৯ই মহররম সন্ধ্যার কিছু আগে মওলা হুসাইন (আঃ) নিজ তাবুর সামনে বসেছিলেন। এমন সময় দেখা গেল যে, এজিদি বাহিনী পঙ্গপালের মতো ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর তাবুর দিকে ছুটে আসছে। ইমাম হুসাইন (আঃ) তখন তাদের হঠাৎ আক্রমণের কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে,কুফা থেকে ইবনে যিয়াদ খবর পাঠিয়েছে যে,ইমাম হোসাইন (আঃ)-এর মাথা কেটে পাঠান হােক। তাই এজিদী সেনাপতিরা আক্রমণে এসেছে।ইমাম হোসাইন (আঃ) চুড়ান্তভাবে বুঝতে পারলেন তাদের আসল উদ্দেশ্য কি? হযরত আব্বাস(আঃ)‘র মারফত মওলা হুসাইন (আঃ) তাদের বলে পাঠালেন, ঠিক আছে, তোমরা যদি যুদ্ধই করতে চাও, তবে আগামী কাল সকাল থেকে যুদ্ধ শুরু করো। আমাদেরকে আজ রাতে আল্লাহর ইবাদত করার শেষ সুযোগ দাও। এতে অনেকে রাজি হলো, আবার অনেকে রাজি হলো না তাদের ভেতরে অনেক আলাপ আলোচনা হলো। অনেকে বললঃ মওলা হুসাইন (আঃ) তো আমাদের হাতের মুঠায় আছেন।এক রাতের জন্য কি যায় আসে।কাল সকালে যুদ্ধ আরম্ভ করা যাক।তখন ইমাম হোসাইন (আঃ)-কে এক রাতের সময় দেয়া হলো এবং এজিদী সৈন্য বাহিনী নিজ তাঁবুতে ফিরে গেল।
ইমাম হোসাইন (আঃ) এক রাতের সময় পেলেন আল্লাহর ইবাদত করার জন্য ! শুধু কি তাই ? ইমাম হোসাইন (আঃ)-এর এক রাত সময় নেয়ার পেছনে আরো অনেক কারণ নিহিত ছিল। মওলা হুসাইন (আঃ) ও উনার সঙ্গী সাখীরা সারারাত ইবাদত করেছিলেন ঠিকই,কিন্তু ইতিপূর্বে ইমাম হোসাইন (আঃ)-এর ইবাদতের কি কোন কমতি পড়েছিল? না পড়েনি। কারণ যে মওলা হুসাইন (আঃ) জীবনে ২৯ বার শুধু পায়ে হেঁটে হজ্জ করেছিলেন।সেই ইমাম হোসাইন (আঃ)- এর বাকী ইবাদতের কি তুলনা হয়। মা ফাতেমার গর্ভে যার জন্ম, নবী (সাঃ) ও ইমাম আলী (আঃ)-এর কোলে যার লালন পালন। যে ইমাম হুসাইন (আঃ)-কে নবীর সন্তান বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন (সূরা আলে ইমরান) তার ইবাদতের মরতবা আমাদের ধারণার উর্ধে।
ঐতিহাসিক এর দৃষ্টিতে তিন’টি কারণ উল্লেখযোগ্যঃ
প্রথমতঃ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে দশই জিলহজ্ব কোরবানী করতে নিয়েছিলেন। ইমাম হুসাইন (আঃ) সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে নিজের কোরবানীকে ১০ই মহররম পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়তঃ ছয় মাসের কম কোরবানী হয় না। হযরত আলী আসগর (আঃ)-এর বয়স নয়ই মহররম ছয় মাস পুরো হতে একদিন বাকী ছিল সেই কারণেও একদিন সময়ের প্রয়োজন ছিল ।
তৃতীয়তঃ-কুফা নগরীতে বসে ইবনে জিয়াদ যে গভীর ষড়যন্ত্র করেছিল। কারবালায় তার পক্ষের সেনাপতিরা বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু ইমাম (আঃ) বুঝতে পেরেছিলেন, ইবনে যিয়াদ চেয়েছিল যে রাতের অন্ধকারে নবীর বংশকে শেষ করে দিলে পরে কেউই ঠিক করে বলতেই পারবে না যে নবী বংশের কে কাকে হত্যা করেছে। সে সুযোগ কিন্তু ইমাম হুসাইন (আঃ) তাদের দেননি,কারণ ইমাম হােসেন (আঃ) নবীর ওফাতের পর থেকে তাদের কার্যকলাপ একে একে সবই দেখে আসছিলেন।
- প্রথমেই তারা জালিয়াতি করে মা ফাতেমার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। অতঃপর মা ফাতেমার উপর ঘরের দরজা ফেলে। তাঁকে যখম করেছে। ধুকে ধুকে তিনি শহীদ হয়েছেন। খুনীকে লোকে ধরতে পারেনি।
