মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মালীহ সাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত (১৮৬৮-১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দ)।
[যিনি ছিলেন নারায়নগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান]
মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মালীহ ১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলা নাসিরনগর থানার ঐতিহ্যবাহী গোকর্ণ নবাব বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ আইনজীবী, তৎকালে কলকাতা থেকে প্রচারিত দুরবীন পত্রিকার সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষিত দুইটি ফার্সী পান্ডুলিপি “ফাওয়াদ‑ই-শামসিয়া” ও “ইসতিলাহাতুল সুয়ারা” প্রনেতা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে।
তিনি সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দীন রহঃএর পঞ্চম অধস্থন পুরুষ সৈয়দ ইসমাঈল (রঃ)এর বংশের একজন সুযোগ্য অধস্থন। সৈয়দ ইসমাঈল (রঃ) থেকে বংশক্রম তার পিতা সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ (রহ:) পর্যন্ত নিম্নরুপঃ-সৈয়দ ইসমাইল (রহ:) [গোকর্ণ আদি]>সৈয়দ শাহজালাল (রহ)>সৈয়দ আহমদ (রহ:)>সৈয়দ আজিম উদ্দিন রহ>সৈয়দ শাহ ওয়াজি উদ্দিন>সৈয়দ আসাদুল্লাহ(রহ:)>সৈয়দ শাহ মহিবুল্লাহ>সৈয়দ শাহ কুদরত উল্লাহ>সৈয়দ শাহ শরাফত উল্লাহ>সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ।
সৈয়দ মালীহ সাহেব শিক্ষাজীবনের শেষার্ধে পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে ধর্মীয় শিক্ষা, আরবী ফারসী ভাষায় বুৎপত্তি লাভ করার জন্য ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করেন এবং যথারীতি মাওলানা হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিছু দিন পর তিনি কলকাতা রয়েল এশিয়াটিক সোয়াটির তৎকালীণ স্যার ডেনিসন রসের অধীনে প্রাচ্য ভাষা বিভাগে রিচার্জ স্কলার হিসেবে যোগদান করেন। এ সময়ে তিনি হিব্রু ভাষা সম্মন্ধেও জ্ঞান অর্জন করেন। প্রাচ্য ভাষা সমূহের উৎকর্ষ সাধনের ইংরেজী ভাষায়ও তাঁর জ্ঞান ছিল প্রগার।
কর্মজীবনে তাঁকে দেখা যায় নারায়নগঞ্জ শহরে খানপুর এলাকায় ৪৯ হেন্ডারসন রোডের প্রাসাদোপম বিরাট বাড়ীতে থেকে নারায়নগঞ্জের কাজী এবং স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।বিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে নারায়নগঞ্জ শহরের সমস্ত কর্মকান্ড দুটি বৃটিশ পাট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডেভিড কোম্পানী ও রেইলী কোম্পানীর সহযোগীতায় গুটি কয়েক শ্বেতকায় মানুষের করতলগত ছিল এবং তারাই ছিল মিউনিসিপ্যালিটির সর্বেসবা।সংগত কারনেই স্বদেশীরা ছিল মিউনিসিপ্যালিটির সেবার আওতা বহির্ভুত এবং সকল সুবিধা ছিল স্বেতকায়দের জন্য।এই অসহনীয় বর্ণবাদী কলোনীয় পদ্ধতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মালীহ (এস,এম মালীহ) স্থানীয় বিখ্যাত উকিল বাবু প্রতাপ চন্দ্রের সহযোগীতায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তুলে সাম্রাজ্যবাদের এই প্রকাশ্য আদিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি নারায়গঞ্জের মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং বাবু প্রতাপ চন্দ্র ভাইস চেয়ারম্যান হন।তাঁরই নেতৃত্বে এক যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে নারায়নগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটিতে কাক ডাকা ভোরের পূর্বে শহরের মল ও ময়লা নিস্কাসন ও অপসারন পদ্ধতি চালু হয় এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মিউনিসিপ্যালিটির সমূহ এই পদ্ধতি অনুসরন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। সে সময় নারায়নগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটির তাঁর অধিনস্থ্য এলাকা সমূহের নাগরিক সুবিধার প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। তখন নারায়নগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটি দেশের অন্যান্য মিউনিসিপ্যালিটির নিকট একটি অনুকরণীয় ও আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। তৎকালের নারায়নগঞ্জ শহরের এস,এম মালী রোডটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়। যা আজো এস,এম মালেহ রোড নামে পরিচিত।
