শ্রীহট্টে বাঙ্গালী মুসলমানদের ইতিহাস চর্চ্চার অগ্রদূত সৈয়দ আবদুল আগফর রচিত“তরফের ইতিহাস“গ্রন্থে রামশ্রীর প্রসঙ্গ।
ইতিহাস হচ্ছে একটা চলমান বিষয়ের খুঁটিনাটি বর্ণনা।এই শাস্ত্র হল মানব জাতির জীবনের দর্পণ ও কার্যকলাপের লিখিত বিবরণ।এই দর্পনের মাধ্যমেই জাতি তাঁর স্বরুপ চিনতে পারে এবং সে মতে নিজেকে পরিচালনা করে।কোন জাতির ইতিহাস গড়ে উঠে এর সমৃদ্ধ আঞ্চলিক ইতিহাসের উপর ভর করে। আমাদের বাঙ্গালী মুসলমানদের আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হল বিভিন্ন সময়ের আঞ্চলিক ইতিহাস।
এ উপমহাদেশে মুসলমানরা বহিরাগত।৭১২ সনে উমাইয়া খলিফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে তরুন আরব বীর মুহাম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে এখানে ইসলামের পদার্পণ ঘটে।পরবর্তী সময়ে ১২২৮ সনে তুর্কী সেনানায়ক বখতিয়ার খলজির বঙ্গবিজয়ের মাধ্যমে এখানে ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের বসতি স্থাপনের পথ প্রসারিত হয়।
এখানে বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস,ধর্ম ও সংস্কৃতি অবশ্যই ছিল।মুসলিম বিজয়ের কারনে এখানে ইসলাম ধর্ম,ভাষার প্রচলন হয়।এ ভাষা ছিল আরবি ও ফার্সি।৭১২সন হতে ১৭৫৭ সনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।এই সময়ে যে মুসলমানরা ইতিহাস লিখেন নি তা নয়!তবে ওই ইতিহাস ছিল শাসকদের ও অবধারিত ভাবেই ফার্সি ভাষায়।
সুলতানী আমলের ইতিহাস হল(১)তাবাকাত‑ই-নাসিরী ও (২)তারিখ‑ই-ফিরোজশাহী।লিখেছেন যথাক্রমে আবু ওমর মিনহাজউদ্দিন ওসমান বিন সিরাজুদ্দীন যুলযানী ও শামসুদ্দিন সিরাজ আকিফ।মোগল আমলের ইতিহাস হল আল্লামা আবুল ফজল কৃত “আকবর‑নামা” ও “আইন-ই- আকবরী”।ভঙ্গুর মোগল আমলের শেষ দিকে আসে নবাবত ব্যবস্থা।মুর্শীদাবাদ কেন্দ্রিক নবাবী আমলের ইতিহাস বিধৃত আছে ইউসুফ আলী খানের “তওয়ারিখে বাংলাহ“ও গোলাম হোসেন সলিমের“রিয়াজুস সালাতিন“গ্রন্থে।এসবই গ্রন্থিত হয়েছে ফার্সি ভাষায়। |
১৭৫৭ সনে পলাশীর যুদ্ধ মুসলমানদের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।১৭৬৫সনে কোম্পানির “দিওয়ানী” লাভ এবং ১৭৯৩সনে “দ্বৈত শাসন” অর্জন এদেশে মুসলমানদের কফিনে শেষ পেরেকঠোকা হয়ে যায়।ঘোর অমনিশায় ডুবে যায় মুসলিম প্রধান্য। ১৭৫৭সন হতে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব পর্যন্ত এক শতাব্দী ছিল মুসলিম শক্তি হীনবল করার সময়।এই সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কৌশলে প্রশাসন ও বিচার বিভাগ হতে মুসলমানদের সরিয়ে দিতে শুরু করে।ফলে আমরা দেখতে পাই এমন একটি বন্ধ্যা সময়, যে সময়ের কোন ইতিহাস কেউ লিখতে পারেন নি।এ বড় দুঃসময়!
১৭৫৭ সন হতে ১৮৫৭সনের সিপাহি বিপ্লব পর্যন্ত সময়টা ছিল ইতিহাসের বন্ধ্যাত্ব।কোম্পানির হাতে রাজদণ্ড —দ্বৈত শাসনের আড়ালে চলছিল শোষণ ও অত্যাচার।প্রশাসন,বিচার ও শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে এই সময়ে।গভর্ণর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস এই সময় স্থাপন করেন কলিকাতা মাদ্রাসা(১৭৮০সন),সংস্কৃত কলেজ(১৭৯১সন) ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ(১৮০০সন)। আরবী/ফার্সি ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেয়াই ছিল উদ্দেশ্য।কারন বিচার ও প্রশাসনে ইংরেজি শিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন।এজন্য কট্টর সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার হেস্টিংসের উদার চিন্তার প্রসংসা করতেই হয়।
মুসলমানরা ছিল তাদের ক্ষমতা হারানোর শোকে মুহ্যমান।অনেকে বলেন,মুসলমানরা ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে ছিল।কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়।এ বিষয়টা স্পষ্ট হয় উইলিয়াম এডামসের এক শিক্ষা বিষয়ক রিপোর্টে“Learned Musalmans are in general much better prepared for reception of European idea than learned Hindus”.অথচ আমরা জেনে এসেছি একটা ভয়ানক বিপরীত সত্য।আরেকটা কথা না বল্লেই নয়,ওই সময়ে শিক্ষাটা কেবল সম্ভান্ত্র মুসলমান দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।আর ধর্মীয় গোঁড়ামি দেখিয়ে ছিল মুসলমানরাই। ১৮২৩ সনে কলিকাতা মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষা চালুর বিরুদ্ধে বাদ সাধে খোদ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই।তাঁরা এই উদ্যোগকে ধর্ম ও সংস্কৃতির জন্য বিপদজনক মত দিয়েছিলেন।১৮২৬সনে অবশ্য আলাদা ভাবে চালু হয়।এই ধরনের গোঁড়ামির সুযোগ যদি অন্য কেউ নেয় তবে দায় মুসলমানদের উপরই বর্তায়।মুসলমানদের অহমে(Ego)তে শেষ আঘাত হানা হয় যখন,নতুন গর্ভণর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিস ১৮৩৭ সনে কেবল ইংরেজিকেই দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন।
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ভারতীয় মুসলমানদের ইতিহাস লেখার দায়িত্ব নেন ইংরেজ পন্ডিতরা।
- W.Hunter রচনা করেন Annal of Rural Bengal (1866) The Indian Mussalmans (1872).
