জীবনবৃত্তান্ত প্রবন্ধ

সৈয়দ গোলাম মোস্তফা হোসাইনী(রহঃ) সুলতানশী হাবেলী

আরেফে ইরফানিয়াত মশহুর পীর সৈয়দ গোলাম মোস্তফা হোসেনী (রহঃ) ছিলেন হবিগঞ্জের ঐতিহাসিক সুলতানশী হাবেলীর সন্তান। মহাকবি সৈয়দ সুলতান থেকে তাঁর বংশক্রম নিম্নরুপঃ সৈয়দ সুলতান> সৈয়দ জিক্রিয়া> সৈয়দ ফাত্তাহ> সৈয়দ নাসির> সৈয়দ আছির> সৈয়দ নাজির> সৈয়দ সাবের> সৈয়দ আব্দুর রহীম> সৈয়দ আব্দুন নুর> সৈয়দ গোলাম মোস্তফা হোসাইনী। তিনি ছিলেন পিতা সৈয়দ আব্দুন নুর হোসেনী(রঃ) উরফে দীনহীন চিশতী সাহেবের সুযোগ্য পুত্র। তাঁর জীবনের অসংখ্য আধ্যাত্নিক ঘটনাবলী লোকমুখে এখনও শুনা যায়। স্বীয় আধ্যাত্নিকতার প্রাবল্যে অসংখ্য ভক্ত‑অনুরাগীকে তিনি মানবিকতার উন্নত স্থরে পৌঁছিয়েছেন।  বহুমুখি প্রতিভার এই সাধকপুরুষ অসংখ্য হামদ‑নাত, মরমী সঙ্গিত, বিশেষ করে মহরমের জারী-মর্সিয়া রচনার মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন। বিশেষ করে তথ্যবহুল সঙ্গিত রচনায় তিনি অতী পারদর্শী ব্যক্তি ছিলেন।

প্রথম জীবনে তিনি তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সিলেট আদালতের সম্মানিত জুরী নিযুক্ত হন। তা ছাড়া একজন বাগ্মি বক্তা হিসাবে তিনি এতই পারদর্শী ছিলেন যে যুক্তি দ্বারা যে কোনও বিষয়ের সমাধান দিতে পারতেন। পড়াশোনার লক্ষ্যে তাঁর ব্যক্তিগত ভাবে সংগ্রহীত কিতাবাদীর পরিমান এতই ছিল যা একটা আদর্শ গ্রন্থাগারে রুপ নিয়েছিল, যা পরবর্তীতে তাঁর সন্তান সৈয়দ হাসান ইমাম হোসেনী(রঃ) সাহেব সারাজীবন পরমযত্নে সংরক্ষণ করেছেন, যা এখনও আছে।

তাঁর রচিত মহরমের জারীর একটি উদাহরনঃ

সা’রবানু মাত্তম করইন শিশু কোলে লইয়া রে- মায়ের ধন আজগর আলী রে।

হায় রে হায়! আমার চাছা নীলমনি রে, পানি পি’তে নাহি দিল রে-

কাল হইল ফুরাতের পানি জাদুয়ার লাগিয়া রে।

হায় রে হায়! দুই আংখী মেলিয়া চাও, কোলে বইসা দুধু খাও রে-

জাদু, তোরে ডাকি মা’য়ে জুয়াব নাহি দেও রে।

হায় রে হায়! চাওনা দেখি নয়ন মেলি, শুনাও চান্দ মুখের বাণী রে-

অভাগী মা’র তাপিত প্রাণ জুরাউক শুনিয়া রে।

হায় রে হায়! না দেখিয়া চান্দ মুখ, বান্ধি কিসে আমার বুক রে-

রইল মায়ের মনের দুঃখ কলিজায় বিন্ধিয়া রে।

হায় রে হায়! কোথায় গেলে তোমায় পাব, কিসে দুঃখ পাশরিব রে-

হাসরেতে কইব দুঃখ নবীজির সাইক্ষ্যাতে রে।

হায় রে হায়! এই দেশেতে নাই রে আপন, কে করিব কাফন দাফন রে-

বেহেশতী কাফন বুঝি দিবা পাক সুবাহানে রে।

হায় রে হায়! আমি তো চির দুঃখিনী, ইমামের ঐ চরণ মাঙ্গি রে-

মুই দাসী নি পাইমু দীদার হাসরের দিনে রে।

বিচ্ছেদের একটি উদাহরনঃ

আপন জাইন্যা প্রাণ সইপাছি পর তো জানিনা রে বন্ধু

আমি কি বলিব চিত্তেরই বেদন, সবই তোমার জানা।

তুমি বিনে এ সংসারে আমার কে আছে মোর আপনা।

তোমার আমার পিরিত করা আছে জগতের ঘোষণা।

জগতবাসী বলছে দোষী মুই তো শুনি না রে বন্ধু।

আমি তোমার তুমি আমার ভেদ বেদান্তে জানা।

সই বলিয়া কোলে তুইল্যা পুড়াও মোর বাসনা রে।

@sat

মতামত দিন