তাঁর প্রথমা স্ত্রী বরিশাল ফরিদপুরের জমিদার চৌধুরী আসমত আলী খার একমাত্র কন্যা ফখরুন্নেছা চৌধুরানী। স্ত্রীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্র প্রাপ্ত জমিদারী দেখাশুনা করার জন্য তিনি বরিশালে চলে যেতে বাধ্য হন। নারায়ণগঞ্জের সহস্র স্মৃতি জড়িত বাড়ীটি তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রেখেছিলেন অবশেষে রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যায় দেশ বিভাগের কিছুদিন আগে বিক্রি করে দেন।
সারাজীবন বই পড়া ও বাগান করার প্রতি তাঁর প্রচন্ড ঝোক ছিল। পোশাকে আশাকে তিনি পুরো ইসলামী তরিকার অনুসারী ছিলেন। সব অনুস্ঠানে এমনকি ঘরোয়া পরিবেশেও লম্বা কুর্তা, কিস্তি টুপি ও পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় দেখা যেত। দোহরা স্বাস্থ্যের লম্বা কালো মানুষটিকে যেন তাতেই মানাতো। জীবনে প্রতিটি খুটিনাটি আচরনেও তাঁর Plain living & high thinking মূল মন্ত্রের প্রকাশ দেখা যেত। প্রতিটি কাজে তিনি ফখর বিহীন, আত্মপ্রচার বিমূখ পারিবারিক প্রান মন্ত্রের অনুসারী ছিলেন। আজীবন কৃচ্ছতা ও সংযমী মনোভাবকে ধরে রেখেছেন। প্রবীন অবস্থায়ও মনটা ছিল তাঁর নবীন। বৈজ্ঞানিক আবিস্কার সম্মন্ধে তাঁর প্রবল উৎসাহ ছিল। রাসায়নিক প্রক্রিয়া চিনি কিভাবে এসিডে রূপান্তরিত হয় সেটা দেখার জন্য তিনি পাকা জাম থেকে সিরকা তৈরী করেছেন বহুবার। নতঁন ধারার প্রবর্তনকে তিনি সব সময় উন্নতির সোপান হিসাবে স্বাগত জানাতেন। বুদ্ধিমত্তা বিকাশমূলক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ সাদানী ও সিলেটের শামসুল উলামা আবু নসর ওয়াহিদকে তিনি প্রিয় সঙ্গী হিসাবে পেতে আগ্রহী থাকতেন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সাথেও তাঁর সখ্যতা ছিল। তৎকালীণ বৃটিশ আমলে শিক্ষা বিভাগে ও বিচার বিভাগের চাকুরী ভদ্র শিক্ষিত সন্তানেরা দুর্নীতির স্পর্শমুক্ত পেশা হিসেবে মনে করতেন।
স্বল্পবাক এই মানুষটি ঐশ্বর্যের বিস্তার বা বংশ মর্যাদার চমক দেখানোকে মনে প্রানে ঘৃনা করতেন। ফলশ্রুতিতে পূর্বপূরুষদের অনেক অর্জন এই বংশের অনেক কৃতিত্ব সম্পূর্ণ অজানাই রয়ে গেল। তাঁর বড় ভাই নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা (কেসিআইই) Bengle executive council এর সদস্য (১৯১২-১৯১৭), কলকাতা হাইকোর্টের পূর্ব বাংলার প্রথম মুসলিম বিচারপতি (১৯১৭-২১) এবং সর্বপোরি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পদেও আসীন হন (১৯২১-১৯২২)। তাঁর ছোট ভাই ব্যারিস্টার সৈয়দ মুহাম্মদ মাসিহ তৎকালে বৃটিশদের জন্য প্রযোজ্য ও সংরক্ষিত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে নিয়োগ পান এবং তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে সিলেটের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে আসীন হন।তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন সরাইলের বিখ্যাত দিওয়ান মুস্তফা আলী এমএলএর ছােট বােন বেগম রশীদুন্নেছা খাতুনকে।
১৯৫৪ সালে জানুয়ারী মাসে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী আজিমপুরের গোরস্থানে সবুজ ঘাসের আস্তরনের নিচে শুয়ে আছেন এই নিরহংকার, বিনয়ী ও আত্মপ্রচার বিমূখ মানুষটি। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩ ছেলে, ২ মেয়ে (এক মেয়ে পূর্বেই বিগত) ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