- Dulton:Description of Ethology of Bengal (1872).
- J.Wise:The races,castes,and tribes of Eastern Bengal.(1883).
বলাই বাহুল্য যে,এসব ইংরেজ পন্ডিতরা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ইতিহাস নামের স্পর্শকাতর বিষয়টি বেছে নিয়ে ছিলেন। তাদের ইতিহাস গ্রন্থ ছিল কদর্য তথ্যে ভরা।
উনিশ শতক ছিল মুসলমানদের নবচেতনার উন্মেষ কাল।পরাজিত,অপমানিত ও অত্যাচারিত মুসলমানরা তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে থাকেন।“অসত্যের কাছে কভু নত নহে শির”—-এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তারা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবার জন্য তৈরি হতে লাগলেন।এই লড়াইয়ে তাঁদের অস্ত্র হল“শিক্ষা”—-অবধারিত ভাবে তা ইংরেজি।মুসলমানরা বুঝতে পারলেন শিক্ষা দিয়েই তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।এ জন্য দরকার গোঁড়ামি মুক্ত মানসিকতা।এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মুসলমানরা।
এই সময়ের মধ্যেই তাঁরা পাহাড়সম প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে ইংরেজি শিক্ষাকে আত্মস্থ করে নিয়েছিলেন।এবার জবাব দেবার পালা।বাঙ্গালী মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসাপূর্ণ ইতিহাসের বিরুদ্ধে প্রথম কলম ধরেন খোন্দকার ফজলে রাব্বি।উনি ছিলেন মুর্শীদাবাদ নবাব এস্টেটের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।মাতৃভাষা উর্দু হলেও ইংরেজি,ফার্সি ও আরবী জানতেন ভাল।১৮৯১ সনে তিনি“হকিকতে মুসলমানানে বাংলাহ“নামে ফার্সি ভাষায় বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস লিখেন।এ ইতিহাস বইয়ে তিনি ইংরেজি পন্ডিতদের ওই সকল মিথ্যা তথ্যে ভরা ইতিহাস বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের দাঁতভাঙা জবাব দেন নিজস্ব তথ্য‑উপাত্ত দিয়ে।১৮৯৪ সনে বইটি“The Origin of Musulmmans of Bengal“নামে অনুদিত হয়।এই বইটি তৎকালীন সুধী মহলে বিপুল সাড়া জাগায়।মুসলমানরা অনেকটা আত্নবিশ্বাস ফিরে পান।ইংরেজ পন্ডিতরাও কিছুটা ম্রিয়মাণ হন।
এদিকে একই সময়ে সুদূর আসামের শ্রীহট্টেও বাঙ্গালী মুসলমানদের সম্ভ্রান্ত পরিবারের ইংরেজি শিক্ষিতরা বাংলা ভাষায় নিজেদের ইতিহাস চর্চ্চায় উদ্যোগী হন।এদেরই একজন হলেন “তরফ“পরগণার লস্করপুরের সম্ভ্রান্ত “সৈয়দ” বংশীয় সদস্য সৈয়দ আবদুল আগফর।তিনি ছিলেন অলিকূল শিরোমনি শ্রীহট্ট বিজয়ী হযরত শাহজালাল(রঃ)এর সহযুগী ৩৬০ আউলিয়ার নেতা সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিন(রঃ)বংশীয়।সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিন(রঃ)ছিলেন যুগপৎ শ্রীহট্ট পরে তরফ রাজ্য বিজয়ী ব্যক্তি।১৮৮৫ সনে তিনি“তরফের ইতিহাস“বইটি লিখেন।এটাই ছিল বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম আঞ্চলিক ইতিহাস বই।১৮৮৬সনে মোহাম্মদ আহম্মদ নামে একজন লেখক লিখেন“শ্রীহট্ট দর্পন”।বলা আবশ্যক যে শ্রীহট্টের প্রথম ইতিহাস গ্রন্থের নাম“সোহাইলি ইয়েমেন”।লেখক নাসিরউদ্দিন হায়দার যা প্রকাশিত হয় ১৮৮০সনে।এটা ফার্সি ভাষায় লিখিত।এতে হযরত শাহজালাল(রহঃ)ও তাঁর সঙ্গী আউলিয়াদের বিবরণ আছে।কিন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় হল বাংলা ভাষায় লেখা বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাস।যে বইগুলো লিখেছিলেন ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙ্গালি মুসলমানরা।
