আজ ১৫ রমজান, রাসূলে পাক ( ﷺ) যাদেরকে জান্নাতের সরদার বলে ঘোষনা দিয়েছেন সেই জান্নাতের সরদার, পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য,দ্বিতীয় ইমাম, ইমাম হাসান ইবনে আলী আল‑মুজতাবা আলাইহিস সালামের বিলাদত শরীফ। তৃতীয় হিজরির এই দিনে তিনি মদীনায় মওলার আবির্ভাব হয়।যাদের আবির্ভাবের (জন্মের) আনন্দে তামাম মাখলুকাত হেসেছিলেন জান্নাতের ফেরেশতারা দলে দলে মা ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা ঘরে এসে স্বাগতম জানাচ্ছিলেন — যাদের জন্য বেহেশত থেকে জান্নাতের পোশাক আনা হতো — যাদের দোলনা ফেরশতারা দোলাতো সেই মহাপুরুষ জান্নাতের সরদার এর জন্মবার্ষিকী আজ অথচ মুসলিম বিশ্বের ৬০% মুসলিমই কোন খুজ নাই,কষ্ট হয় আমরা মূল থেকে সরে গিয়ে কিসের পিছে দৌড়াচ্ছি।কারবালা ট্রাজেডির কারনে মওলা হুসাইন আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে কিছুটা জানে,তবে ইমাম হাসান ইবনে আলী আল‑মুজতাবা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন উম্মতে মুহাম্মদী। অথচ তাঁরা উভয়ে জান্নাতের সরদার আহলে বাইতের অন্তর্গত। যাদের শানে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে প্রায় ৮০০ আয়াত ও তাঁদের শানে অগণিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
মওলার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা মুবারকবাদ ও মহান সত্তার শানে পেশ করছি অশেষ দরুদ ও সালাম ।
কষ্টে বুকটা ফেটে যায় যখন রাসূল (ﷺ) এর এই পবিত্র অাওলাদ বা সন্তান হিসাবে যাদেরকে পরিচয় করিয়ে গেছেন (মোবাহেলার অায়াতে) সেই রাসূলের আওলাদ এর সাথে যখন এমন অবিচার করা হয় যে রাসূল (ﷺ) এর পাশে, নানার পাশে কবর টা পর্যন্ত যারা দিতে দিলো না।মু’মিনের সাথে হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী আল‑মুজতাবা আলাইহিস সালামের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আর কিছু নয়- সম্পর্কটা ঈমানের। হ্যাঁ, শুধু ঈমানের। তাহলে খোদ খোদার ভাষায় শুনুন- “ক্বুল লা আসআলুকুম আলাইহি আজরান ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল ক্বোরবা। অর্থাৎ হে নবী! বলুন, আমি আমার রিসালাতের পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, শুধু আমার আহলে বাইত এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) ব্যতিত”।(সুরায়ে শুরা, আয়াতে মুওয়াদ্দাত,আয়াত নং- ২৩) মহানবী (ﷺ) যে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন, আল্লাহ তার বান্দার কাছ থেকে তাঁর রেসালাতের পারিশ্রমিক বাবদ মহানবী (ﷺ) ‑এর আহলে বাইত-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) ফরয করে দিয়েছেন।তাই রাসূল (ﷺ) বার বার বলে গেছেন তার এই গোটা জীবনের দাওয়াতি কাজ — হেদায়াতের পথ দেখানোর কাজের বিনিময়ে কিছুই চান নি শুধুমাত্র তার পরিবার তার অাহল তার রক্তের সাথে ভালো ব্যবহার তাদের আনুগত্য ছাড়া।