“আজ কাদে আম্বিয়া আউলিয়া রয়েছে যত
বুক ফাটাইয়া অশ্রু জরাইয়া মজ্জুব পাগলের মত।”
আজ বেদনা-বিধুর ঐতিহাসিক ২১ রমজান।মওলায়ে কায়নাত আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব আলাইহিস সালামের পবিত্র শাহাদাত দিবস। ৪০ হিজরির এই তারিখে সোমবার ৬৩ বছর বয়সে ইরাকের কুফায় মওলা পাক শাহাদাত বরণ করেন। এর আগে ১৯ রমজান কুফার মসজিদের মেহরাবে ফজরের নামায আদায়কালে এক বিষমাখানো তরবারির দিয়ে নরপিশাচ, মুনাফিক, আবদার রহমান ইবনে মুলজাম (তার ওপর আল্লাহর ল্যানত) কর্তৃক মাওলা পাকের মাথার ওপর মারণাঘাত হানা হয়। অনন্তকাল আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক মাওলা আলী আলাইহিস সালামের সকল শত্রুদের উপর।কাবাগৃহে জন্মগ্রহণের সৌভাগ্য অর্জনকারী আলী (আ.) কুফা মসজিদের মেহরাবে যখন অভিশপ্ত ইবনে মুলজিমের বিষাক্ত তরবারী তাঁর কপালে আঘাত হানলো তখন তিনি একটি বাক্যই বলেছেন।( فُزْتُ وَ رَبّ الْکَعْبَة )“কাবার প্রভুর শপথ! আমি সফলকাম হয়েছি- শাহাদাত আমার জন্য সফলতা।” ২১শে রমজানের রাতে শাহাদতের কিছুক্ষণ আগেও তিনি বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! শাহাদত আমার কাছে এমন কিছু নয় যে তার সম্মুখীন হতে আমি অসন্তুষ্ট হব, বরং তা যেন আমার কাছে নিজের হারানো অস্তিত্বকে ফিরে পাবার মত আনন্দদায়ক, কিংবা আমি যেন রাতের অন্ধকারে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি খুঁজছিলাম, আর হঠাৎ তা পেয়ে গেলাম, আল্লাহর কাছে যা আছে সৎকর্মশীলদের জন্য সেটাই তো উত্তম।”
দুনিয়ার বুকে সর্বোচ্চ সম্মানিত যে কাবাঘর, যে ঘরের দিকে মুখ করে সর্বকালের বিশ্ব মুসলিম তাদের স্রস্টার উদ্দেশ্যে নিবেদিত সর্চোচ্চ ইবাদাত সালাতে কিয়াম করে আর শিজদা দেয়- সেই ঘরটাই যার আতুরঘর- তাঁর প্রকৃত মর্যাদা বুঝার ও বর্ননার ক্ষমতা যে আমাদের কারোরই নেই।আর এমনটা যে হতেই পারে, সে ব্যাপারে রাসূল (সা.) নিজেই বলে গেছেন। তিনি বলেছেনঃ “আল্লাহ এবং আমি ছাড়া আর কেউ আলীকে চেনে না।” আবার অন্যত্র বলেছেনঃ “আল্লাহ এবং আলী ছাড়া আর কেউ আমাকে চেনে না।” এ থেকে অনুমিত হয় যে মওলা আলী (আ.) কে মূল্যায়নের ক্ষমতা সবার নেই। আবার রাসূলকে জানার এবং বোঝার ক্ষেত্রে সবচে যোগ্যতম এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি হলেন মওলা আলী (আ.)। তাঁকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেনঃ “তোমরা যদি আদমের জ্ঞান, নূহের ধার্মিকতা, ইব্রাহিমের অনুরক্তি, মূসার সম্ভ্রম এবং ঈসার সেবা ও মিতাচার দেখতে চাও, তাহলে আলীর উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকাও।”
তাঁর বংশধারা রাসূলের অকৃত্রিম আদর্শ গ্রহণ ও তার প্রচার প্রসারের প্রামাণ্য দলীল এবং সর্বজনগ্রাহ্য মাধ্যম। রাসূল যেমনটি আমাদেরকে যাবতীয় বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করতে বলে গিয়েছিলেনঃ- “আমি তোমাদের জন্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি,একটি হলো আল‑কোরআন এবং অপরটি হলো আমার পরিজন বা আহলে বাইত।” ফলে আইলে বাইতের অন্যতম মহান পুরুষ মওলা আলী (আঃ) যে মুসলিম উম্মাহকে বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করতেই পদক্ষেপ নেবেন, তাতে সন্দেহ করার কোনো অবকাশই নেই। আমাদের অদূরদর্শিতার কারণে আমরা হয়তো তাঁর আদর্শ ও কর্মপ্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ভুল করি। তুলনা করে বলা যেতে পারে যে, চাঁদের গায়ে দাগ আছে বলে অনেকে মনে করে, অথচ তার জ্যোৎস্নায় কোনোরকম দাগ নেই, তা যে-কেউই বুঝতে পারেন। আমরা মওলা আলীর (আঃ) কর্মজীবন, আধ্যাত্মিকতা ও আদর্শের নিষ্কলুষ জ্যোৎস্নায় স্নান করে নিজেদের সমগ্র জীবনকে সমৃদ্ধ করে তুলবো- এটাই হোক মওলার শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমাদের যথার্থ প্রত্যাশা।
অনেকেই মনে করেন তাঁর শাহাদতের রাতটি ছিল পবিত্র শবে কদরের(লাইলাতুল কদর)।ইমাম জাফার সাদিক (আঃ) বলেছেনঃ “১৯ রমজানের রাতে ভাগ্য সম্পাদন হয়, ২১ রমজানের রাতে ভাগ্য অবলোকন হয়, ২৩ রমজানের রাতে ভাগ্য নির্ধারণ হয়(যা কদরের রাত)” -সূত্রঃ ওয়াসায়েল উশ শীয়া, খন্ড — ০৭, পৃষ্ঠা ২৫৯ \ নুরুস সাকলাইন, খন্ড — ০৪, পৃষ্ঠা ২২৬, হাদিস নং ৫৮।
মওলার পবিত্র শাহাদাত দিবসে সকল অনুসারীদেরকে জানাই আন্তরিক শোক‑সমবেদনা ও মহান সত্তার শানে পেশ করছি অশেষ দরুদ ও সালাম।
মতামত দিন