উনিশ শতকে বাঙালী মুসলমানদের আর্থ‑সামাজিক অবস্থান নিয়ে গবেষণা করেছেন ড,ওয়াকিল আহমেদ।উনার পিএইচডি থিথিসের বিষয়বস্তু ছিল উনিশ শতকের বাঙ্গালী মুসলমানদের চিন্তা ও চেতনাগত অবস্থান।তিনি তাঁর থিথিসে উনিশ শতকের নবচেতনার আলোকপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে সৈয়দ আবদুল আগফরকে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। “তরফের ইতিহাস“বইটি নিয়ে একটা ছোট আলোচনা রেখেছেন।কেন না, তখনও মুসলমান শিক্ষিত সমাজে ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের ফার্সি ভাষা বিলুপ্ত হয় নি।ওই সময় বাংলা ভাষায় লেখা সৈয়দ আবদুল আগফরের বইটি ছিল প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ।যা মাইল ফলকও বটে ।
বইটি সম্পর্কে ড,ওয়াকিল আহমেদের ভাষ্যʼ-
সৈয়দ আবদুল আগফরের ভাষা মার্জিত,বিশুদ্ধ ও সাবলীল।তিনি তাঁর বিঘোষিত নীতির আলোকে তরফের ইতিহাস লেখার চেষ্টা করেছেন।এটা মুখ্যত পারিবারিক ইতিহাস।তদ্বসত্ত্বেও তিনি তরফের ভূগোল,প্রকৃতি,জনগণ, সমাজ,ধর্ম ও শিক্ষা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন।একজন নব্য ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালি মুসলমানের পক্ষে ওই সময়ে নিজের ভাষার ইতিহাস লিখা ছিল অভূতপূর্ব।গ্রন্থটির কলেবর বেশী বড় নয়।ইতিহাসের সব উপাদানই এতে রয়েছে।ʼ |
এই গ্রন্থে তিনি সবচেয়ে বেশী আলোকপাত করেছেন ওই সময়ে তরফের মুসলমানদের আর্থ‑সামাজিক চালচিত্রের উপর।ভূ-স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে তরফের দুটি পরিবারের সংঘাত এই ইতিহাস গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়।এই ভূ-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে জড়িত হয়ে শাহাদাৎ বরণ করে ছিলেন লস্করপুর নবাবী তহশিল কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা রামশ্রীর সৈয়দ মোতিউর রহমান ও তাঁর পূত্র সৈয়দ তোতিউর রহমান।ন্যায়নিষ্ঠতা ও কর্তব্য পরায়নতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ ছিলেন সৈয়দ মোতিউর রহমান খোন্দকার।এই নৃশংস ঘটনা ছিল তৎকালীন ঢাকা ও মুর্শীদাবাদের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
উনিশ শতকে বাঙালী মুসলমানদের সমাজ ব্যবস্থা ছিল চরম কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মীয় গোঁড়ামিপূর্ণ।অখণ্ড ভারতের এসব অঞ্চলে মুসলমান সমাজ কাঠামোতে নানা সামাজিক স্তরবিভাগ (Social Stratification)ছিল।এটা অনেকটা হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথার অনুরূপ।ব্রাম্মণ,কায়স্থ,বৈশ্য ও শুদ্র–হিন্দু ধর্মের রক্তভিত্তিক চর্তুবর্ণ সমাজ ব্যবস্থা মুসলমান সমাজে প্রবেশ করে।এটা শুধু নাম বদলে আশরাফ,আতরাফ,আজলাফ ও আরজল নামে সমাজ ব্যবস্থায় জেঁকে বসে।মোটা দাগে বলা যায়,“আশরাফ“ও “আতরাফ“স্তরায়িত সমাজ ব্যবস্থা।
এই সমাজ ব্যবস্থা এমন ছিল যে,কোন মুসলমান“আশরাফ” শ্রেণীর পূরুষ কোন“আতরাফ“শ্রেণীর মহিলাকে বিবাহ করলে ওই মহিলার কোন সামাজিক মর্যাদা থাকত না।পুরুষের ঔরসে ও মহিলার গর্ভের সন্তান নানা গঞ্জনার শিকার হতো।এমনকি সে সন্তানকে পিতার“মিরাশ“হতে বঞ্চিত করা অতি সাধারণ ঘটনা ছিল।যদিও ইসলামী শরিয়ত এই ধরনের বিধান অনুমোদন করে না।দুর্ভাগ্যবশত,এই ধারাটি তরফে‘র “আশরাফ“শ্রেণীর মুসলমানরা কড়াকড়ি ভাবে মেনে চলতেন।ফলে সমাজে অনেক বিশৃঙ্খলা ও সমস্যা দেখা দিত।দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুন খারাবি ও ঘটে যেত অনেক সময়।
