জীবনবৃত্তান্ত

সৈয়দ সাদ উল্লা ওরফে হেলাল মিয়া

সৈয়দ সাদ উল্লা ওরফে হেলাল মিয়া সাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত -(১৯৩৬-২০১৫ খ্রিস্টাব্দ)।


সৈয়দ সাদ উল্লা ওরফে হেলাল মিয়া ১৯৩৬ সালে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহঃ) এর অধঃস্তন পুরুষ,ইসলামি রেনেসাঁর অন্যতম দিশারী মধ্যযুগের খ্যতিমান মহারত্ন মহাকবি সৈয়দ সুলতান (রহঃ) এর বংশের বিখ্যাত সুলতানশী হাবেলীর জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।সৈয়দ হেলাল মিয়ার নামেই তিনি বেশি সুপরিচিত ছিলেন।পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ টেনু মিয়া সাহেব ছিলেন সুলতানশীর প্রখ্যাত জমিদার এবং ব্রিটিস বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক।সেই সময় হতে হবিগঞ্জের জনসাধারণ সৈয়দ টেনু মিয়া সাহেবকে হবিগঞ্জের বাঘ বলে আখ্যায়িত করেন।মহাকবি সৈয়দ সুলতান (রহঃ) থেকে বংশক্রম তার পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ(টেনু মিয়া) সাহেব পর্যন্ত নিম্নরুপঃ সৈয়দ সুলতান (রহঃ)>সৈয়দ জিকরিয়া (রহঃ)>সৈয়দ আহমদ (রহঃ)>সৈয়দ মোহাম্মদ ফাত্তাহ (রহঃ)>সৈয়দ শাহ নাছির (রহঃ)> সৈয়দ শাহ আছির (রহঃ)>সৈয়দ শাহ নাজির (রহঃ)>সৈয়দ শাহ নাতির (রহঃ)> সৈয়দ শাহ ওয়াতির (রহঃ)>সৈয়দ আব্দুস সোবহান (রহঃ)>সৈয়দ মোঃ আব্দুল্লাহ (রহঃ)>সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ(টেনু মিয়া)।

পিতার ন্যায় সৈয়দ সাদ উল্লা ওরফে হেলাল মিয়া ও তেজস্বী ও সমাজসেবক জনদরদী।কিন্তু সৈয়দ মোহাম্মদ হেলাল জমিদারি আভিজাত্য ছেড়ে মেহনতি শ্রমিক ও দিন মজুরদের অধিকার আন্দোলনের সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেন।তিনি ১৯৬৩ সালে হবিগঞ্জ জেলা রিক্সা শ্রমিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদকের দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমৃত্যু ২০১৫ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৫২ বছর নিষ্ঠার সাথে এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। যা ইতিহাসে বিরল।তিনি ছিলেন রিক্সা শ্রমিকদের সুখদুঃখের সাথী।তাদের অধিকার আদায়ে দিনকে করেছেন রাত।

১৯৭৩ সালে তিনি হবিগঞ্জ পৌর নির্বাচনে কমিশনার পদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।কমিশনার থাকাকালীন বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।তিনিই প্রথম হবিগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট গড়ে তোলার দাবী জানান এবং ১৯৮২ সালে নিজ খরচে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে ট্রাফিক পয়েন্ট তৈরী করেন। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বাংলা ভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালে স্কুল হতে প্রথম মিছিল বের হলে সৈয়দ আফরোজ বখত এর নেতৃত্বে উক্ত মিছিলে চৌধুরী আব্দুল হাই,ডাঃ আবুল হাসিম,আঃ কাইয়ুম সহ তিনিও মিছিলের সম্মুখ ভাগে নেতৃত্ব দেন।

সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন বহু শ্রমিক সংগঠনের । এর মধ্যে হবিগঞ্জ বেবিট্যাক্সি শ্রমিক সমিতির সাধারন সম্পাদক। সাধারন সম্পাদক হবিগঞ্জ শহর দোকান কর্মচারী শ্রমিক সমিতি।সাধারন সম্পাদক ভুমিহীন কৃষক শ্রমিক কল্যান পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখা। এছাড়া দুইবার হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী উত্তরন সমাজ কল্যান সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।তিনি প্রায় ২০ বছর হবিগঞ্জের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ রামচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

