করা হয় এবং ১৯২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ববঙ্গের প্রথম মুসলিম হাইকোর্ট জজ হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালে তিনি বেশ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর তিনি হাই কোর্ট বেঞ্চে যেসব গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেন পরবর্তীতে সে গুলো দেশের বিভিন্ন কোর্টে নজির (Precedents) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট :
নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা বিচারপতি থেকে অবসর গ্রহণ করে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং ১৯২১ সালের ৩রা জানুয়ারী “Bengal Legislative Council” এর স্পিকার তথা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন ব্যবস্থাপক সভার প্রথম ভারতীয় প্রেসিডেন্ট তথা স্পীকার। তাঁর এই নিয়োগে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁকে অভিনন্দিত করে। ১৩/১২/১৯২১ তারিখে “ইংলিশম্যান” পত্রিকায় প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর নিয়োগের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে “Islam and Modern learning” শীর্ষক এক সম্পাদিকীয় প্রবন্ধে বলা হয়:-“উচ্চ ঐশ প্রতিভাসম্পন্ন মুসলমান তথা নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা এই যুগ‑সন্ধিক্ষনে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হয়েছেন‑এটা এমন একাট পদ মর্যাদা ও এমন একটা সৌভাগ্য যা এর আগে আর কোন ভারতীয়ের ভাগ্যে জোটেনি”।(বাংলা অনুবাদ)
স্পীকারের দায়িত্ব পালন করা আজকাল যেমন সহজ সাধ্য নয়, সেকালেও তা ছিল কঠিন, বরং আরো জটিল। ডিচার তাঁর ডায়রীতে শামসুল হুদাকে ‘নাখোদা’ (নৌ-পাল) বলে অভিহিত করেন। আইন পরিষদের স্পীকাররূপে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতার নিরিখে ইংল্যান্ডের হাউজ অব কমন্সের স্পীকার জেমস্ লোথারের সাথে তাঁর তুলনা করেন। ইতোপূর্বে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে তিনি সভাপতির অধীনে কাজ করেছেন। কিন্তু এখানে তিনি নিজেই সভাপতি। এখানে তিনি প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচয় দেন।
১৯২২ সালের জুলাই মাসে তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দেন। প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর ব্যবস্থাপক সভা কর্তৃক তাঁর উদ্দশ্যে এক বিদায়ী সম্ভাষনের আয়োজন করা হয়। শামসুল হুদার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দেশের যে ক্ষতি সাধিত হয়, ঐ সভায় দুঃখ প্রকাশ করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। রায় জোগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ প্রস্তাবটি উত্থাপন করে ভাষন দেন এবং তা সর্বসমম্মতক্রেম সমর্থন করে অন্যান্য সদস্যগনও বক্তব্য রাখেন। রায় যোগন্দ্রচন্দ্র ঘোষ শামসুল হুদার প্রশাসিনক ক্ষমতা, ন্যায়নিষ্ঠতা ও স্বাধীন চিত্ততার প্রসংসা করে বলেন, “Strong, fair and impartial, Sir Syed Shamsul Huda steered straight our frail bark in the new unknown sea of political freedom buffeted by storms of violent and non-violent faction with singular ability ….. In all walks of life he displayed rare ability, fairness and independence.
ঐ বিদায় সভায় এ.কে. ফজলুল হক বলেন; “He has been a prominent figure in Indian political life for a number of years and during the last ten years he had been filling some of the highest offices under the Crown with exceptional tact and ability.”