বলা আবশ্যক যে,তখন লস্করপুর ছিল চাকলে জাহাঙ্গীরনগর(ঢাকা)অধীনে একটা জেলা(সুলতানী ও মোগল আমলে কয়েকটি পরগণা নিয়ে একটি জিলার প্রশাসনিক ইউনিট গঠিত হত)এবং সেটা হতো অখণ্ড জায়গীর।মুর্শীদাবাদ নবাবী দরবারের দ্বারা মোগল সম্রাটের অনুমোদন ক্রমে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা হতেন রাজস্ব আদায়কারী।তখন তরফের লস্করপুরের জমিদাররা সাত আনি ও নয় আনি জামিদারী বিভক্ত ছিলেন।রামশ্রীর সৈয়দ মোতিউর রহমান ছিলেন লস্করপুর কাছারীর প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা।উনি এই রাজস্ব কার্যালয়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় লস্করপুর সাত আনি জমিদারদের পরিবারে জমিদারি“মিরাশ“নিয়ে একটি গৃহ‑বিবাদ শুরু হয়।এই বিবাদে সৈয়দ মোতিউর রহমান প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে ন্যায়নিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা গ্রহন করেন।দূর্ভাগ্যবশত তাঁর এই ন্যায়নিষ্ঠ পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত পূত্র সৈয়দ তোতিউর রহমান সহ মর্মান্তিক শাহাদাত বরনের মধ্যে শেষ হয়।কেবল মাত্র ন্যায়পক্ষ সমর্থনের জন্য সৈয়দ মোতিউর রহমানের বীরোচিত পদক্ষেপ ও শাহাদাত বরণ সকলের মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করেছিল।
আলোচ্য বিষয় হলো জ্ঞান ও ইতিহাস।এ কথা অনস্বীকার্য যে,দুটি বিষয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।ইসলামে জ্ঞান চর্চ্চার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।পবিত্র আল‑কোরানে বলা হয়েছে“তোমার প্রতিপালকের নামে পাঠ কর–সেই প্রতিপালক যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।তিনি মানুষকে ঘ্ণীভূত শোণিতের যোগে সৃষ্টি করেছেন।তুমি পাঠ কর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত।তিনি মানুষকে কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।মানুষ যাহা জানতো না–তাহাই তিনি শিক্ষা দিয়েছেন”[৩০;১;১‑৫] শুধু তাই নয়,মহান আল্লাহপাক এই গ্রন্থকে বর্ণনা করেছেন,মহাবিজ্ঞানময় হিসেবে।এ বিষয়ে মুসলমানদের কোন সন্দেহ নেই।এটা বিজ্ঞানময় তো বটেই মানব জাতি ইতিহাসও।কারন আমাদের আদি পিতা আদম(আঃ)হতে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে।
এই জ্ঞান চর্চ্চার জন্যই কোরান নিখুঁত ভাবে সংকলিত হয়েছে।হাদিসের গ্রন্থনাও জ্ঞান চর্চ্চার ফল।রাসুল(দঃ)জন্ম,নবুয়ত লাভ,ইসলাম প্রচার,বিভিন্ন যুদ্ধজয়,হিজরত,মক্কা বিজয় ও ইসলামি নগর রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার বিবরণ ইতিহাস শাস্ত্রের অংশ।আরবের সাহিত্য চর্চ্চাও উন্নত মানের ।বিখ্যাত আরব কবি ইমরুল কায়েসের নাম কে না জানে?জাহেলি যুগ বা তাঁর পরবর্তী সময়ে আরেকটি বিষয় খুব প্রচলিত ছিল।এটা ছিল“নসব‑নামা“বা“বংশ‑বিদ্যা“চর্চ্চা।নিজের বা গোত্রের বংশসূত্র সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ছিল ওই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।গোত্রবদ্ধ জীবনাচারের জন্যই বোধ হয় এই বিদ্যার বিকাশ ঘটে।জাহেলী যুগের উদ্ভব এই শাস্ত্র,রাসুল(সাঃ)জীবনকাল ও পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল।এখনো আছে।এই বিষয়ে অগ্রণী ছিলেন প্রথম খলিফা আবু বকর(রাঃ)।“আল-ইকদুল ফরিদ“নামে বংশবিদ্যা বিষয়ে তাঁর একটা গ্রন্থও আছে।এই গ্রন্থে তিনি আরবের বিভিন্ন গোত্র ও এর শাখা প্রশাখার বর্ণনা লিখে গেছেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে আগত আরবীয় মুসলমানরা এ দেশে আসার সময় ওই শাস্ত্রটি সঙ্গে নিয়ে আসেন বলে ধারণা করা হয়।এ জন্য আমরা লক্ষ করেছি যে এখানকার যেসব পরিবার তাঁদের সম্ভ্রান্ততার দাবী করতেন তাঁরা অতি যত্ন সহকারে তাদের বংশীয়“নসব‑নামা“সংরক্ষণ করে ছিলেন এবং এখনো করছেন।এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়,কেবল মাত্র জ্ঞানই এই বিদ্যা চর্চ্চাকে সাহায্য করেছে।