তিনি ১৯৬৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ দাউদ নগর শেখের বাড়ির ফিরোজ মিয়া শেখের ২য় মেয়ের শেখ বাহার বেগম সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।সাংসারিক জীবনে এক কন্যা ও তিন পুত্র সন্তানের জনক।তাঁর সন্তাগণের নাম যথাক্রমেঃ ১.সৈয়দ মোহাম্মদ বেলাল ২.সৈয়দ মোঃ জালাল ৩.সৈয়দ মোহাম্মদ দিলাল ৪.সৈয়দা সুলতানা।

সৈয়দ মোহাম্মদ হেলাল সাহেবের পুত্রদের মধ্যে ১ম পুত্র সৈয়দ মোহাম্মদ বেলাল ১৯৯৪ সালে হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস,এস,সি এবং ১৯৯৭ সালে বৃন্দাবন সরকারী কলেজ হতে এইচ,এস,সি পাশ করেন।বর্তমানে কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করছেন।সংসার জিবনে তিনি এক ছেলে এক মেয়ের জনক।ছেলে সৈয়দ মোঃ ইশফাক(রাতুল) ২০২০ সালে হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস এস সি পাশ করে ও এক মেয়ে সৈয়দা নুসরাত তাবাসসুম অহনা কিন্ডারগার্টেন এ লেখা পড়া করছে।

সৈয়দ মোহাম্মদ হেলাল সাহেবের ২য় ছেলে সৈয়দ মোঃ জালাল ১৯৯১ সালে হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস,এস,সি এবং ১৯৯৪ সালে বৃন্দাবন সরকারি কলেজ হবিগঞ্জ হতে এইচ,এস,সি পাশ করে বর্তমানে হবিগঞ্জ পৌরসভায় স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। ব্যক্তি জিবনে এক ছেলে সৈয়দ মোঃ ইত্তেহাদ (রাতিন) বর্তমানে কিন্ডারগার্টেনে পড়ছে।

সৈয়দ মোহাম্মদ হেলাল সাহেবের ৩য় ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ দিলাল ১৯৯৩ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস,এস,সি। ১৯৯৬ সালে বৃনদাবন সরকারী কলেজ হবিগঞ্জে হতে এইচ,এস,সি এবং সিলেট এমসি কলেজ হতে বাংলায় সাহিত্যে যথাক্রমে ২০০১সালে অনার্স ও ২০০২ সালে এম,এ পাশ করেন। তিনি কিছুদিন হবিগঞ্জ আজমিরিগঞ্জ পাহাড়পুর আইডিয়াল কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকুরী করেন। পরবর্তিতে ২০০৭ সাল হতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগে সেকশন সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন।তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্মকর্তা কর্মচারী কল্যান ট্রাস্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পদে জয়ী হন। বর্তমানে সৈয়দ মোঃ ইত্তেসাফ (ফারহান)নামক এক পুত্র সন্তানের জনক।

সৈয়দ হেলাল সাহেবের একমাত্র কন্যা সৈয়দা সুলতানা ১৯৯৭ সালে বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস,এস,সি। বৃন্দাবন সরকারী কলেজ হতে ১৯৯৯ সালে এইচ,এস,সি ও ২০০১ সালে বিএ পাশ করেন।সাংসারিক জিবনে তিনি লস্করপুর সৈয়দ বাড়িতে সৈয়দ আম্বিয়া উজ্জামানের পুত্র সৈয়দ আক্রামুজ্জামান নাদিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে বেঞ্চ অফিসার হিসেবে কর্মরত। তাদের এক ছেলে সৈয়দ জাওয়াদ মোহাইমিন আরিয়ান ঢাকা উদয়ন স্কুলে ১ম শ্রেণিতে পড়ছে।

সৈয়দ সাদ উল্লা ওরফে হেলাল মিয়া সাহেব ২০১৫ সালের ২১ জুলাই পুরান মুন্সেফ কোঃ হবিগঞ্জে নিজ বাস ভবনে ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।সুলতানশী হাবেলীর মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে পিতার পাশে ওনাকে দাফন করা হয়।

মতামত দিন