রাসূল (সাঃ) এ সম্পর্কে বলেছেনঃ-
«ثم أظلمت المشارق و المغارب، فشکت الملائکة إلی الله تعالی أنْ یکشف عنهم تلک الظلمة. فتکلم الله جلّ جلالُه کلمةً فخلق منها روحا ثُمّ تکلَّم بکلمةٍ فخلق من تلک الکلمة نورا، فأضاءت النور إلی تلک الروح و أقامها مقامَ العرش فزهرت المشارق و المغارب فهی فاطمة الزهراء و لذالک سمیت الزهراء لأنَّ نورها زهرت به السماوات
অর্থাৎ,“হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা কে এই জন্য যাহরা বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর নুরের মাধ্যমে আসমানকে নুরানি করেছেন।”
সূত্রঃ কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড‑১, বাব ২৮, হাদীস ১, পৃ.-৫৬৯/ ইসবাত আল‑হুদাত, খন্ডঃ- ২, পৃঃ- ৫৫২।
রেওয়ায়েতে আছে,জনগনের দাবী স্বীকার করে মাওলা আলী যখন খেলাফত স্বীকার করলেন তখনকার সময়ের একটা ঘটনাঃ মাওলা আলী আঃ এর কাছে এক লোক এসে বললোঃ “ইয়া আমিরুল মুমেনিন, ইয়া মুশকিল কুশা! বড় মুশকিলে পরে আপনার দারস্থ হয়েছি। সন্ধ্যার মধ্যে দশ হাজার দিরহাম না হলে আমার সব চলে যাবে। তখন আসর শেষ, মাওলা আলী বললেনঃ “ সময় তো খুবই কম, দাড়াও আমি আসছি।” মাওলা ঘরে গেলেন, একটা পুটুলি নিলেন, বললেন চলো আমার সাথে।
লোকটাকে সাথে করে নিয়ে এক ইহুদির বাসায় গেলেন। গিয়ে তাকে বললেনঃ “আমার দশ হাজার দিরহাম কর্জ চাই”। ইহুদির ব্যবসাই এটা, সে বললোঃ “আপনি আমিরুল মুমেনিন হলেও আমি বন্ধক ছাড়া কর্জ দিবোনা”। মাওলা বললেনঃ “আমি এনেছি”। ইহুদী বললোঃ কি এনেছেন? আলী জবাব দিলেনঃ “যাহরার চাদর” ইহুদীর চোখ লোভে চকচক করে উঠলো। নবী কন্যার চাদর! না জানি কতো দাম! মুখে বললোঃ “একটা চাদরের দাম তো এতো হবেনা। তবে আপনি আমিরুল মুমেনিন, আর যাহরার প্রতি আপনার ভালোবাসার কথাও আমরা জানি। আপনাকে বিশ্বাস করে টাকা দিতে পারি। মাওলা বললেনঃ “টাকা ফেরত দিতে দেরী হবে”। ইহুদী মনে মনে বলে ফেরত না দিলেও সমস্যা নাই, মুখে বলেঃ “চাদর টা নবীকন্যারই তো?” মাওলা বললেনঃ “হ্যা”। টাকা নিয়ে সাথের লোকটাকে দিয়ে বললেন যাও, এখনও কিছু সময় আছে। মাওলা আলীও চলে এলেন।
রাতে ইহুদী এলো মাওলার কাছে “চাদরটা আসলেই বিবি যাহরার?” মাওলা বললেনঃ “তুমি কারোও কাছে শুনেছো যে আলী মিথ্যা বলে?” ইহুদী বলেঃ “গুস্তাকি মাফ’ চলে যায়।সকালে আবার ইহুদী আসে। এবার বিবি বাচ্চা সমেত। মাওলা আলী বললেনঃ “আমি তো তোমাকে বলেছিই টাকা ফেরত দিতে দেরী হবে!” ইহুদী বলেঃ “টাকা নিতে আসিনি” মাওলা বলেনঃ “তাহলে কেন এসেছো?” ইহুদী কেঁদে বলেঃ “মাওলা কলেমা পড়তে এসেছি। মাওলা কাল যখন আপনি বিবির চাদর নিয়ে এলেন, আমি ভাবলাম এতো বড় নবী, আরবের সবচে ধনীর কন্যা, তার চাদর না জানি কতো দামী! আমি আর আমার বিবি নানা জল্পনা কল্পনা করে যখন চাদরটা খুললাম! হায় হায়, এত তালী দেয়া চাদরও কেউ পড়ে! মাওলা তখন আমি বুঝলাম যে মুহাম্মদ সাচ্চা নবী, টাকা-পয়সা বা ক্ষমতার জন্য নবুয়ত প্রচার করেননি। মাওলা আমি আমার পরিবার সহ এসেছি আমাদেরকে মুসলমান করে নিন”