সংরক্ষিত বংশীয়“নসব‑নামা“য় দেখা যায় সৈয়দ মোতিউর রহমান সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিন(র)দ্বাদশ অধঃস্তন বংশধর। হযরত শাহজালাল(র)এর সঙ্গী এবং শ্রীহট্ট/তরফ(তুঙ্গাচল)রাজ্য বিজয়ী সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিন(র)ছিলেন একজন“আহলে — বায়ত“ভুক্ত পরিবারের সদস্য।উনার পিতার নাম হযরত ইমাম হাসান আরবি(র)।তাঁর ১৪শ উর্ধতন বংশশীর্ষ “আমিরুল মোমেনিন“হযরত আলী ইবনে আবুতালিব(আঃ)এর সঙ্গে সংযুক্ত।তাঁদের আদি আবাস বাগদাদ নগরী।
সময়টা ছিল আব্বাসীয় খেলাফতের শেষ পর্যায়।আব্বাসীয় বংশের সর্বশেষ খলিফা মুস্তাসিম বিল্লাহর রাজত্বকাল(১২৪২-১২৫৮খ্রীঃ)১২৫৮সনে মোঙ্গল বীর হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করে আব্বাসীয় খেলাফত ধ্বংস করেন।খলিফার পরিবার ও পারিষদবর্গরা নির্মম ভাবে নিহত হন।মাত্র ৩দিনে সুরম্য বাগদাদ নগর ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়।১৬ লক্ষ নর‑নারীকে হত্যা করা হয়।এই সময় অনেক মুসলমান ও“আহলে বায়ত“পরিবারের লোক প্রান নিয়ে দিল্লি চলে আসেন।
দিল্লিতে তখন বলবন ও ঘুরী সুলতানরা রাজত্ব করছেন।তাঁরা সসম্মানে এই মুহাজির মুসলমানদের আশ্রয় দেন।সম্ভ্রান্ততার মানদন্ডে এঁদের যথাযথ বৃত্তি ও জীবিকার সংস্থান করেন।ঘুরী বংশের পর আসে খলজির সুলতানদের রাজত্ব।ওই সময়েও তাঁদের সম্ভ্রান্ত মানদণ্ড অক্ষুন্ন ছিল।সুলতান আলাউদ্দীন খলজীর(১২৯৫-১৩১৬খ্রীঃ)রাজত্বকালে ১৩০৪ সনে সুলতানের সেনাপতি সিকান্দার খান গাযীর অনুপ্রেরণায় হযরত শাহজালাল মোজাররদ ও সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিন(র)শ্রীহট্টের রাজা গৌর গোবিন্দকে বিনা যুদ্ধেই রাজ্য ত্যাগ করতে বাধ্য করেন।প্রমাণিত ইতিহাস অনুযায়ী ১৩০৪ সনেই শ্রীহট্ট মুসলমানদের কব্জাগত হয়।
এই বিজয়ের বছর খানেক পরই হযরত শাহজালাল(র)আদেশে সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিন(র)তুঙ্গাচল/তরফ রাজ্য বিজয় করেন।নতুন রাজ্যের শাসনভার তাঁর উপর অর্পিত হয়।সিপাহসালারের পর তাঁর পূত্র সৈয়দ সিরাজউদ্দীন শাসনভার পান।সৈয়দ সিরাজউদ্দীনের দুই পূত্র ছিলেন(১)সৈয়দ শাহ মুসাফির(২)সৈয়দ শাহ ফকির।এঁদের দুজনের অধঃস্তনরাই তরফের বর্তমান সৈয়দ বংশীয়দের প্রজন্ম।সৈয়দ শাহ ফকির হলেন“রামশ্রী“সৈয়দ বংশীয়দের উর্ধতন পূর্বপুরুষ।
সৈয়দ মোতিউর রহমানের পিতামহের নাম সৈয়দ সিরাজউদ্দীন(২য়)।তিনি খুব সাধু প্রকৃতির লোক ছিলেন।সৈয়দ সিরাজউদ্দীন(২য়)ছিলেন তরফের বাশিন্দা।তরফ হতে তিনি ‘উচাইল’গিয়ে শংকরপাশা‘নামক গ্রামে বিবাহ করে স্থায়ী হন।তিনি সব সময় লাল রঙের চাদর পরতেন এজন্যই তিনি লোক জনের কাছে“লাল ঠাকুর“নামে পরিচিত ছিলেন।সৈয়দ সিরাজউদ্দীন(২য়)এর পিতার নাম হল সৈয়দ গৌহার।তিনি আউলিয়া শ্রেণীর লোক ছিলেন।লাউ দ্বারা নির্মিত বাদ্যযন্ত্র(একতারা) দিয়ে উনি আধ্যাত্মিক গান গাইতেন।উনি“লাউয়া পীর” নামে পরিচিত ছিলেন।তিনি ছিলেন সৈয়দ আবদুর রহমানের পিতামহ।
