আজ হিজরীর শা‘বান মাসের ৩ তারিখ বিশ্বমানবতার মুক্তিকামী মহান পুরুষ, সাইয়্যিদু সাহাবী আহলিল জান্নাহ,সাইয়্যেদুস শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের পবিত্র বেলাদত দিবস উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন,মোবারকবাদ ও তার মহান সত্তার শানে পেশ করছি অশেষ দরুদ ও সালাম।
আস সালাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা ইয়াহুসাইনাবনা আলী, আইয়ুহাশ শাহিদু, ইয়াব্-না রাসূলিল্লাহ, ইয়া হুজ্জাতুল্লাহি আলা খালকিহি, ইয়া সাইয়্যেদানা ওয়া মাওলানা ইন্না তাওয়াজ্জাহনা ওয়া ওয়াস তাশফা’না ওয়া তাওয়াস্ সালনা বিকা ইলাল্লাহি, ওয়া ক্বামনাকা বায়না য়্যাদায় হাজাতেনা। ইয়া ওয়াযিহান ইলাল্লাহি ইশফা’লানা ইন্দাল্লাহি। আসসালামু আলাল হুসাইন,ওয়া আলা আলী ইবনিল হুসাইন,ওয়া আলা আওলাদিন হুসাইন ওয়া আলা আসহাবিল হুসাইন (আ🙂।
শাবান এমন একটা মাস যে মাসে আলে মুহাম্মদের মধ্যে শুধু বেলাদতই হয়েছে,শাবানে কোন শাহাদাত নেই। আর যাদের বেলাদত হয়েছে তাদের সবারই কারবালার সাথে সম্পৃক্ততা আছে। আফসোস যার জন্মের আনন্দে তামাম মাখলুকাত হেসেছিলেন জান্নাতের ফেরেশতারা দলে দলে মা ফাতেমার (সাঃআঃ) ঘরে এসে স্বাগতম জানাচ্ছিলেন — যার জন্য বেহেশত থেকে জান্নাতের পোশাক আনা হতো — যার দোলনা ফেরশতারা দোলাতো সেই মহাপুরুষ জান্নাতের সরদার এর বিলাদত শরীফ আজ অথচ মুসলিম বিশ্বের ৬০% মুসলিমই কোন খুজ নাই ; কষ্ট হয় আমরা মূল থেকে সরে গিয়ে কিসের পিছে দৌড়াচ্ছি।কষ্টে বুকটা ফেটে যায় যখন রাসূল (সাঃ) এর এই পবিত্র আওলাদ বা সন্তান হিসাবে যাদেরকে পরিচয় করিয়ে গেছেন ( মোবাহেলার আয়াতে) সেই রাসূলের আওলাদের সাথে যখন এমন অবিচার করা হয়। মু’মিনের সাথে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আর কিছু নয়- সম্পর্কটা ঈমানের। হ্যাঁ, শুধু ঈমানের। তাহলে খোদ খোদার ভাষায় শুনুন- “ক্বুল লা আসআলুকুম আলাইহি আজরান ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল ক্বোরবা। অর্থাৎ হে নবী! আপনি মুমিনদের বলেদিন, আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, শুধুমাত্র আমার নিকটাত্মীয় (আহলে বায়ত) দের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা(অানুগত্য) ছাড়া।” কিন্ত আমরা মুসলিমরা নামধারী মুসলিমরা তা ও দিতে পারলাম না আনুগত্য ত দূরের থাক — জন্মদিন চলে যায় বাট একটা বার দূরূদ পড়ার সৌভাগ্য ও হয় না অথচ যাদের উপর দূরূদ না পড়লে নামাজ ই হয়না সেই “আলে মোহাম্মাদ’ এরা — যাদের আনুগত্য টা স্বয়ং আল্লাহ তার রাসূল (সাঃ) কে বলে দিয়ে তার উম্মতের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে।আফসোস “তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, যদিও কাফিরেরা তা অপছন্দ করে।”-সূরাঃ ৬১/ আস‑সাফ‑৮।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যেদিন তাঁর এই দৌহিত্রের জন্মের আনন্দ সংবাদ শোনেন সেদিন তিনি তাঁর স্নেহাস্পদ কন্যার বাড়িতে যান এবং নবজাতককে কোলে তুলে নেন। তিনি শিশু হোসাইন কে ডান ও বাম কানে যথাক্রমে আযান ও ইকামত দেন এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক তাঁর নাম রাখেন আল‑হোসাইন। ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এঁর নামটির মাঝেই রয়েছে সুগভীর তাৎপর্য। হোসায়েন حسین শব্দের –হা থেকে হয় حُسن হুসন্ বা সুন্দর ‚সীন থেকে হয় সায়াদাত سعادت বা সৌভাগ্য, সুখ, ইয়া থেকে হয় ইয়াকীন يقين বা বিশ্বাস, নূন থেকে হয় নূর نور আলো বা জ্যোতি।
অর্থাৎ হোসায়েন (আঃ) এমন এক সত্তা, এমন ব্যক্তিত্ব যিনি জাগতিক, মানসিক , আত্মীক সকল প্রকারের সৌন্দর্যের অনুপম প্রতীক।
মদীনাবাসীরা বহুবার দেখেছে, মওলা মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁর দুই দৌহিত্রকে দু’কাঁধে বসিয়ে তাঁদের মন খুশী করার জন্য মদীনার অলিতে-গলিতে হাঁটছেন। অনেকে বহুবার চেষ্টা করেও তাঁদের একজনকেও মহানবীর কাঁধ থেকে নামাতে পারেনি। মওলা মোহাম্মদ (সাঃ) কাউকে তা করার অনুমতি দেননি। কোন কোন সাহাবী এ দৃশ্য দেখে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনকে বলতেনঃ “কতই না উত্তম বাহনের ওপর তোমরা দু’জন চড়েছো!” মহানবীও ঐ সাহাবীদের উদ্দেশে বলতেনঃ “আর এ দু’জনও কতই না উত্তম আরোহী!” আর এভাবে মহানবী তাঁর দুই দৌহিত্রের উচ্চ মর্যাদা,সম্মান ও তাঁদের দু’জনের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসা ও আত্মিক টানের কথা বর্ণনা করতেন।(মানাকিবে খাওয়ারিয্মী,পৃঃ ১১১)
মওলা হুসাইন আলাইহিস সালামের কান্নায় মওলা মুহাম্মদ (সা.) বিচলিত ও ব্যথিত হতেন।মহানবীর ঘর হযরত ফাতেমার (সা.আ.) ঘরের পাশেই ছিল। একদিন মওলা মুহাম্মদ (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে ফাতেমার ঘরের দরজায় আসলেন। মহানবী মওলা হোসাইনের কান্নার শব্দ শুনলেন।এমতাবস্থায় রাসূলের পক্ষে হযরত ফাতেমার ঘর অতিক্রম করা সম্ভব হলো না। তিনি কিছুক্ষণের জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন এবং হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা‘র ঘরের দরজায় জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন। শব্দ শুনে হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা ঘরের ভেতর থেকে বাইরে আসলেন। বাইরে এসেই তিনি মহানবী দেখতে পেলেন। আর ভাবলেন,হয়তোবা মহানবী তাঁকে দেখতে এসেছেন। তাই তিনি পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী মহানবীকে অভ্যর্থনা জানালেন। মহানবী হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার ভক্তিপূর্ণ এ অভ্যর্থনার প্রত্যুত্তরে বললেন,“তুমি কি জানো না,হোসাইনের কান্নায় আমি ব্যথিত হই?”(ফাযায়েলুল খামসাহ্,৩য় খণ্ড,পৃঃ ২৫৬;তাবরানী প্রণীত আল‑মু’জাম আল‑কাবীর গ্রন্থে ইয়াযীদ বিন আবি যিয়াদের সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।)
মহানবী প্রায়ই ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামকে বুকে টেনে নিয়ে বলতেন,“সন্তান সুগন্ধি ফুলের মত;হাসান ও হোসাইন আমার দু’টি সুগন্ধি ফুল। তাই এ দু’জনের সুঘ্রাণ গ্রহণ করি।”
আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ “একদিন মহানবীর কাছে গেলাম। হাসান ও হোসাইন তাঁর বগলের নীচে ছিল এবং খেলা করছিল। মহানবীকে বললাম,“আপনি কি এ দু’জনকে ভালবাসেন?” তিনি বললেন,“কিভাবে এ দু’জনকে না ভালবেসে থাকতে পারি আর এরাই তো এ পৃথিবীর বুকে আমার সুগন্ধি ফুল! আর আমি এ দু’জনের সুঘ্রাণ নিয়ে থাকি।”(উসদুল গাবাহ্,২য় খণ্ড,পৃঃ ১৮।)
মহানবী (সা.) অনেক সময়ই বলতেনঃ ‘হাসান ও হোসাইন আমার সন্তান।’ এ কারণে হযরত আলী তাঁর অন্য সন্তানদের কাছে বলতেন : ‘তোমরা আমার সন্তান আর হাসান ও হোসাইন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তান।’ মহানবী (সা.) হযরত হাসান (আ.) ও হযরত হোসাইন (আ.) সম্পর্কে আরো বলেছেন, দণ্ডায়মান থাক আর উপবিষ্ট থাক আমার এই দুই সন্তান হচ্ছে ইমাম।’
হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন সম্মান, দয়া, বীরত্ব, শাহাদত, মুক্তি ও মহানুভবতার আদর্শ। তাঁর আদর্শ মানবজাতির জন্য এমন এক ঝর্ণাধারা বা বৃষ্টির মত যা তাদের দেয় মহত্ত্বম জীবন, গতি ও আনন্দ। মানুষের জীবনের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রকৃত মৃত্যুর সংজ্ঞাকে কেবল কথা নয় বাস্তবতার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে অমরত্ব দান করে গেছেন এই মহাপুরুষ। বিশেষ করে আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও শাহাদাতকে তিনি দিয়ে গেছেন অসীম সৌন্দর্য।
কারবালার মহাবিপ্লবের রূপকার ইমাম হোসাইন (আ.) মানবজাতির ওপর ও বিশেষ করে প্রকৃত মুমিন মুসলমানদের ওপর যে গভীর প্রভাব রাখবেন সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন স্বয়ং মওলা মোহাম্মদ (সা.)। তিনি বলেছেনঃ ” নিশ্চয়ই প্রত্যেক মু‘মিনের হৃদয়ে হোসাইনের শাহাদতের ব্যাপারে এমন ভালবাসা আছে যে, তার উত্তাপ কখনো প্রশমিত হয় না। ” (মুস্তাদরাক আল-ওয়াসাইল, খণ্ড‑১০, পৃষ্ঠা-৩১৮)
শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আঃ) এমন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব যে কোনো নির্দিষ্ট স্থান, কাল ও পাত্রের সাধ্য নেই তাঁকে ধারণ করার। তাই তাঁর প্রতি বিশ্ববাসীর ভালবাসা ক্রমেই বাড়ছে। আবারও পবিত্র ৩ রা সাবান হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)‘র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা মুবারকবাদ। এবং এই মহামানব, তাঁর পবিত্র বংশধর ও কারবালায় শহীদ তাঁর ৭২ সঙ্গীর প্রতি জানাচ্ছি অশেষ সালাম ও দরুদ।
হে আল্লাহ জান্নাতের সর্দার সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের প্রেমে আমাদের মশগুল করে দিন।লাব্বাইক ইয়া সাইয়্যাদুশ শোহাদা, লাব্বাইক ইয়া ইমামুল কায়িনাত, লাব্বাইক ইয়া আকা ইয়া ইমাম হোসাইন আঃ।
—সৈয়দ হোসাইন উল হক
Excellent content! The way you explained the topic is impressive. For a deeper dive, check out this resource: EXPLORE FURTHER. What do you all think?
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.