আলী (আঃ)-এর জীবনের শেষ পাতা।
“আল্লাহুম্মাল আন কাতালাতাল আমীরুল মোমেনীন”
প্রিয় পাঠক, আমরা সবাই জানি আব্দুর রহমান ইবনে মুলজেম (লানাতুল্লাহ) ইমাম আলী আঃ এর হত্যাকারী। ভালো বা মন্দ সর্ব ধরনের কাজের পিছনে কোন একটি কারন হয়ে থাকে। হত্যাকারী হত্যা করেছে শুধু এতটুকু জেনে যাওয়াটাই শেষ নয় বরং কেন করেছে উদ্দেশ্য কি ছিলো কারা জড়িত ছিলো এটাও জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা গর্বিত ও আল্লাহ তা‘আলা কে শুকরিয়া জানাই কারন আমরা তার অনুসারী যার জন্ম হয়েছে পবিত্র কাবাঘরে ও শাহাদাত হয়েছে ইবাদতের মেহরাবে।
- হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারী কারা।
- ষড়যন্ত্রকারীর উদ্দেশ্য।
- ইবনে মুলজেমের কুত্বামকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব।
- কুত্বামের ইবনে মুলজেমকে দেনমোহরের দাবি। (কুত্বাম খারেজী ছিলো ও কুফার সুন্দরীতম নারী)।
- ইমাম আঃ তার সংগীদের নিজেই নিজের মৃত্যুর সংবাদ প্রদান।
- শাহাদাতের পূর্বে নিজ কন্যার ঘরে ইমাম আঃ এর ইফতার করা।
- শাহাদাতের রাতে ইমাম আলী আঃ
- শাহাদাতের পরে ইমাম হাসান আঃ এর খোৎবা।
নাহরাওয়ানের যুদ্ধ সমাপ্ত হলাে এবং আলী (আঃ) কূফায় প্রতাবর্তন করলেন । কিন্তু নাহরাওয়ানে যে কিছু সংখ্যক লােক তাওবাহ্ করেছিলাে তারা পুনরায় কানাকানি শুরু করলাে এবং বিরােধিতা ও ফিতনাহ্ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলাে। আলী (আঃ) তাদের জন্য বার্তা পাঠালেন এবং তাদেরকে শান্ত হওয়ার জন্য আহবান জানালেন, আর হুকুমাতের সাথে বিরােধিতা থেকে বিরত রাখলেন । কিন্তু তিনি যখন তাদেরকে সুপথে আনার ব্যাপারে নিরাশ হলেন তখন শক্তি দ্বারা ঐ সুযােগসন্ধানী ও অবাধ্যাচারী দলকে নাস্তানাবুদ করে দিলেন। ফলে তাদের কেউ কেউ নিহত বা আহত হলাে আর কেউ কেউ পলায়ন করলাে । এ সকল পলাতক খারেজীদের মধ্যে একজন হলাে মুরাদ গােত্রের আবদুর রহমান ইবনে মুলজেম, যে মক্কায় পালিয়ে যায়।
পলাতক খারেজীরা মক্কাকে তাদের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করে এবং তাদের মধ্য থেকে তিনজন –
১। আবদুর রহমান ইবনে মুলুজেম মুরাদী,
২। বারাক ইবনে আবদুল্লাহ্ তামীমী ও
৩। আমর ইবনে বাকর তামীমী।
এক রাতে একত্রিত হয় এবং তখনকার পরিবেশ‑পরিস্থিতি ও গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে আলােচনা করে তারা নাহরাওয়ানের কথা ও সেখানে তাদের নিহতদের কথা স্মরণ করে। অবশেষে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এসব রক্তপাত ও ভ্রাতৃহত্যার পিছনে কারণ হলেন আলী (আঃ), মু‘আবিয়া ও আমর ইবনুল আস।
এ তিনজনকে সরিয়ে দেয়া গেলে মুসলমানরা তাদের মুক্তির পথ খুঁজে পাবে এবং তাদের পছন্দমতাে একজনকে খলীফাহ্ নির্বাচিত করবে। কাজেই এরা তিনজন একত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ হলাে এবং কসম খেলো যে, তাদের একেক জন ঐ তিনজনের একেক জনকে হত্যা করবে ।
ইবনে মুলজেম “আলী (আঃ)” কে হত্যা করবে,আমর ইবনে বাকর “আমর ইবনুল আস” কে এবং বারাক ইবনে আবদুল্লাহ্ “মুআবিয়া“কে হত্যা করার অঙ্গীকার করলাে।