সৈয়দ আবদুর রহমান তরফের নরপতির সৈয়দ শাহ আবুল হাসনের বোনকে বিবাহ করেন।তিনি অবস্থাপন্ন ছিলেন।নরপতি‘তে “আবদুল রহমানপুর” নামের গ্রাম তাঁরই স্মৃতি বহন করছে।পিতৃভিটা“শংকরপাশা“গ্রামে বিশাল জায়গা নিয়ে(প্রায় ৭হাল)একটা হাবেলি তৈরি করেছিলেন।ওই সময়ে কেবল বানিয়াচং ছাড়া এ রকম বড় হাবেলী ছিল না।শংকরপাশা গ্রামে এখনো পরিত্যক্ত হাবেলির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।এই সৈয়দ আবদুর রহমানের পূত্রই হলেন বিখ্যাত সৈয়দ মোতিউর রহমান।তিনি আরবি,ফার্সি ও ইংরেজি ভাষাও জানতেন।তরফের সাত আনি জমিদারদের কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল।সততা,ন্যায়নিষ্ঠতা আর অমায়িক ব্যবহার ছিল তাঁর অন্যতম গুণ।“আহলে বায়েত“এর সদস্য হিসাবেই তিনি এসব গুণের উত্তরাধিকারী ছিলেন।দাপ্তরিক কর্মেও তিনি ছিলেন দক্ষ।এ সকল গুণ তাঁকে সকলের নিকট শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় ব্যক্তিত্ব করে তুলেছিল।
খুব তাড়াতাড়ি তাঁর গুণের কথা সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে।পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরার মহারাজাও তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন।সৈয়দ মোতিউর রহমানের গুণের সংবাদ মুর্শীদাবাদ নবাব দরবারে ও পৌঁছে ছিল।কিছু দিন পর মুর্শীদাবাদ নবাব দরবার হতে “লস্করপুর“রাজকীয় তহশীল কার্যালয়ে-র দায়িত্বভার গ্রহনের আমন্ত্রণ আসে।সম্মানজনক রাজকীয় তহশীল কার্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহন করার জন্য তিনি সাত আনি জমিদারীর দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
তিনি পূর্বের কর্মস্থল ছেড়ে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য পরিবার নিয়ে লস্করপুর চলে আসেন।লস্করপুর রাজকীয় তহশীল কার্যালয়ের দক্ষিন দিকে খোয়াই নদীর ওপারে“রামশ্রী“গ্রামে বাড়ি তৈরি করেন।সৈয়দ মোতিউর রহমানই হলেন এ বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা পূর্বপূরুষ।তিনি এই তহশিল কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েই সাত আনি জমিদারদেরদের মধ্যে“মিরাশ“নিয়ে গৃহ‑বিবাদের ঘটনা ঘটে।এই দ্বন্দ্বে তিনি অনভিপ্রেত ভাবে জড়িয়ে পড়েন।যা ছিল হৃদয় বিদারক।
তরফের ওই গৃহবিবাদের সময়টা ছিল ১৭৫৬ সন।আলীবর্দি খানের পর নবাব সিরাজুদ্দৌলার শাসনের শুরু।৯আনি জমিদারির মুসা রজা মৃত্যু বরণ করেন।মুছা রজার ২পূত্র,মদন রজা ও আলী রজা।প্রয়াত মুসা রজার অপর ভাই মোহাম্মদ রজার ৪ পূত্র আহম্মদ রজা,হামিদ রজা,হাসন রজা ও কায়িম রজাও ছিলেন জমিদারির হিস্যাদার।মুসা রজার পূত্র আলী রজার মা“আতরাফ“শ্রেণীয়া।ফলে তিনি বৈমাত্রেয় ভাই ও জ্ঞাতিদের কাছে ঘৃণিত ছিলেন।আলী রজা তাঁর“মিরাশ“দাবি করলে তাঁকে ভাই ও জ্ঞাতিরা তাড়িয়ে দেন।
আলী রজা উপায় না দেখে রাজকীয় তহশিলের কর্মকর্তা সৈয়দ মোতিউর রহমানের কাছে যান।কারন“মিরাশ“এর বিষয় বিচারের ভার তাঁর উপর ছিল।৭আনি জমিদারীতে কাজের সুবাদে এই ঘটনা তার জানা ছিল।যেহেতু আলী রজার মিরাশ ইসলামে অনুমোদিত।তাই তিনি ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোনে আলী রজাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করলেন।সৈয়দ মোতিউর রহমানের সহযোগিতায় দিল্লির দরবার হতে আলী রজার নামে “চৌধুরাই“সনদ অনুমোদিত হল।
বলা আবশ্যক যে,৯আনির আহম্মদ রজা/হামিদ রজারা ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী।তাঁদের প্রভাবে প্রতাপে আশেপাশের অন্য জমিদাররা সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন।তাদের বিরুদ্ধাচারণ করা ছিল মৃত্যুকে ডেকে আনা!