- বাবা আলী (আঃ)-কে মসজিদে নামাজ রত অবস্থায় শহীদ করা হয়েছে। আসল হত্যাকারীর নাম নেপথ্যে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
- ভাই ইমাম হাসান (আঃ)-কে বিষ প্রয়োগো শহীদ করা হয়েছে। আসল খুনীকে ধরা গেল না। ভাই ইমাম হাসানের জানাযার উপর তীর নিক্ষেপ করে লাশ ও কাফনকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। তীর মারার নির্দেশকারীনি নেত্রীকে ধরা গেল না।
এখন সেই একই ষড়যন্ত্রের জাল আমার উপর বিস্তৃত হয়ে এসেছে।রাতের অন্ধকারে আমাদের মিছমার করে দিতে এসেছিল।তার গতি তিনি ঘুরিয়ে দিলেন।ইমাম হুসাইন (আঃ) চান দিনের আলোতে যুদ্ধ হােক। আমার ছেলে আলী আকবরকে-কে হত্যা করে তা লোকে চিনে নিক,আমার ভাই হাসানের ছেলে কাসেমের হত্যাকারীকে লোকে প্ৰকাশ্য দিবালোকে তাকে চিনে নিক। বােন জায়নাবের ছেলে আওন ও মুহম্মদ এর হত্যাকারী কে,আমার ছোট্ট শিশু আলী আসগরের হত্যাকারী কে,ভাই আব্বাসের কে হত্যাকারী,কে আমাকে হত্যা করে একে একে লোকে তাদের চিনে নিক। কারা আমাদের মাথা কেটে বর্শার মাথায় বিদ্ধ করে।কারা আমাদের লাশের উপর ঘোড়া দাবড়িয়ে লাশ গুলোকে ছিন্ন ভিন্ন করে।আমাদের তাঁবুতে আগুন দেয়। কারা কারা আমার ছোট্ট মেয়ে সখিনার অলংকার কেড়ে নিয়ে তার মুখে চড় মারে। আমার ছেলে জায়নুল আবেদীন,বোন বিবি জায়নাবসহ অন্যান্য বিবি ও শিশুদেরকে বন্দী করে কারবালা থেকে কুফা, আর কুফা থেকে দামেস্কে নির্যাতনসহ শহরে বাজারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেয়,লোকে তাদের পরিস্কার চিনে নিক।
এবারে লুকা ছাপা নেই,কারণ,তিনি জানতেন যে, এই কারবালার যুদ্ধ হক ও বাতিলের যুদ্ধ। আগামীতে নবী ও আহলে বায়তের অনুসরণকারীর হাজার লক্ষ লোকের সামনে প্ৰকাশ্যে যেন তাদের নাম বলতে পারে।আজ যখন আমরা মা ফাতেমা (আঃ), ইমাম আলী (আঃ), ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর আসল হত্যাকারীর নাম বলি তখন তথাকথিত আরবী বিদ্যানেরা প্রতিবাদ করে, কিন্তু কারবালার নবী বংশের হত্যাকারীর নাম বললে তখন তথাকথিত আলেম সমাজ হত্যাকারীর পক্ষ নেয়ার কোন সুযোগই যেন না পায়। আমি মনে করি, ইমাম হুসাইন (আঃ) রাতে যুদ্ধ না করে দিনের আলোতে এজিদী বাহিনীর আক্রমণের মােকাবেলা করে প্রকৃত হত্যাকারীর পক্ষ অবলম্বন করার আর সুযোগই দেন নি।
ইয়া আল্লাহ্ ! মুসলমানদের মাথায় জ্ঞান-বুদ্ধি দিন,প্রজ্ঞা দিন।সত্য ও মিথ্যা, হক ও বাতিল আলাদা করার মত সামর্থ দিন।হে আল্লাহ ! জান্নাতের সর্দার সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের প্রেমে আমাদের মশগুল করে দিন ।যাকে রাহমাতুল্লল আলামীন করে পাঠিয়েছ ও যাদের(আহলে বাইত) প্রতি ভালবাসা ফরয করে দিয়েছ, তাদের শানে বেআদবী আমার প্রাণে দারুন অঘাত হানে।ওগাে পরম পরাক্রমশালী দয়ার ভান্ডার, একটু রহমত দয়াকরে পাপীকে দাও,তোমার প্রিয় হাবিবের দরবারেও রহমত ভিক্ষা চাই, আহলে বয়েতের চরণ তলে একটু আশ্ৰয় চাই।আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ।
সিপাহসালার | ইনস্টিটিউশন | আগস্ট ২০২০| এস এইচ হক
What a great read! The humor was a nice touch. For further details, click here: READ MORE. Let’s chat about it!
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.