কারবালার ময়দানের কাছে যখন মাওলা হুসাইন (আঃ)-এর কাফেলা পৌছায়,তখন বিবি জয়নাব (সাঃআঃ) বলেন মাওলা হুসাইন কে ভাইয়া এখানে থেমো না, এখানের মাটি থেকে আমি তোমার রক্তের গন্ধ পাচ্ছি! তখন মাওলা তার বোন কে বলেন এটাই সেই জায়গা। তখন মাওলা ওখা্নকার গোত্র (বনু আসাদ) প্রধানকে ডেকে জমি কিনে নেয়ার কথা বলেন,কিন্তু বনু আসাদের গোত্র প্রধান জানান ওই জমি মাওলা আলী আঃ আগেই কিনে রেখেছেন। কিন্তু মাওলা হুসাইন আবারও সেই জমি কিনে নিতে চান, মুল্য নির্ধারন হয় ষাট হাজার দিনার। অর্ধেক দেন বিবি জয়নাব (সাঃআঃ) আর অর্ধেক দেন মাওলা হুসাইন (আঃ)।কিন্তু নিজেদের কারো নামে কিনেন না, দুজনেই সে জায়গা আলী আকবরের নামে কিনেন (এ জন্যই এর আরেক নাম জায়গীরে আলী আকবর)।
আলী আকবর (আঃ)তা আবার বনু আসাদ গোত্রের নামেই দিয়ে দেন এই শর্তে যে তাদের কবর জিয়ারত করতে আসা লোকদের যেন যত্ন করা হয়।তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা চাষ করার বাহানায় এসো,এসে আমাদের লাশ কবর দিও।” হায় হায়!
কারবালার নৃশংস হত্যাকান্ড শেষ। তিন দিন পার হয়ে গেছে, পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো এক খৃস্টান দল। তারা হঠাত দূর থেকে ভেসে আসা খুব সুন্দর একটা ঘ্রান পায়। তারা কৌতূহলী হয়ে এগুতে থাকে ঘ্রানের দিকে। সামনে এগিয়ে দেখে একটা খোলা প্রান্তর। সেদিক থেকেই আসছে ঘ্রান টা। কিছুদুর অগ্রসর হতেই দেখে উল্টোদিক থেকে আরেকটা দল আসছে, তারা ছিলো বনু আসাদ গোত্রের। তারা একই সময়ে সেখানে পৌছায়। গিয়ে দেখে কয়েকটা লাশ পরে আছে। এর মধ্যে একটা লাশের নয়টা টুকরা। সেটা থেকেই সুগন্ধে চারদিক মাতিয়ে রেখেছে। খ্রিস্টান দল লাশ গুলিকে কবরস্থ করতে চায়, বনু আসাদ গোত্রের লোকেরা বলে আমরা দাফন করবো, আমরা এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত! আর ওরা (খৃস্টান দল) বলে আমরা দাফন করবো। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ওরা তলোয়ার বেড় করে ফেলে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে। এমন সময়ে দেখে একজন লোক আসছে তার হাতে পায়ে বেড়ি, খুব কষ্ট করে নিজেকে টেনে নিয়ে আসছে। তিনি আর কেউ নন, নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে বেচে যাওয়া জয়নুল আবেদিন (আঃ) তিনি দুই দলের মাঝে এসে বললেনঃ “হে লোকসকল! তোমরা আর লড়াই কোরোনা। এই লড়াই আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।এরা আমার নিজের লোক, আমিই এদের দাফন করবো।” বনু আসাদ ও অন্যান্য দের সাহায্যে দাফন কাজ চলতে থাকে। এমতাবস্থায় ইমাম জয়নাল আবেদিন (আঃ) সেই টুকরো টুকরো লাশের টুকরো গুলি এক জায়গায় আনতে থাকে,একেকটা টুকরা অনেক দূরে দূরে পরেছিলো।হাতে পায়ে শিকল পড়া অবস্থায় জয়নাল আবেদিন একেক টুকরা আনেন আর বাবা বাবা বলে চিৎকার করে কাদেন। তা দেখে বনু আসাদ গোত্রের সবচে বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি বললেনঃ “হে মওলা এটা আপনার বাবার ( মাওলা হুসাইন আঃ) লাশ নয়। তিনি তার জীবদ্দশায় আমাকে অনেকবার বুকে জড়িয়ে ধরেছেন,তার বুক আমি ভালো করেই চিনি,তার বুকে কখনই বাড়তি মাংসপিণ্ড(টিউমার) ছিলো না।আমার মনে হয় আপনি ভুল করছেন,ইনি মাওলা হুসাইন আঃ নন।” ইমাম জয়নাল আবেদিন (আঃ) তখন আরও জোরে বিলাপ করে বললেনঃ “আল্লাহর কসম এ কোন বাড়তি মাংসপিণ্ড নয়, এ আমার ভাই আলী আসগর!” হায় আসগর! হায় আসগর! ছোট্ট আসগর! ছয় মাসের হায়াতে জিন্দেগীতে ঘর কি জিনিস দেখলো না। সফরে সফরেই শেষ হয়ে গেলো তার জীবন। আশুরার দিনে তার বয়স হয়েছিলো ঠিক ছয় মাস। লানতুল্লাহে আলা আদাই’হিম আজমাঈন।
—ভাব পাগলা আব্দুল্লাহ
সিপাহসালার | ইনস্টিটিউশন | আগস্ট ২০২০| এস এইচ হক
মতামত দিন