“আহলে বায়েত“র শোণিতধারা যার দেহে বইছে তাঁর পক্ষেই কেবল এ ধরনের অন্যায় বরদাস্ত করা সম্ভব নয়।সৈয়দ মোতিউর রহমানের এই অকুতোভয় মনোভাব হামিদ রজাদের মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে দিল।হামিদ রজাগন সৈয়দ মোতিউর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহন করলেন।লাঠিয়াল,বন্দুকধারী ও তীরান্দাজ নিয়ে রাজকীয় তহশীল কার্যালয়ে চড়াও হলেন।
রাজকীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে সৈয়দ মোতিউর রহমানের ধারণা ছিল হামিদ রজাগন কাছারি আক্রমণ করার সাহস পাবেন না।এ জন্য তাঁর কার্যালয়ের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তেমন শক্তিশালী ছিল না।“হিংসায় উম্মত্ত পৃত্থিতে,মানবতা অসহায়”—–অধীনস্তরা বার বার বিপদের কথা তাকে বললেও তিনি বিন্দুমাত্র ভীত হন নি।নিঃশঙ্ক চিত্তে তিনি তাঁর কর্তব্যকর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন।
ফলে যা ঘটার তাই ঘটল।হামিদ রজাদের বর্বর পাইক-লস্কররা রাজকীয় তহশীলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়ল।সৈয়দ মোতিউর রহমান তখনও নির্ভয়ে বসে ছিলেন।তরবারির আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।
লস্করপুর নবাব কাছারীর ঘটনায় মোট ৩৫জন শাহাদাত বরণ করেন।এদের মধ্যে সৈয়দ মোতিউর রহমানের বড় ছেলে নিরীহ সৈয়দ তোতিউর রহমান ও ছিলেন।রক্ষা পান নি গৃহ বিবাদের মূল ব্যাক্তি আলী রজাও।হামিদ রজার বাহিনীর রামশ্রীতে সৈয়দ মোতিউর রহমানের হাবেলীতে গিয়ে আলী রজার“চৌধুরাই“সনদ,জরুরী দলিলপত্র ও অর্থ‑অলঙ্কার লুটপাট করে।সৈয়দ মোতিউর রহমানের অন্য দুই পূত্র রামশ্রীতে অবস্থান করায় প্রানে বেঁচে যান।এঁ দুজনের নাম হল,সৈয়দ রিয়াজুর রহমান ও সৈয়দ নিয়াজুর রহমান। ১৭৭০সনের ৩০শে জুলাই মোগল সম্রাট শাহ আলম(২য়)তাঁদের উভয়কে “সাতগাঁও ও বালিশিরা পরগণার চৌধুরাই“সনদ প্রদান করেন।সৈয়দ মোতিউর রহমানের সময় এই দুটি পরগণা লস্করপুর রাজস্ব কার্যালয়ের অধীনে ছিল।ওখানে সৈয়দ মোতিউর রহমান নিজ নামে একটা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।যা এখনো আছে।দক্ষিন শ্রীহট্টের অধীনে ওই থানার নাম ছিল মোতিগঞ্জ।১৮৮২সনে মৌলভীবাজার সাব‑ডিভিশন ঘোষিত হয়।১৮৯২সনে আসাম‑বেঙ্গল রেলওয়ে লাইন স্থাপিত হলে মোতিগঞ্জ থানাধীন শ্রীমঙ্গল বাজারে রেল স্টেশন করা হয়।পরবর্তী সময়ে মোতিগঞ্জ থানার নাম পরিবর্তন করে শ্রীমঙ্গল নামকরন হয়।যা ইতিহাসের ধারাবাহিকতার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিজ্ঞজনের অভিমত।
সাতগাঁও/বালিশিরার“চৌধুরাই“সৈয়দ রিয়াজুর রহমানও পিতার মত তেজস্বী ছিলেন।তিনি কোম্পানির নিবর্তনমূলক খাজনা আদায় ও নিলাম ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেন।অন্য জমিদারদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন বলে ইতিহাসে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।১৭৭৯সনের ৩রা নভেম্বর তারিখে লেখা এক চিঠিতে শ্রীহট্টের বৃটিশ কালেক্টর রবার্ট লিন্ডসে সৈয়দ রিয়াজুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার ঢাকার অফিসকে জানিয়েছেন।এই চিঠি বৃটেনের“ইন্ডিয়া অফিস”-এ নথিবদ্ধ আছে।এই অফিসে“ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি“র শাসনামলের সকল দলিল পত্র রয়েছে।ভাবুন তো— কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে ১৮৫৭সনের সিপাহি বিদ্রোহের ৭৮বছর আগেই শ্রীহট্টের মুসলমান ভূ-স্বামীরা প্রতিবাদ করেছিলেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।আমরা তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার ইতিহাস পড়ি অথচ শ্রীহট্টের মুসলমানদের ইতিহাস জানি না।আত্ন বিস্মৃত জাতির এরচে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে?আঞ্চলিক ইতিহাস কে মূল্যায়ন করার মধ্যেই জাতীয় ইতিহাসের স্বার্থকতা নিহিত।
প্রবন্ধটি রামশ্রী সাহেব বাড়ির সুযোগ্য উত্তরসূরী জনাব Syed Enayetur Rahman -এর Facebook টাইমলাইন থেকে নেওয়া। |
Loved the wit in this article! For more on this, click here: DISCOVER MORE. Keen to hear everyone’s views!
Cryptocurrency experts have carefully analyzed the range of BTC prices throughout 2024. For December 2024, their forecast is the following: the maximum trading value of Bitcoin will be around $85,754.13, with a possibility of dropping to a minimum of $61,663.23. In December 2024, the average cost will be $73,708.68. In the comments, Kris Morf asked how to add an area fill to the chart, showing me the graphs on CoinBase as an example. Here’s what those charts look like: Over the last 30 days, Bitcoin had 15 30 (50%) green days. According to our historical data, it is currently profitable to invest in Bitcoin. The price of Bitcoin increased by 107.45% in the last 1 year, while the coin’s 3‑year performance is 30.92%. Explore new territories with greater confidence It shows the total supply of bitcoin in the market at any given time by normalizing the supply distribution. Therefore the Y‑axis on the chart goes up to 100% as it is showing the age breakdown of all bitcoin on a given date.
https://app.scholasticahq.com/scholars/300544-jennifer-brock
Cryptocurrency has attracted many new traders, many of whom don’t understand how trading works or the intricacies of crypto. Crypto has reportedly spent hundreds of millions of dollars on advertising, including a TV spot with actor Matt Damon, a naming rights deal for the old Staples Center in Los Angeles, and a sponsorship deal with the 2022 FIFA World Cup. Surely, it could invest some money into further developing its educational content to help novice traders better understand the many risks of crypto trading. Scan the code with your phone to get the app 08 12 2022 Update: We are pleased to announce that all eligible PayPal account holders in the U.S. can now transfer, send and receive cryptocurrency with PayPal. Download the PayPal app or log in to your account to learn more.
