প্রবন্ধ

হৃদয়ের কান্না এবং আমাদের প্রত্যাশা

শ্রদ্ধেয় সম্মানিত আলেম সমাজ,অনেক হয়েছে।এবার থামুন।আপনাদের অহমিকা,একগুঁয়োমিতে আহত বিপর্যস্থ আমাদের অন্তর। সংবরণ করতে পারছিনা আমাদের হৃদয়ের কান্না।অনেক পরিশ্রম করে বছরের পর বছর পড়াশুনা করে জ্ঞানার্জন করেই আপনারা হয়েছেন একেকজন জ্ঞানী গুণী আলেম। আপনারা যে সমস্ত কিতাবাদি পড়ে আলেম অভিধায় ভূষিত হয়েছেন সেই সমস্ত কিতাবাদির নাম ও জানেনা বেশীরভাগ মুসলমানগণ। অনেকে জানার প্রয়োজন বোধ ও করেনা। কেননা,যেকোন সমস্যা কিবা মাসঅালা- মাসায়েল জানার প্রয়োজনে অামরা আপনাদের কাছেই ছুটে যাই। আপনাদের সুন্দর সাবলীল সদোত্তরে আমরা খুঁজে পাই পরম প্রশান্তি।অথচ সেই আপনারাই আজ নিজেদেরকে কোন দিকে ধাবিত করছেন ভেবে দেখেছেন কি? ভুলে গেছেন বুঝি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ-“নিশ্চয় আমি আমার উম্মতের জন্য কোন কিছুরই ভয় করিনা,পথভ্রষ্ট আলেমগণ ব্যতিত।”(মুসনাদে আহমদ-১৬৪৯৩)।

এতে কি একটু ও কাঁপেনা আপনাদের অন্তর। এমন এক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে একের প্রতি অন্যের বিষোদগার,অসহনশীলতা,অশ্রদ্ধা উপস্থাপন করছেন করছেন সর্বসাধারণের সামনে যা দেখে রীতিমত শিউরে উঠছি আমরা। কেননা,পবিত্র আহলে বায়াতে আতহার (আঃ) গণ আমাদের হৃদপিন্ড। পাক পাঞ্জাতন আমাদের ঈমান।অথচ আমাদের ঈমানের প্রতি মিথ্যা আরোপ করে দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা কি কোন আলেমের কাজ। পবিত্র কালামে পাকের সূরা আহযাবের আয়াতে তাতহীরে যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে তাঁদের পবিত্রতার কথা সেখানে কেমন করে আপনারা এমন একটি নিকৃষ্ট বিষয়ের সাথে মাওলা আলী (আঃ) এর সম্পৃক্ততার কথা বর্ণনা করতে পারলেন।আবার এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একে অন্যকে যতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা যায় তার কিছুই বাদ রাখছেন না। নাম বিকৃতি করা থেকে শুরু করে একে অন্যকে বিভিন্নভাবে উপহাস,তুচ্ছ‑তাচ্ছিল্য করেই যাচ্ছেন। অথচ অাপনাদেরকে অভিহিত করা হয় নায়েবে নবীরুপে। নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,-“মুমিন খোটা দানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীলভাষী হয়না।”(মুসনাদে আহমদ-৩৮২৯)।

মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেছেন,“মুমিনগণ, কেউ যেন কাউকে উপহাস না করে।কেননা,সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে।এবং কোন নারী অপর নারীকে ও যেন উপহাস না করে।কেননা, সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারুপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।(গালি দিওনা)।কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত।যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই জালেম।”-( সূরা আল হুজরাত‑৪৯,১১)।