এই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা গােপনভাবে মক্কায় বসে চূড়ান্ত করা হয়। আর তিন জনই যাতে একই সময় তাদের লক্ষ্য হাসিল করতে সক্ষম হয় এ উদ্দেশ্যে পবিত্র রমযান মাসের ১৯ তারিখের রাতটিকে নির্ধারণ করে। অতঃপর প্রত্যেকেই স্বীয় দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট শহর অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যায়।
আমর ইবনে বার ‘আমর ইবনুল অাসকে হত্যার জন্য মিসরে, বারাক ইবনে আবদুল্লাহ্ মুআবিয়াকে হত্যার জন্য শামে আর ইবনে মুলজেম আলী (আঃ) কে হত্যার জন্য কূফার পথে রওয়ানা হয়।
বারাক ইবনে আবদুল্লাহ্ শামের মসজিদে গেলাে এবং প্রতিশ্রুত রাতে নামাযের প্রথম সারিতে দাঁড়ালো। অতঃপর মুআবিয়া যখন সিজদায় মাথা রাখল তখন সে তলোয়ার দ্বারা তাঁর ওপর আক্রমণ চালালাে। কিন্তু মানসিক উদ্বেগ আর হস্তপদ কম্পনের কারণে তার আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হলাে এবং তার তলােয়ার মুআবিয়ার মস্তকের পরিবর্তে তার উরুতে আঘাত হানলা। এতে মু‘আবিয়া মারাত্মকভাবে আহত হয়।
তাকে দ্রুত গৃহে আনা হলাে এবং আঘাতকারীকে তার সামনে হাজির করা হলে মু‘আবিয়া তাকে জিজ্ঞেস করল, “কী করে তুমি এ কাজের সাহস করলে?” সে বললাে,“আমীর আমাকে ক্ষমা করলে একটি সুসংবাদ শােনাবো ।” মু‘আবিয়া বলল, “কী তােমার সেই সুসংবাদ?” বারাক বললাে, “আলী আজ রাতে আমার এক সহযােদ্ধার হাতে নিহত হবে আর যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে আমাকে আটকে রাখুন যতক্ষণ না ঐ সংবাদ এসে পৌছে। আর যদি নিহত না হয় তাহলে আমি অঙ্গীকার করি আমি গিয়ে তাকে হত্যা করবাে এবং পুনরায় আপনার কাছে ফিরে আসবাে।”
মু‘আবিয়া তাকে আলী (আঃ)-এর হত্যার খবর পৌছার পর্যন্ত আটক করে রাখলেন। অতঃ যখন এ খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হলেন তখন তাকে মুক্ত করে দিলেন। অন্য এক বর্ণনা মােতাবেক তাকে ঐ সময়ই হত্যা করা হয়। চিকিৎসরা মু‘আবিয়ার ক্ষত পরীক্ষা করে বললাে, “আমীর যদি আর কোনাে সন্তান গ্রহণ না করেন তাহলে ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যাবে । নতুবা ক্ষতস্থানে আগুনের সেঁক দিতে হবে । মু‘আবিয়া আগুনের সেঁক দেয়া থেকে ভয় পেলেন এবং আর বংশ বিস্তার না হলেও ওষুধের চিকিৎসাতেই সম্মত হলেন। আর বললেন, “ইয়াযীদ ও আবদুল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।”
ওদিকে আমর ইবনে বাকর ঐ রাতেই মিসরে মসজিদে উপস্থিত হলাে এবং প্রথম সারিতে নামাযে দাড়ালাে। ঘটনাক্রমে ‘আমর ইবনুল আস সে রাতে খুবই অসুস্থ ছিল, ফলে মসজিদে আসতে সক্ষম ছিল না। তিনি নিজের পরিবর্তে খারেজাহ্ ইবনে হুনাইফাহ কে নামায আদায়ের জন্য মসজিদে পাঠান। আমর ইবনে বাকর তাকেই ‘আমর ইবনুল আস মনে করে হত্যা করে। সে যখন তার ভুল বুঝতে পারলাে তখন বললাে “আমি আমরকে হত্যা করতে ইচ্ছা করলাম আর আল্লাহ্ খারেজাকে হত্যা করতে ইচ্ছা করলেন।
আব্দুর রহমান ইবনে মুলজেমের কুফায় আগমন ও ইবনে মুলজেমকে কুত্বামের বিয়ের শর্ত, দেনমোহরে ইমাম আলী আঃ কে হত্যার দাবি।
হিজরী ৪০ সালের ২০শে শাবান তারিখে কুফায় আসে আবদুর রহমান ইবনে মুলজেম মুরাদী। কথিত আছে যে, আলী (আঃ) যখন তার কূফায় আগমনের খবর পেলেন তখন বললেন “সে কি পৌছেছে? নিশ্চয় তা ছাড়া আমার জন্য আর কিছু বাকি নেই। আর এখন তারই সময়।”