Chris Waugh41 It would have made the Premier League more competitive and done more to keep European clubs happy and not so intent on the Super League. Two quickfire goals, from the rapier right boot of Erling Haaland and the dreamy combination of Kevin De Bruyne and Bernardo Silva, left Newcastle reeling. The magnificent quality of City’s response elevated this game into an instant Premier League classic. Newcastle chairman Yasir Al-Rumayyan on the pitch at half-time during the English Premier League soccer match between Newcastle United and Leicester City at St. James’ Park, Newcastle upon Tyne, England, Monday, May 22, 2023. (Owen Humphreys PA via AP) Our website is temporarily unavailable in your location. We are working hard to get it back online. If you told us two years ago that this was going to happen, I wouldn’t have believed you.
http://fit-girl.co.kr/bbs/board.php?bo_table=free&wr_id=210925
Manchester City will play the next match against Brentford on May 28, 2023, 3:30:00 PM UTC in Premier League. The next Man City game on TV is Manchester City v Manchester United on Saturday 3rd June 2023 in the FA Cup Final and the match kicks off at 3:00pm. The standout tie of the third round involved Premier League champions Manchester City thrashing Chelsea 4–0. Pep Guardiola’s side had already eliminated the Blues by a 2–0 score in Carabao Cup action this season, and also registered a 1–0 road victory at Stamford Bridge just three days before their FA Cup showdown. Make Eurosport your go-to source for sports online from football to tennis, cycling, snooker and more. Enjoy the best of this season’s top sports competitions. Our services also allow you to check out videos of goals and highlights. Next time you want to find out the score, just ask us! What’s the Score?
241 Inhibition of NOS using specific inhibitors was associated with enhanced MC degranulation and increased intestinal permeability priligy alternative Alqamah bin Abdullah is the brother of Bakr bin Abdullah Al Muzani
123B là một nền tảng giải trí trực tuyến hấp dẫn, chuyên về cá cược thể thao và các trò chơi đổi thưởng thú vị. Nổi bật với tỷ lệ thắng cao, chương trình khuyến mãi hấp dẫn, và giao dịch nhanh chóng, 123Bet mang đến cho người chơi trải nghiệm thú vị, an toàn và dễ dàng kiếm thưởng. https://123bet.red/
Rory McIlroy $10,800 was dominant on the DP World Tour in January with a T2 and a win in Dubai, but struggled to keep up that momentum when he came back to the PGA Tour. His iron play has been inconsistent until the last two weeks, when he gained over 11.5 strokes on approach combined at The Players Championship and the Valero Texas Open. He wasn’t quite as dominant off the tee either week and will need to fix that this week to finally finish the career grand slam. He has seven top-10 finishes here in the last 10 years. He missed the cut twice in the last four years but finished top five the other two years. Fade McIlroy at your own risk. Rory McIlroy $10,800 was dominant on the DP World Tour in January with a T2 and a win in Dubai, but struggled to keep up that momentum when he came back to the PGA Tour. His iron play has been inconsistent until the last two weeks, when he gained over 11.5 strokes on approach combined at The Players Championship and the Valero Texas Open. He wasn’t quite as dominant off the tee either week and will need to fix that this week to finally finish the career grand slam. He has seven top-10 finishes here in the last 10 years. He missed the cut twice in the last four years but finished top five the other two years. Fade McIlroy at your own risk.
https://mill-wiki.win/index.php?title=Forebet_saturday_prediction
More: Falcons 2023 betting lines, odds, schedule ATS. 21+ and present in OH. Gambling Problem? Call or text 1–800-GAMBLER (CO, DC, IL, IN, LA, MD, MS, NJ, OH, PA, TN, VA, WV, WY). In the lead-up to the 2023 Super Bowl, the American Gaming Association predicted that Super Bowl wagers would soar beyond $16 billion, more than doubling the prior year’s projection of $7.6 billion. Brian Becker, senior vice president of Tipico Sportsbook, is among many gambling industry executives who predict a record-breaking betting level on this year’s Super Bowl. With the NFL season now into Week 2 of the preseason, the NFL Super Bowl odds are starting to sharpen up. Join me as I break down which teams are favored to win Super Bowl 59 in 2025. Of course, when teams get eliminated from playoff contention or the playoffs, sportsbooks take the odds on these teams off the board, and the odds on those remaining teams tighten up. All this goes to show that the earlier you get a bet down in the Super Bowl futures market, the better the odds are.
Cakhiatv chuyên trang trực tiếp cung cấp cho bạn những trận đấu hấp dẫn, diễn ra trên khắp sân cỏ lớn nhỏ, từ các giải đấu quốc nội đến quốc tế. Đây chính là điểm đến lý tưởng để thỏa mãn cơn khát thể thao vua của người hâm mộ bóng đá. Với chất lượng hình ảnh tuyệt vời và tốc độ truyền tải nhanh chóng full HD. https://cakhiatv.pet/