কিন্ত আমরা মুসলিমরা নামধারী মুসলিম রা তা ও দিতে পারলাম আনুগত্য ত দূরের থাক — বিলাদত শরীফ চলে যায় বাট একটা বার দূরূদ পড়ার সৌভাগ্য ও হয় না অথচ যাদের উপর দূরূদ না পড়লে নামাজ ই হয়না। যদি আমরা আহলে বাইতকে প্রাণাধিক ভালো না বাসি , আনুগত্য না করি , তাহলে আল্লাহর হুকুম অকার্যকর থেকে যাবে বা মানা হবে না, প্রিয় পাঠক পারিশ্রমিক ছাড়া আমল কবুল হবে কি? আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই দেশে কতইনা পীর‑ফকিরের উরুস পালন করা হয় অথচ সাইয়্যিদু সাহাবী আহলিল জান্নাহ,অর্থাৎ জান্নাতের যাঁরা বণ্টনকারী ও মালিক, যাঁদের সুপারিশ ছাড়া জান্নাতে যাবার উপায় নেই, যাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা গেলে তার ঠিকানা সোজা জাহান্নাম, যাঁদেরকে নুহ আলাইহিস সালামের কিস্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে, যাতে আরোহণ না করলে, যাঁদের অনুসরণ না করলে ধ্বংস নিশ্চিত, তাদের সম্পর্কের মুসলিম সমাজ আজ একেবারেই উদাসীন।
ইমাম হাসান ইবনে আলী আল‑মুজতাবা (আ.)-এর মূল নাম ছিল আল‑হাসান এবং আল‑মুজতবা ছিল তাঁর উপাধি। তাঁর একটি ডাক নাম ছিল আবু মুহাম্মাদ। আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) ছিলেন তাঁর পিতা এবং মহানবী (ﷺ)-এর কন্যা হযরত ফাতেমা (আ.) ছিলেন তাঁর মাতা। ইমাম হাসান ছিলেন তাঁদের জ্যেষ্ঠ পুত্র। হযরত হাসান ছিলেন মহানবী (ﷺ)-এর দৌহিত্র। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) যেদিন তাঁর এই দৌহিত্রের জন্মের আনন্দ সংবাদ শোনেন সেদিন তিনি তাঁর স্নেহাস্পদ কন্যার বাড়িতে যান এবং নবজাতককে কোলে তুলে নেন। তিনি শিশু হাসানের ডান ও বাম কানে যথাক্রমে আযান ও ইকামত দেন এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক তাঁর নাম রাখেন আল‑হাসান। ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-এর শৈশব জীবনের প্রথম সাত বছর অতিবাহিত হয় মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দয়ার্দ্র পৃষ্ঠপোষকতায়। তিনি তাঁর সকল মহান গুণের শিক্ষা দান করে এবং খোদায়ী জ্ঞান, ধৈর্য, সহনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, দানশীলতা ও সাহসিকতার প্রশিক্ষণ দিয়ে ইমাম হাসান (আ.)-কে সমৃদ্ধ করে তোলেন। জন্মগতভাবে মাসুম এবং আল্লাহ কর্তৃক স্বর্গীয় জ্ঞানে সজ্জিত হওয়ায় তাঁর অন্তরাত্মা লওহে মাহফুজে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
আল্লাহতাআলার পক্ষ থেকে যখনই কোনো অহী নাজিল হতো এবং মহানবী (ﷺ) তাঁর সঙ্গী-সাথিদের কাছে তা পকাশ করতেন ইমাম হাসান ইবনে আলী আল‑মুজতাবা (আ.) তৎক্ষণাত তা অবগত হতেন। মহানবী (ﷺ) প্রায়শঃই বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করতেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে হযরত ফাতেমা (আ.)-কে বলার আগেই তিনি নতুন নাযিলকৃত অহীর আয়াতসমূহ হুবহু তেলাওয়াত করছেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে হযরত ফাতেমা মহানবী (সা. আ.)-কে জানান যে, ঐ আয়াতগুলো তিনি ইমাম হাসানের কাছ থেকে শিখেছেন।
ইমাম হাসান আল‑মুজতাবা এত অধিক নিষ্ঠার সাথে নামায আদায় করতেন যে, সেজদাকালে তাঁর সমস্ত অঙ্গ‑প্রত্যঙ্গই যেন আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে যেত। তাঁর জীবনের অধিকাংশ রাত অতিবাহিত হয়েছে জায়নামাযের ওপর। নামাযের মধ্যে এত বেশি বিনীত ও আত্মনিবেদিত ভাব সৃষ্টি হতো যে, খোদার ভয়ে তাঁর চোখে অঝোর ধারায় পানি এসে যেত। ওজুর সময় থেকেই খোদার ভয়ে ইমাম হাসানের শরীরে কম্পন সৃষ্টি হতো এবং নামাযের সময় তাঁর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যেত। নামাযের মধ্যে তিনি এত ধ্যানমগ্ন ও খোদার সাথে একাত্ম হয়ে যেতেন যে, আশপাশের অবস্থা সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি যেন অবচেতন হয়ে যেতেন।ইমাম হাসান (আঃ) পদব্রজে আবার কখনো নগ্ন পদে পঁচিশ বার আল্লাহর ঘর যিয়ারত করেন।