প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অবসর গ্রহনের পর শামসুল হুদার স্বাস্থ্যের আর উন্নিত হয়নি।কয়েকমাস পরে ১৯২২ সালের ৭ই অক্টোবর সন্ধায় ৬‑৪০ ঘটিকায় ২১১ নং লেয়ার সার্কলার রোডস্থিত তাঁর নিজ বাসভবনে অভিভক্ত বাংলার তথা ভারতের উজ্জ্বল জোতিস্ক দেশবাসীকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ভাই মাওলানা সৈয়দ মালীহ, ব্যারিস্টার মাসিহ একমাত্র বোন রাবেয়া খাতুন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী, আত্মীয়‑স্বজন রেখে যান। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান।তাকে কলকাতার তিলজলাস্ত মিউনিসিপাটিলি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদার মৃত্যুলগ্নে ‘স্টেটস্ ম্যান’ পত্রিকা এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে কর্মক্ষেত্রে তাঁর চরম উন্নিত ও খ্যাতিলাভ এবং বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় পরিকল্পিত শাসন সংস্কার ক্ষেত্রে তাঁর অবিস্মরনীয় অবদান বর্ণনা করে লেখা হয়ঃ “His term of office as the first President of the Bengal Legislative Council under the reformed constitution was the crowning distinction of a career in which he had already earned honours enough to satisfy the ambition of most man. In accepting that office he rendered the greatest service within his power and to the Reforms- a service which will always be held in honourable remembrance. Until failing health compelled his retirement he give his energies and his exceptional abilities ungrudgingly for the benefit of his countrymen, who will treasure his memory with gratitude.
তাঁর মৃত্যুতে ব্যবস্থাপক সভার ১ম অধিবেশনে (২২শ নভেম্বর, ১৯২২) এক শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়্ । প্রস্তাবক ছিলেন ব্যবস্থাপক সভার প্রেসিডেন্ট এইচ.ই.এ কটন। ব্যবস্থাপক সভার সকল সদস্য মরহুম শামসুল হুদার জীবনবৃত্তান্ত, তাঁর কার্যাবলী ও গুনাবলী আলাচনা করে শোক প্রস্তাবিট সর্বসম্মিতক্রমে গ্রহন করেন। ঐ অধিবেশনে বাবু ইন্দ্র ভোষন দত্ত বলেন, “তিনি ছিলেন আমার স্বজেলা ত্রিপুরার অধিবাসী; তিনি নিজ প্রতিভা ও ব্যক্তিত্ববলে সাধারণ পদ থেকে ভারতীয়দের জন্য উম্মুক্ত সর্বোচ্চ পদ মর্যাদায় উন্নিত হন। ব্যবস্থাপক সভার কার্য পরিচালনায় তিনি দক্ষতা, আত্মসম্মানেবাধ ও চরম নিরপেক্ষতার পরিচয় দেন, এবং এজন্য তিনি ব্যবস্থাপক সভার সকল শ্রেণীর লোকের সম্মান লাভ করতে সক্ষম হন”।
মহেন্দ্রচন্দ্র মিত্র বলেন, “তিন যা কিছু বলেতন, মন থেকেই বলতেন; তাঁর এই আন্তিরকতাই তাঁকে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তিনি আমাদের প্রশংসা করেতন বলেই আজ তিনি আমাদের কাছে প্রশংসিত। তিনি আমাদের ভালবাসতেন বলেই আজ তিনি আমাদের প্রিয়। আমাদের মনে তিনি যে দাগ কেটেছেন, যতিদন আমরা বেঁচে থাকবো, তা মুছবার নয়”।
সৈয়দ শামসুল হুদা মৃত্যুলগ্নে বর্ধমানের আবুল কাসেম তাঁর “প্রগ্রেস পত্রিকায়” এক দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রবন্ধ প্রকাশ করেন (১৪/১০/১৯২২)। তিনি বলেন, “শামসুল হুদা ছিলেন জাতির অমূল্য সম্পদ, সত্যিকারের মুসলমান ও সত্যিকারের ভারতীয়। সারা জীবন তিনি ছিলেন একজন গোঁড়া মুসলমান। ইউরোপীয় জীবন পদ্ধতি অবলম্বনের কথা তিনি স্বপ্নেও কোন দিন ভাবতে পারেননি। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল দোষমুক্ত এবং তাঁর জীবন পদ্ধতি ছিল সরল ও সাদাসিধে”।
কলকাতা হাইকোর্টের উকিল তারকচান্দ চক্রবর্তী নওয়াব সাহেবের মৃত্যু উপলক্ষ্যে ১৩/১০/১৯২২ তারিখের স্টেটম্যান্ট পত্রিকায় এক দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিন বলেন, ‘His heart knew not the barriers of race and creed. No man ever had so many intimate friends among the members of his own profession, and friendship of Sir Shamsul Huda did not mean the mere absence of enmity or the exchange of greetings.