তাঁর বড় ছেলে সৈয়দ মুহাম্মদ মাহমুদ (ফররুখ মিয়া)- জমিদারী দেখাশুনা সহায়তা ও সমাজসেবী ছিলেন।মেজো ছেলে সৈয়দ মুহাম্মদ মাসউদ (হুমায়ুন মিয়া সাহেব) ‑পাকিস্থান ইনফরমেশন সার্ভিসে সিনিয়র অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানে পাকিস্থানী এম্বেসিতে প্রেস এটাসে (রাষ্ট্রদুত) থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে ডিফেক্ট করেন এবং তিনি প্রথম জাপানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।ছোট ছেলে সৈয়দ মুহাম্মদ মাকছুদ‑কলকাতায় ক্রিসেন্ট ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সুপারইনটেন্ডিং ডাইরেক্টর ছিলেন। পরে ঢাকা ন্যাশনাল গ্রীনলেজ ব্যাংকের ট্রেজারার ছিলেন। বড় মেয়ে সৈয়দা সালেহা খাতুন — প্রথম বিয়ে কলিকাতায় শিক্ষা বিভাগীয় সিনিয়র অফিসার জনাব মােহম্মদ আজম (পাকিস্তানের বিচারপতি মােহাম্মদ আকরাম সাহেবের বড় ভাই)। দ্বিতীয় বিয়ে-বানিয়াচঙ্গের জনাব রাশিদুল হাসান।মেজ মেয়ে সৈয়দা সাঈদা খাতুন- স্বামী বরিশালের বামনার জমিদার জনাব সৈয়দ নাজমুল আহসান। ছােট মেয়ে সৈয়দ ওয়াহিদা খাতুন- স্বামী ফরিদপুরের চীফ ইঞ্জিনিয়ার জনাব কে.এ. হােসেন।
পোস্ট দাতাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সৈয়দ মুহাম্মদ মালীহ সাহেব আমার প্র‑পিতামহ। তাঁর সংক্ষিপ্ত নীতিহাস খানি অত্যন্ত সুন্দর ও সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
মাওলানা সৈয়দ মালীহ সাহেব বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নারায়নগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে নারায়নগঞ্জ শহরের সমস্ত কর্মকান্ড দুটি বৃটিশ পাট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডেভিড কোম্পানী ও রেইলী কোম্পানীর সহযোগীতায় গুটি কয়েক শ্বেতকায় মানুষের করতলগত ছিল এবং তারাই ছিল মিউনিসিপ্যালিটির সর্বেসবা। সংগত কারনেই স্বদেশীরা ছিল মিউনিসিপ্যালিটির সেবার আওতা বহির্ভুত এবং সকল সুবিধা ছিল স্বেতকায়দের জন্য।এই অসহনীয় বর্ণবাদী কলোনীয় পদ্ধতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মালীহ (এস,এম মালীহ) স্থানীয় বিখ্যাত উকিল বাবু প্রতাপ চন্দ্রের সহযোগীতায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তুলে সাম্রাজ্যবাদের এই প্রকাশ্য আদিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি নারায়গঞ্জের মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং বাবু প্রতাপ চন্দ্র ভাইস চেয়ারম্যান হন।
বিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে নারায়নগঞ্জ শহরের সমস্ত কর্মকান্ড দুটি বৃটিশ পাট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডেভিড কোম্পানী ও রেইলী কোম্পানীর সহযোগীতায় গুটি কয়েক শ্বেতকায় মানুষের করতলগত ছিল এবং তারাই ছিল মিউনিসিপ্যালিটির সর্বেসবা। সংগত কারনেই স্বদেশীরা ছিল মিউনিসিপ্যালিটির সেবার আওতা বহির্ভুত এবং সকল সুবিধা ছিল স্বেতকায়দের জন্য।এই অসহনীয় বর্ণবাদী কলোনীয় পদ্ধতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মালীহ (এস,এম মালীহ) স্থানীয় বিখ্যাত উকিল বাবু প্রতাপ চন্দ্রের সহযোগীতায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তুলে সাম্রাজ্যবাদের এই প্রকাশ্য আদিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি নারায়গঞ্জের মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং বাবু প্রতাপ চন্দ্র ভাইস চেয়ারম্যান হন।
Very well written! The points discussed are highly relevant. For further exploration, I recommend visiting: LEARN MORE. Keen to hear everyone’s opinions!
I like this web site very much, Its a rattling nice office to read and obtain information.Money from blog