ইমাম হাসান (আঃ) এঁর ক্ষমাশীলতা,পরোপোকারিতা, ধৈর্য ও সহনশীলতা শত্রুদেরও মুগ্ধ করত।তিনি ছিলেন ধৈর্যের পাহাড়। মসজিদে নববীতে যখন উমাইয়্যারা মিম্বরে দাঁড়িয়ে পিতা মওলা আলী আলাইহিস সালামকে গালি ও লানত দিতো, ছোটো ভাই ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং পরিবারের অন্যেরা যখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলতেন, ইমাম হাসান তখনো তাঁদের সবাইকে নানাজানের কথা বলে শান্ত রাখতেন। বিলাসী জীবনযাপনের মতো পর্যাপ্ত বিষয়-সম্পত্তি ইমাম হাসান (আ.)-এর ছিল, কিন্তু তিনি তার সবটাই দরিদ্রদের কল্যাণে ব্যয় করেছেন।বড় ইমাম পাক হযরত ইমাম হাসান (আঃ) জীবনে অন্ততঃ দুবার তাঁর ব্যক্তিগত সব সম্পদ দান করে দিয়েছেন এবং বেশ কয়েকবার অর্ধেক বা তারও বেশি সম্পদ দান করে দিয়েছিলেন।তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌজন্যবোধ সম্পন্ন ও নিরহংকার মানুষ। রাস্তার ভিক্ষুকদের পাশে বসতে তাঁর কোনো দ্বিধা ছিল না। ধর্মীয় বিষয়াদিতে জিজ্ঞাসার জবাব দিতে তিনি মদীনার পথেও বসে যেতেন। তিনি অত্যন্ত সম্প্রীতিবোধসম্পন্ন ও অতিথিপরায়ণ ছিলেন এবং কোনো দরিদ্র ও নিঃস্ব লোক তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি তাদেরকে কখনই খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি।
মহানবী (ﷺ)-এর ইন্তেকালের পর এক ঘটনাবহুল যুগের সূচনা হয়। এমনি ধরনের এক পরিবের্তনের পর্যায়ে ইমাম আল‑হাসান আল‑মুজতাবা (আ.) তাঁর মহান পিতা ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে মিলিত হয়ে ইসলামের শান্তির বাণী ও মহানবী (ﷺ)-এর শিক্ষা প্রচারের পবিত্র মিশন অব্যাহত রাখেন।তিনি জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফিন যুদ্ধে পিতার পক্ষে অংশ নিয়েছিলেন এবং অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। জঙ্গে জামাল যুদ্ধের আগুন নেভানোর জন্য তিনি পিতার নির্দেশে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে কুফায় গিয়ে সেখানকার জনগণকে পিতার পক্ষে সংঘবদ্ধ করেন।অতঃপর জনগণকে সাথে নিয়ে ইমাম আলী (আঃ)-কে সাহায্য করার জন্য বসরায় প্রত্যাবর্তন করেন।তিনি তাঁর সুদৃঢ় ও প্রাঞ্চল বক্তৃতা দ্বারা আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের মিথ্যাবুলির দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেন, কেননা সে ওসমান হত্যার সাথে হযরত আলী (আঃ) জড়িত বলে প্রচার করতো।পরিশেষে বিজয়ী বেশে কুফায় প্রত্যাবর্তন করেন।
আমিরুল মু‘মিনিন হযরত মওলা আলী (আঃ) নিজের ইন্তিকালের সময় হযরত ইমাম হাসান (আঃ) কে তার খেলাফতের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন।তিনি ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর অন্যান্য সন্তানদের এবং তার উচ্চপদস্থ অনুসারীদের এ বিষয়ে সাক্ষী রাখেন।