অন্যান্য

হাইয়া আলা খাইরাল আমাল

আল্লাহ হলেন মৌলিক সত্ত্বা বা পরমাত্মা। তাই আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানে হলো মূলকে ভুলে যাওয়া বা মূল থেকে দূরে সরে যাওয়া। আর মূল থেকে দূরে সরে যাওয়া মানে হলো মানুষের তার নিজস্ব পরিচয়ই হারিয়ে ফেলা। নিঃসন্দেহে মানুষ অত্যন্ত জটিল এবং এমন বিস্ময়কর এক সত্ত্বা যার সামনে বহু পথ খোলা রয়েছে। ইচ্ছে করলেই যেমন সে অবক্ষয়ের পথ নির্বাচন করে অতলান্তে তলিয়ে যেতে পারে, আবার ইচ্ছা করলেই সে পরিপূর্ণতার পথে উড্ডিন হয়ে মঞ্জিলে মকসুদে আরোহন করতে পারে। আর সেই পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে হলে তাকে তাঁর পরমাত্না বা আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে হবে।

ইবাদাত হলো মানুষের জন্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আধ্যাত্মিক পূর্ণতা প্রাপ্তির বাহন। ইবাদাত মানুষকে জাগিয়ে তোলে এবং পথ দেখায়। ইবাদাত মানুষকে অলসতা থেকে মুক্তি দেয়। ইবাদাতের মাধ্যমে মানুষ নিজের অস্তিত্বের বাস্তবতায় উপনীত হয়। যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে ভালোবেসে ইবাদাত করে, সে তার মাধুর্য অনুভব করবে এবং বন্দেগি ও আনুগত্যের পর্যায়ে পৌঁছবে, আর এ অবস্থায় সে এক আল্লাহর আদেশ‑নিষেধই অনুসরণ করবে। ইবাদাত হলো মানুষের আত্মিক ভারসাম্য এবং মানসিক প্রশান্তির কারণ। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানুষকে জীবনের উত্থান‑পতনের ক্ষেত্রে প্রতিরোধী এবং সচেতন করে তোলে। আল্লাহর সাথে স্থায়ী সম্পর্ক এবং তাঁর ইবাদাত মানবিক উন্নয়ন ও বিকাশের পথ সুগম করে। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্যে মানুষের অন্তরের স্বাভাবিক যে চাহিদা আছে, ইবাদাত মানুষের সে চাহিদা মেটায়। আল্লাহর ইবাদাত যে করবে, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের বিস্ময় দেখে সে তাঁর স্রষ্টার প্রতি অনুগত হয়।

যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে রুকু-সেজদাকারী, তারা অপরাপর লোকজনের তুলনায় আল্লাহ্‌র কাছে অনেক বেশি সম্মান ও মর্যাদাবান। আল্লাহ্‌ বলেন‑আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই। আমার ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণে নামায/সালাত আদায় করো।
আল্লাহর সাথে সম্পর্কের সর্বোত্তম উপায় হলো সালাত/নামায। নামায হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্কের পবিত্র ও ঐকান্তিক উপায় এবং আল্লাহর আনুগত্যের সর্বোত্তম প্রকাশ। নামায ছাড়া ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। কোরআনে কারিমে নামাযের মতো আর কোনো বিষয়ে এতো গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। নামায হলো আত্মার প্রতিপালক এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম।
কোরআনে কারিমে নামাযের জন্যে ব্যবহৃত শব্দটি হলো সালাত। আরবি ভাষায় এ শব্দটির অর্থ হলো লক্ষ্য করা বা মনোযোগী হওয়া, দোয়া করা, আনুকূল্য বা অনুগ্রহ লাভের প্রচেষ্টা। এই শব্দটি কোরআনে প্রায় ১১৪ বার উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব আয়াতে এই শব্দটি এসেছে সেসব আয়াতের বহুলাংশেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় রসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তিনি যেন সালাত/নামায কায়েম করেন।

সর্বোপরি আল্লাহর ইবাদাত করা, তাঁর অসীম শক্তিমত্তার প্রতি সম্মান দেখানো এবং তাঁর সকল আদেশ‑নিষেধের আনুগত্য করা ছাড়া ইনসানের যে ভিন্ন কোন বিকল্পই নেই। কেননা, অসীম দয়ালু আল্লাহর সামনে মানুষ অক্ষম এবং অতিশয় ক্ষুদ্র। মহান স্রষ্টার সাথে এই ক্ষুদ্র সত্ত্বার সম্পর্ক যার মাধ্যমে স্থাপিত হয় তাই হলো সালাত/নামায। পরমাত্মার সামনে জীবত্মার বিনয় প্রকাশের মাধ্যম হলো নামায। মনের আকাশে যখন মেঘ জমে, তখন কেবল নামাযের স্নিগ্ধ শীতল মৃদুমন্দ প্রেমের মেহরাবে উপস্থিতিই মানুষকে হালকা করতে পারে এবং মনের বাগিচায় খোদার স্মরণের ফুলেল সুভাসে সব কিছু বিভুল করে দেয়। সুতরাং, হে বন্ধুগন, আর দেরি নয়- হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ, হাইয়া আলা খাইরাল আমাল।

@syat

মতামত দিন