ইবনে মুলজেম আশআস ইবনে কায়সের গৃহে মেহমান হয়। সে একমাস সেখানে অবস্থান করে এবং এ সময় প্রত্যেক দিন সে তার তলােয়ার ধার দিয়ে প্রস্তুত রাখতাে।
সেখানে সে কুত্বাম নামক এক যুবতীর সাক্ষাত লাভ করলাে যে ছিলাে একজন খারেজী । ইবনে মুলজেম তার প্রেমে পড়ে যায়। কুত্বামের ভাই নাহরাওয়ানে নিহত হয়েছিলাে। কুত্বাম কূফার সুন্দরীতম নারী ছিলাে। ইবনে মুলজেম তাকে দেখে সব কিছু ভুলে যায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়।
কুত্বাম বললাে- আমি সাগ্রহে তােমাকে স্বীয় স্বামী হিসাবে গ্রহণ করবাে তবে শর্ত হলাে, আমার দেনমােহর আমার ইচ্ছা অনুযায়ী ধার্য করতে হবে।
আবদুর রহমান ইবনে মুলজেম বললাে- বলাে দেখি তােমার ইচ্ছা কী?
কুত্বাম যেহেতু তার প্রেমিককে আত্মসমর্পিত দেখতে পেলাে কাজেই সে কঠিন শর্তের দেনমােহর দাবি করলাে। দাবিগুলো হচ্ছে-
- তিন হাজার দেরহাম
- একটি গােলাম
- একটি দাসী আর
- আলী ইবনে আবি তালেবকে হত্যা।
ইবনে মুলজেমঃ তুমি যখন আলী ইবনে আবি তালেবকে হত্যার প্রস্তাব করছাে তখন আমার মনে হয় না যে, তুমি আমাকে চাও!
কুত্ত্বামঃ তুমি তার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালাবার চেষ্টা করাে। সে ক্ষেত্রে তাকে যদি হত্যা করতে পারাে তাহলে উভয়ে আমরা প্রতিশােধও গ্রহণ করলাম এবং সুখের জীবনও লাভ করবাে। আর যদি এ পথে নিহত হও তাহলে পারলৌকিক পুরস্কার পাবে এবং আল্লাহ তােমার জন্য যা কিছু সঞ্চিত রেখেছেন সেটা পার্থিব নে‘আমতসমূহের চেয়ে উত্তম ও স্থায়ী।
ইবনে মুলজেমঃ জেনে রেখাে, আমি এ কাজ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য কূফায় আসিনি।
কুত্বামের দেনমােহর সম্পর্কে কবি বলেনঃ
“আমি কুত্বামের দেনমােহরের ন্যায় কোনাে দেনমােহর দেখি নি/ আরব-অনারব নির্বিশেষে কোনাে ভদ্রলােক যার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আর সে দেনমােহর হবে তিন হাজার দেরহাম, একটি গােলাম, একটি দাসী/ আর আলী ইবনে আবি তালেবকে ক্ষুরধার তরবারিতে হত্যা আলীর চেয়ে কোনাে মূল্যবান দেনমােহর নেই যতই দামি হােক না কেন। আর ইবনে মুলজেম কর্তৃক হত্যার চেয়ে ঘৃণ্য কোনাে হত্যাপরাধ নেই।”
কুত্বাম বললাে-
“আমি আমার গােত্র থেকে একদল লােককে তােমার সঙ্গে দেবাে যারা এ কাজে তােমাকে সাহায্য করবে।”
সে তার কথামতাে কাজও করলাে এবং ওরদান ইবনে মুজালেদ নামক কুফার আরেক জন খারেজীকে তার সঙ্গে দিলাে যে ঐ তাইমুর রুবাব গােত্রেরই লােক ছিলাে।
ইবনে মুলজেম আলী (আঃ) কে হত্যা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার পর আজা’ গােত্রের শাবী ইবনে বারাহ্ নামক আরেক জন খারেজীর সাথে সাক্ষাত করলাে এবং তাকে বললাে, “তুমি কি পার্থিব ও পরকালের মর্যাদা চাও?” সে বললােঃ “তােমার উদ্দেশ্য কী?” ইবনে মুলজেম বললাে, “আমাকে আলী ইবনে আবি তালেবকে হত্যার কাজে সাহায্য করাে।” সে বললাে, “তােমার মা তােমার জন্য শােকে বসুক; কেন, তুমি কি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আমলে তাঁর আত্মত্যাগ ও সেবার ইতিহাস জানাে না?”