তো আজ আপনাদের অনেকের মাঝেই তো দেখতে পাচ্ছি উল্লেখিত বিষয়গুলো বিদ্যমান।কাকে কি বলবো অামরা।ওহে জ্ঞানী-গুণীজন,কোথায় যাবো আজ আমরা মুসলমান।ক্ষত‑বিক্ষত করে দিয়েছেন আমাদের অন্তর।আপনাদের মুখের ভাষ্য,(সাবধান মুসলমান,জবানকে হেফাজত রেখো।সাহাবীয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন সাহাবীর বিরুদ্ধে কখনোই কোন কটু বাক্য উচ্চারণ করো না।কেননা,তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের কাছে আকাশের নক্ষত্র সমতুল।) অার তাই বুঝি কোন একজন সাহাবীকে মুমিনের মামার আসনে অধিষ্ঠিত করতে অনেকেই তৎপর।অথচ তিনি সাহাবী হলে ও তুলাকা হিসেবে গন্য।যাই হোক,আপনাদের নসীহত বাক্য শুনে শুনে অনেকেই তা যথাযথ মেনে চলার চেষ্টা করেন।স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগে,মাওলা আলী (আঃ) তিনি ও তো সাহাবী।শুধো সাহাবীই নন,প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাতো ভাই ও জামাতা,পাক পাঞ্জাতনের একজন,পবিত্র আহলে বায়াতে আতহারের অন্যতম সদস্য।যার সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আমি যার মাওলা,আলী তার মাওলা”/ আলী যেদিকে সত্য সেদিকে”/“যে আলীর বিরোধিতা করবে সে মুনাফিক।” যার চেহারা দেখা ও স্বরণ করাটা ও ইবাদতের অর্ন্তভূক্ত।সেই তাঁকেই অভিযুক্ত করেছেন এমন একটি বিষয়ের সাথে যা সবসময়ই ছিলো ঘৃনিত,নিন্দিত।এমনকি অনেক সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ) গণ ও ইসলাম গ্রহন করার পূর্ব থেকেই প্রচন্ড ঘৃনা করতেন।আর সেই প্রচন্ড ঘৃনিত কাজটির সাথে সম্পৃক্ত করে দিলেন আবু তুরাব মাওলা আলী (আঃ) কে।পবিত্র কাবাগৃহে যার শুভাগমন,ধরার বুকে যার প্রথম দর্শন নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র চেহারা মোবারক।সেই পুতঃপবিত্র মাওলা আলী (আঃ)কে উক্ত ঘৃনিত বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত করা কি হতে পারে কোন মুমিনের কাজ?প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী অনুযায়ী সে কি মুনাফিক নয়। যেখানে কোন একজন সাহাবীর প্রতি ও কটু বাক্য উচ্চারণ না করতে আপনারা কঠোর হুঁশিয়ারী প্রদান করেন,সেখানে শেরে খোদা মাওলা আলী(আঃ) এর শানে কি করে এমন জঘন্য, নিন্দিত বিষয়টির উপস্থাপন করতে পারলেন।যে পবিত্র মুখের প্রথম খাবার ছিলো নুরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুতঃপবিত্র মুখের লালা,সেই পবিত্র মুখ কি কখনো স্পর্শ করতে পারে এমন একটি অপবিত্র নিকৃষ্ট পানীয়।বিবেকের বাতায়ন এতটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে অাপনাদের।অনেক হয়েছে।এবার নিজেরাই নিজেদেরকে সংশোধিত করে নিন।রাসুল প্রেমিকদের হৃদয়ের অাগুন দ্রুত নির্বাপিত করুন।আপনাদের অদূরদর্শিতায় বসে থাকবেনা রাসুল প্রেমিক জনতা।আর তাই অতি দ্রুত
আপনাদের বোধোদয় হোক।পবিত্র অাহলে বায়াতে আতহার (আঃ) গণের শান‑মান, সম্মান ও ভালোবাসাকে সবকিছুর উর্দ্ধে তুলে ধরে নিজেদের জ্ঞান ‑গরিমার সম্মানকে অক্ষুন্ন রাখুন।এটাই প্রত্যাশা।

হে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন,আমাদেরকে তোমার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার পরিজনদের মহব্বতের চাদরে আবৃত করো।তাঁদের প্রেমে রাখিও মোদের অটুট,অটল,অবিচল।কবুল করো ইয়া পাক পরওয়ার রাব্বুল আলামিন।আমিন।

—সৈয়দা হাবিবুন্নেছা দুলন

1 Comment

  • খুব ভালো লাগলো বিষয়গুলা ইতিহাস
    আজকাল তো লোকজন ইতিহাস পড়া ছেড়ে দিয়েছে, আফসোসের বিষয়
    একজন আরেকজনের মুখের কথা শুনে কথা বল জানতে চায় না শিখতে চাই না পড়তে চাই না,

মতামত দিন