২১ রমজান ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর ইমাম হাসান (আ.) ইমামতি লাভ করেন খোদায়ী নির্দেশ মোতাবেক এবং তাঁর পিতার অসিয়ত অনুসারে। তিনি ইমাম ছিলেন এবং একই সাথে ছয় মাসের জন্য খলিফা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। মুসলমানদের অধিকাংশই তাঁর কাছে আনুগত্যের অঙ্গীকার ঘোষণা করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাইয়াত গ্রহণ করে। নেতৃত্ব গ্রহণের সাথে সাথে ইমাম আল‑হাসান আল‑মুজতাবা (আ.)-কে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী সিরিয়ার গভর্নর আমীরে মুআবিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।কোরাইশগণ যে অজুহাতে আলীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো, সেই একই অজুহাতে মুয়াবিয়া ইমাম হাসান (আঃ)-এর নিকট আনুগত্য প্রকাশ্যে অস্বীকার করলো।মওলা-এ‑কায়েনাত আলী (আঃ) এঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্রের যে ধারা মুয়াবিয়া সূচিত করেছিল এই নতুন ইমাম পাকের বিরুদ্ধেও সেই একই ধারা অব্যাহত রাখে। ইমাম হাসান (আঃ) মুয়াবিয়ার কাছে এক দীর্ঘ চিঠি লিখেন তাকে সুপথে আনার চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু মুয়াবিয়া চিঠির উত্তরে নিজেকে বেশি অভিজ্ঞ বলে দাবি করে। অবশ্য সে প্রলোভন দেখানোর জন্য বলে যে, বড় ইমাম হাসান (আঃ) তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নিলে পরবর্তী খলিফা ইমামকেই করা হবে। অবশ্য, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা মোতাবেক মুসলমানদের একটি ব্যাপক হত্যাকাণ্ড এড়ানোর জন্য দামেশকের অবাধ্য গভর্নর মু‘আবিয়ার উপর্যুপরি ষড়যন্ত্র ও স্বীয় সঙ্গীবৃন্দের সীমাহীন বিশ্বাসঘাতকতা ও অসহযোগিতার ফলে তিনি মুআবিয়ার সাথে একটি শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ হন । তবে এভাবে তিনি ইসলামকে রক্ষা করেন ও গৃহযুদ্ধ বন্ধ করেন। তাই বলে এই শান্তি চুক্তির অর্থ কখনই মুআবিয়ার স্থায়ী নেতৃত্ব মেনে নেয়া বুঝায় না। এটি ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রশাসন হস্তান্তরের একটি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা এবং তাও এই শর্তে যে,-
শর্তগুলো হলোঃ
১. আহলে বাইতের অনুসারীদের রক্ত সম্মানীত ও হেফাজত থাকবে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করা যাবে না।
২. ইমাম আলী’কে গালি-গালাজ দেয়া যাবে না।
৩. মুয়াবিয়া রাষ্ট্রের আয় থেকে এক মিলিয়ন দেরহাম সিফফিন ও জামালের যুদ্ধের ইয়াতিমদের মধ্যে বণ্টন করবে।
৪. ইমাম হাসান মুয়াবিয়াকে আমিরুল মুমিনীন বলে আহবান করবেন না।
৫. মুয়াবিয়াকে অবশ্যই আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত মোতাবেক আমল করতে হবে।
৬. মুয়াবিয়া তার মৃত্যুর পরে খেলাফতের ভার অন্যকারো উপর সোপর্দ করে যাবে না।
ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মোতাবেক এ ঘটনা তাঁর ইমামত লাভের ছয় মাসের কিছু বেশি সময়ের মাথায় সংঘটিত হয়।এই সিদ্ধান্ত মুসলমানদের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন করলেও এর ফলে আহলে বাইতের উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্দশা। মসজিদের মিম্বরে মিম্বরে তাঁদেরকে গালি ও লানত দেবার ঘৃণ্য রীতি চালু করে উমাইয়্যারা। ইমাম আল‑হাসান আল‑মুজতাবা (আ.) প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন, তবে ধর্মীয় নেতৃত্ব নিজের কাছেই সংরক্ষণ করেন এবং মদীনায় ইসলাম ও মহানবী (ﷺ)-এর শিক্ষা প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। আহলে