নওয়াব শামসুল হুদার মত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন বহুমূখি প্রতিভার অধিকারী তিনি ছিলেন একাধারে একজন পন্ডিত ব্যক্তি, সেই সাথে একজন ভাল বাগ্মী। কবিতা ও আইন দুটি ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখেযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। ১৯৯৬ সালে Lord Rosebery নওয়াব শামসুল হুদার প্রতিভা সম্পর্কে যে উক্তি করেছিলেন পরবর্তীতর তা বাস্তেব প্রতিফলিত হয়েছিল, Lord Rosebery ভাষায়, “Consummate and Considerable as are his Powers of brain, in my opinion his head is not equal to his heart, and it is that rare combination of head heart which in my humble Judgment if my Prophecy be worth anything will conduct him to the highest office of the site.”
তাঁর দেহ বর্ণের তুলনায় মূখবর্ণ অনেকটা কালো ছিল। তাই তিনি সবার নিকট “Black Jewel” বা কালো মানিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা ছিলেন একজন খাটি বাঙ্গালী বা খাটি মুসলমান। পাক ভারত উপমহাদেশে তিনি ছিলেন একজন অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলাম ধর্মের উন্নতির জন্য আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন। ইসলামের পূনর্জাগরনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এ প্রসংগে কলকাতা হাইকোর্টের আইজীবী মিঃ তারেক চক্রবর্তী ১৩ই অক্টাবর ১৯২২ “The Statement” পত্রিকায় লিখেছেন; “ Through out his whole life Sir Syed Shamsul Huda worked for the case of Islam and he had no other aim this word”.
১৪ই অক্টাবর, ১৯২২ তারিখে Progress তাঁর সম্মন্ধে উল্লেখ করা হয়: Nowab Sir Syed Shamsul Huda was a true Muslim and a true Indian throughout his life he was devoted muslims and never dream to adopting European habits of life, the career of late now as furnishes a most useful lessons to the youth of his country.
দেবু সুরেন্দ্র নাথ রয় বলেন-“The late Nawab Shahib was not a sectarian in any sense of the word. He never made any distinction between Hindus and Muhammadans. He was devoid of all class hatred. He was never unreasonable in his demands for the rights and claims of his co-religionists. In fact he was a gentleman in the highest sense of the word.Throughout his whole life Sir Shamsul Huda worked for the cause of Islam and he had no other aim in this world. Even if this statement is somewhat exaggerated, there is no doubt that the progress and development of the Muslims of Bengal was very close to his heart. He worked round the clock to improve the existential condition of his fellow Muslims during his long and distinguished career as a jurist, leader and politician.
(“প্রয়াত নওয়াব সাহেব শাব্দিক অর্থে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে কোনো রকম পার্থক্য করতেন না । তিনি সকল বর্ণ ও শ্রেণীর প্রতি ঘৃণা বিবর্জিত ছিলেন। অধিকার আদায়ের লক্ষে এবং তার সহ-ধর্মবাদীদের জন্য তার দাবী কখনই অযৌক্তিক ছিল না। সার্বিক অর্থে তিনি একজন ভদ্রলোক ছিলেন।পুরো জীবন জুড়ে স্যার শামসুল হুদা ইসলাম‑এর জন্য কাজ করেন এবং এই বিশ্বে তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। বরং, যদি এই বক্তব্য কিছুটা অতিরঞ্জিত করা হয়ে থাকে, তবে কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলার মুসলমানদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি তাঁর হৃদয়ে স্পর্শ করতো। তিনি আইনজ্ঞ, নেতা ও রাজনীতিবিদ হিসেবে তার দীর্ঘ ও প্রসিদ্ধ কর্মজীবনে তার সহকর্মী মুসলমানদের অস্তিত্বের উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করতেন।”)
নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা ছিলেন বঙ্গীয় মুসলমানদের গৌরব স্তম্ভ। প্রতিভা আর চরিত্রের বলেই তিনি ১৯২১ সালে অবিভক্ত বাংলার সংস্কারকৃত লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় মুসলিম প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন। এ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া মানেই হলো তিনি ছিলেন তদানীন্তন উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব।