ইমাম মুসা বিন জাফর আল কাযিম (আ.)-এর জীবন অতিবাহিত হয় আব্বাসী শাসনের ক্রান্তিকালে। ১৬৪ হিজরিতে আল-মনসুরের পুত্র আল‑মাহদী শাসক হিসাবে একবার মদীনায় আসে এবং ইমাম মূসা আল‑কাযিমের ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে বাগদাদে নিয়ে যায় এবং কারাগারে নিক্ষেপ করে। এক বছর পর ইমামকে মুক্তি দেয়। ১৭৯ হিজরিতে আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদ মদীনা সফরে এসে মদীনার জনসাধারণের মধ্যে এই মহান ইমামের বিরাট প্রভাব ও বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে হিংসা ও শত্রুতার আগুনে জ্বলে ওঠে। মসজিদে নবীতে নামাযরত অবস্থায় ইমাম পাককে সে গ্রেফতার করে বাগদাদের কারাগারে নিয়ে চার বছর পর্যন্ত আটক করে রাখে এবং আপোষহীন এই ইমামের প্রাণনাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ইমাম মুসা বিন জাফর আল কাযিম (আ.)-কে বসরায় ঈসা ইবনে জাফর নামক এক জল্লাদের কারাগারে এক বছর বন্দী রাখা হয়। সেখানে ইমামের উত্তম চরিত্র জাফরের ওপর এমন প্রভাব রাখে যে ওই জল্লাদ হারুনের কাছে এক লিখিত বার্তায় জানিয়ে দেয় যেঃ তাঁকে আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নাও, নতুবা আমি তাঁকে মুক্ত করে দেব। এরপর হারুনের নির্দেশে ইমাম মুসা ইবনে জাফর (আ.)-কে বাগদাদে ফাযল ইবনে রাবির কাছে কারারুদ্ধ করা হয়। এর কিছু দিন পর ফাযল ইবনে ইয়াহিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয় এই মহান ইমামকে। কয়েক দিন পর সেখান থেকেও তাঁকে পাঠানো হয় কুখ্যাত জল্লাদ সানদি ইবনে শাহাকের কারাগারে।
ইমাম মুসা বিন জাফর আল কাযিম (আ.)-কে এক কারাগার থেকে বার বার অন্য কারাগারে স্থানান্তরের কারণ ছিল এটাই যে হারুন প্রতিবারই কারা প্রহরীকে নির্দেশ দিত ইমামকে গোপনে হত্যা করার। কিন্তু তাদের কেউই রাজি হয়নি এ কাজ করতে। অবশেষে সানদি ইমামকে বিষ প্রয়োগ করতে রাজি হয়। বিষ প্রয়োগের তিন দিন পর ১৮৩ হিজরির এমন দিনে তিনি শাহাদত বরণ করেন। এ সময় ইমামের বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। তাঁর লাশের সাথেও মানবিক আচরণ করা হয়নি। কারাগার থেকে বের করে তাঁর পবিত্র মৃতদেহ বাগদাদ সেতুর উপর ফেলে রাখা হয়। ইমামের ভক্ত ও অনুসারীরা তাঁর দেহ সেখানে থেকে নিয়ে গিয়ে ইরাকের কাযিমিয়াতে দাফন করেন। সেখানে ইমাম পাকের মাজার রয়েছে। মুসলমানরা মাজারে গিয়ে আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করে, অনুপ্রাণিত হয় রাসূল ও তার আহলে বাইতের পথ অনুসরণ করতে।
আবারও মহান ইমাম মুসা বিন জাফর আল কাযিম (আঃ)-এর শাহাদাত দিবসে সকল অনুসারীদেরকে জানাই আন্তরিক শোক‑সমবেদনা ও মহান সত্তার শানে পেশ করছি অশেষ দরুদ ও সালাম।
“আস সালাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা ইয়া মুসাব্-না জা’ফার, আইয়ুহাল কাযিমু, ইয়াব্-না রাসূলিল্লাহ।ইয়া আবাল হাসানে ইয়া মুসাবনা জাʼফর আইয়োহাল কাজিমো ইয়াবনা রাসূলিল্লহি ইয়া হুজ্জাতুল্লাহি আলা খালক্বেহি, ইয়া সাইয়্যেদানা ওয়া মাওলানা ইন্না তাওয়াজ্জাহনা ওয়া ওয়াস তাশফা’না ওয়া তাওয়াস্ সালনা বিকা ইলাল্লাহি, ওয়া ক্বাদ্দামনাকা বায়না য়্যাদায় হাজাতেনা। ইয়া ওয়াযিহান ইন্দাল্লাহি ইশ ফা‘লানা ইন্দাল্লাহি।”
—সৈয়দ হোসাইন ঊল হক
সিপাহসালার | ইনস্টিটিউশন | মার্চ ২০২১| এস এইচ হক
মতামত দিন