বাইতের অনুসারীদের মতানুসারে ইমাম হচ্ছেন একজন খোদায়ী নেতৃত্ব এবং পয়গম্বরদের নেতৃত্বের অনুরূপ। তার কারণ হচ্ছে যে, ইমাম বিশ্বের সূচনা শক্তি তথা মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে সম্পর্কিত। তাই এর উপর ভিত্তি করে তিনি সমাজের স্বার্থ নির্ণয় করে থাকেন। আর তাঁর সিদ্ধান্ত কখনও অবাস্তব হয় না। অনেক সময় এ রকম হয়েছে যে, পয়গম্বর অথবা ইমাম কোন একটা কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন এবং জনগণ তখন সে কাজের মঙ্গলজনক দিক এর সাথে পরিচিতি ছিল না। কিন্তু কাল পরিক্রমায় জনগণ সে কাজের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ “হুদায়বিয়ার সন্ধি” নবী করিম (ﷺ) এই চুক্তি পত্রের ধারাসমূহের সাথে একমত প্রকাশ করেন। কিন্তু মুসলমানরা শেষোক্ত ধারার ব্যাপারে সাংঘাতিক অসন্তুষ্টি ছিলেন। তারা সন্ধি চুক্তি মেনে নিতে চাচ্ছিলেন না।আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি হযরত ওমর বিরোধীতা করেছিলো।তখন রাসূল (ﷺ) বলেছিলেনঃ “আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। আমি কখনও তাঁর নির্দেশের বিরোধীতা করিনা এবং তিনি আমার কোনো ক্ষতি করেন না”। আর তাই হয়েছিলো।এ কারণে যখন আহলে বাইতের অনুসারীদের মধ্যে কেউ ইমামের হাসান কাজে আপত্তি করেন- যেমন করে কিছু মুসলমানরা স্বয়ং নবী করিম (ﷺ)-এর কাজে আপত্তি করেছিলেন।তখন ইমাম হাসান (আঃ) বলেছিলেনঃ “ইমামের কাজে হস্তক্ষেপ করতে নেই এবং নিজের ইমামের আনুগত্য স্বীকার, করে নিতে হয়। কেননা তিনি আল্লাহর নির্দেশে এবং প্রকৃত মংগল বিবেচনায় কাজ কর্ম সম্পাদন করে থাকেন। যদিও অন্যরা সে কাজের মূল কারণ ও রহস্য সম্পর্কে অবহিত নয়।যদি আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে থাকি, তা হলে আমার মতকে খাটো করে দেখার কোনো-ই অর্থ হয় না, যদিও এর মঙ্গল তোমার কাছে ঢাকা থাকে। আমার এবং তোমার উদাহরণ হযরত খিজির (আঃ) ও হযরত মুসা (আঃ)-এর মতো। হযরত খিজির (আঃ) এমন সব কাজ করতেন যার আমল দিক হযরত মুসা (আঃ) অবগত ছিলেন না। তাই তিনি রাগান্বিত হয়ে যেতেন। কিন্তু যখন হযরত খিজির (আঃ) তাকে অবহিত করলেন, তখন তিনি শান্ত হলেন। আমিও তোমাকে রাগান্বিত করেছি। তার কারণ এই যে, তুমি আমার কাজের মঙ্গলজনক দিক সম্পর্কে অবহিত নও তবে তুমি এতটুকু জেনে রাখো যে, যদি আমি মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি না করতাম তাহলে পৃথিবীর বুকে আহলে বাইতের কোনো অনুসারীই টিকে থাকতো না।”
মানবীয় পরিশুদ্ধতার দিক থেকে ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন তাঁর মহান মাতামহের এক খাঁটি দৃষ্টান্ত ও পিতার এক স্মারকচিহ্ন।মহানবী (ﷺ) অনেক সময়ই বলতেনঃ ‘হাসান ও হোসাইন আমার সন্তান।দুনিয়ায় জান্নাতের দুটি পুষ্প।’ এ কারণে মওলা আলী আলাইহিস সালাম তাঁর অন্য সন্তানদের কাছে বলতেনঃ ‘তোমরা আমার সন্তান আর হাসান ও হোসাইন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সন্তান।’ মহানবী (ﷺ) হযরত হাসান (আ.) ও হযরত হোসাইন (আ.) সম্পর্কে আরো বলেছেনঃ ‘দণ্ডায়মান থাক আর উপবিষ্ট থাক আমার এই দুই সন্তান হচ্ছে ইমাম।’ মওলা হাসান ইবনে আলী আল‑মুজতাবা আলাইহিস সালাম ছিলেন মাথা মুবারক থেকে কোমর পর্যন্ত মওলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সদৃশ। আর মওলা ইমাম হুসাইনআলাইহিস সালাম ছিলেন কোমর থেকে পা পর্যন্তমওলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সদৃশ। তাই তাঁরা উভয়ে যেন স্বয়ং রাসূলের মূর্ত প্রতিচ্ছবি ছিলেন।
ইমাম হাসান (আঃ)-এর যিয়ারতের নামাযের নিয়মঃ মোট দু’রাকাত নামায। প্রত্যেক রাকাতে সূরা হামদ পাঠের পর ২৫ বার সূরা তাওহীদ ((কুলহু আল্লাহ্) পাঠ করতে হয়। অতঃপর নামাযের সালাম ফিরিয়ে হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর তাসবীহ পাঠ করতে হয়। অতঃপর যদি যিয়ারতকারী ইমামকে উসিলা করে আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে তাহলে ইনশা আল্লাহ তা পূরণ হবে।
ইমাম হাসান ইবনে আলী আল‑মুজতাবা আলাইহিস সালামের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে আরো একবার সবাইকে মুবারকবাদ সাথে সাথে মহান ইমাম পাকের শানে পেশ করছি অশেষ দরুদ ও সালাম ।
আস সালাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা ইয়া আবা মুহম্মাদিন,ইয়া হাসানাবনা আলীয়ীন আইয়ুহাল মুজতাবা, ইয়াব্-না রাসূলিল্লাহ,ইয়া হুজ্জাতুল্লাহি আলা খালক্বেহি, ইয়া সাইয়্যেদানা ওয়া মাওলানা ইন্না তাওয়াজ্জাহনা ওয়া ওয়াস তাশফা’না ওয়া তাওয়াস্ সালনা বিকা ইলাল্লাহি, ওয়া ক্বাদ্দামনাকা বায়না য়্যাদায় হাজাতেনা। ইয়া ওয়াযিহান ইলাল্লাহি ইশফাʼলানা ইন্দাল্লাহি।আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাাদ ওয়া আলে মুহাম্মাাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম।
তথ্যসূত্রঃ বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ২,৪,২০,৪৩,৪৪ নতুন মুদ্রণ/তারিখে ইয়াকুবী, খণ্ড ২/তারিখ আল খুলাফা/ ইরশাদুল মুফিদ/দালাইলুন ইমামাহ ; মুহাম্মাদ বিন জারীর আত তাবারী।/তাবাকাত আল কাবির, খণ্ড ৩, প্রথম পর্ব, পৃঃ ২০।/ হায়াতুল ইমাম আল হাসান বিন আলী, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৯৬-৩৯৯।/ উসুলে কাফি, খণ্ড ১,/নাহাজুল বালাগা : ইবনে আবিল হাদিদ, খণ্ড ১৬, পৃঃ ৩৭-৪০।/আল কামেল; ইবনে আসির, খণ্ড ৩, পৃঃ ২০৮।/সিরাতু ইবনে হিশাম, খণ্ড ৪,/মুরুয় আয় যাহাব, খণ্ড ২,/ দালাইলুল ইমামাই, পৃঃ ৬০। তাবাকাতে ইবনে সাদ, খণ্ড ৫, পৃঃ ২৪।
Fantastic article! Your perspective on this topic is truly insightful. For those looking to explore this further, I found an excellent resource that complements your points: READ MORE. I’m eager to hear what others think about this!
These Ingredients Additionally Assist Your Body To Remain In The Ketosis Metabolic State For Longer Durations Of Time With The Energetic Elements Of This Keto Bhb Tablets, You Will Be Feeling Energised And Slicing Off Extra Fats At The Identical Time There Are Dozens Of Buyer Reviews waist trainers to lose weight Online For The Keto Tablets By Shark Tank, With The Overwhelming Majority Of Them Being Positive The Raised Metabolic Rate, Or Ketosis, Prone You In Course Of Fast Extra Fat Shedding By Utilising It As The Primary Supply Of Atp For The Mind And Different Tissues Organs precio priligy 30 mg
I rattling thankful to find this site on bing, just what I was looking for : D also saved to favorites.