অন্য একরেওয়ায়েতে আছেঃ একবার আলী (আঃ) জনৈক ইহুদীর কাছ থেকে সামান্য পরিমান যব ঋণ নিয়েছিলেন। ইহুদী লোকটি ঋণের পরিবর্তে কিছু বন্ধক চাইলো। হযরত আলী (আঃ) হযরত ফাতেমার পশমী চাদরটি বন্ধক রাখলেন। ইহুদী লোকটি চাদরটি নিয়ে তার কোন একটি কক্ষে রেখে দিল। রাত্রিতে কোন এক কাজের জন্যে ইহুদীর স্ত্রী ঐ কক্ষে প্রবেশ করলে দেখতে পেল যে ঘরের কোন জায়গা থেকে আলোকছটা সারা ঘরকে আলোকিত করেছে। মহিলা তার স্বামীকে জানালো যে, ঐ ঘরের ভিতরটা আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে। ইহুদী লোকটি তার স্ত্রীর কথায় বিস্ময় প্রকাশ করে। সে একেবারে ভুলেই গেছে যে সে কক্ষে হযরত ফাতেমার চাদরখানা রাখা আছে। লোকটি দ্রুত সে কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পেল যে, হযরত ফাতেমার চাদরটি থেকে নূর ভেসে আসছে। আর সে নূর দিয়েই সমস্ত ঘর আলোকিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন উজ্জ্বল চন্দ্র অত্যন্ত নিকট থেকে আলো বিতরণ করছে। ইহুদী লোকটি অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল। লোকটি বুঝতে পারলো যে, এ আলো হযরত ফাতেমার চাদরের কাছ থেকেই আসছে। সে তার আত্মীয়‑স্বজনদের খবর দিল। মহিলাটিও তার আত্মীয়দের সংবাদ পাঠালো। দেখতে দেখতে প্রায় আশিজন ইহুদী জড়ো হয়ে গেল। তারা সবাই ঘটনাটি স্বচক্ষে অবলোকন করলো। পরিশেষে তারা সবাই কলেমা পাঠ করে ইসলামে দীক্ষিত হলো।
গ্রন্থসূত্রঃ বিহারুল আনওয়ার, ৪৩তম খণ্ড, পৃ. ৪০ এবং উক্ত রেওয়ায়াতের সার‑সংক্ষেপ ‘মানাকিবে শাহরে আশুব’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
হায় হায়! দেখো দুনিয়া দেখো। যে বিবির চাদর দেখে ইহুদি তার ধর্ম বদলে ফেলে, সেই বিবির সাথে মুসলমান কেমন আচরণ করেছে! এমন কস্টই দিয়েছে যে মাত্র আঠারো বছরে বুড়ি হয়ে গেছেন মা আমার! ভাবতে পারেন? প্রত্যেকের ঘরেই মা বোন আছেন। ভাবুন তো আপনার মা কে! বা আপনার বোন কে! দেয়াল ধরে ধরে হাটছে, পাঁজর ভাঙ্গা যে কারনে শুধুমাত্র একপাশ ফিরে শুতে হচ্ছে, আসলে কোন পাশই ফিরতে পারেননি বিবি! বাম পাঁজর ভাঙ্গা, ডান হাত ভাঙ্গা! কোনদিকে ফিরবেন?এমন নির্মন অত্যাচার এমন ভয়াবহ জুলুম কিন্তু কোন ইহুদি বা কোন অন্য ধর্মের লোকে করেনি, করেছে বড় বড় রাজি’আল্লাহ খ্যাত মুনাফেক। লানতুল্লাহে আলা কওমে জ্বালেমিন। কেয়ামত পর্যন্ত লানত বর্ষিত হোক বিবি যাহরা সাঃ আঃ এর হত্যাকারী বনু উমাইয়্যার উপর, সেই সাথে তাদের পৃষ্ঠপোষক ও এজেন্টদের উপর। আলাহুমা লা‘আন কাতালাল ফাতিমাতুয যাহরা।
—ভাব পাগলা আব্দুল্লাহ
সিপাহসালার | ইনস্টিটিউশন | জানুয়ারি ২০২১| এস এইচ হক
মতামত দিন