ইবনে মুলজেম বললাে, “ধিক্ তােমাকে; তুমি কি জানাে না যে, সে আল্লাহর কালামের ব্যাপারে মানুষের সালিসীতে বিশ্বাস করে আর আমাদের নামাযী ভাইদেরকে হত্যা করেছে? কাজেই, আমাদের দ্বীনী ভাইদের হত্যার বদলায় তাকে হত্যা করবাে।” শাবীব মেন নিলাে।
ইবনে মুলজেম একটি তলােয়ার সংগ্রহ করলাে এবং তাতে মারাত্মক বিষ মাখালাে। অতঃপর সে প্রতিশ্রুত ক্ষণে কূফার মসজিদে উপস্থিত হলাে। তারা দু’জন সেখানে ১৩ই রামাযান শুক্রবার ই’তিকাফরত কুত্বামের সাথে সাক্ষাত করলাে। সে তাদেরকে বললাে যে, মাজাশা ইবনে ওয়ারদান ইবনে আলক্বামাহও তাদেরকে এ কাজে সহযােগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
কাজ সম্পাদন করার সময় হলে কুত্বাম তাদের মাথায় রেশমী কাপড় বেঁধে দিলাে । তিনজনই তাদের তলােয়ার হাতে তুলে নিলাে এবং সারা রাত মসজিদে রাত্রিযাপনকারীদের সাথে কাটিয়ে দিলাে। তারা মসজিদের বাবু সিদাহ্’ নামে পরিচিত একটি দরজার পাশে বসে থাকলাে।
শাহাদাতের পূর্বে ইমামের নিজের সংগীদেরকে নিজ মৃত্যুর সংবাদ দেওয়া, কন্যা উম্মে কুলসুমের ঘরে ইমামের শেষ ইফতার, পূত্র ইমাম হাসান আঃ কে ইংগিতে নিজ মৃত্যুর ভবিষৎবাণী করা, ইবনে মুলজেমের নামাজরত অবস্থায় ইমামের মস্তিষ্কে বিষাক্ত তালোয়ার দ্বারা আঘাত।
শাহাদাতের রাতে ইমাম (আঃ)
ইমাম (আঃ) ঐ বছর রামাযান মাসে সব সময় তাঁর শাহাদাতের সংবাদ দিতেন। এমনকি মাসের মাঝামাঝি একদিন যখন তিনি মিম্বারে বসে ছিলেন, স্বীয় পবিত্র দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলেন, । “নিকৃষ্টতম ব্যক্তি আমার মস্তকের রক্ত দ্বারা এ দাড়িগুলােকে রঙিন করে দেবে।” তিনি আরাে বলেন, “রামাযান মাস এসেছে। এটি হলাে মাসসমূহের সর্দার। এ মাসে শাসনকার্যে পরিবর্তন সূচিত হয় । জেনে রেখাে, এ বছর তােমরা একই কাতারে (আমীর ছাড়াই) হজ্ব পালন করবে। আর এর চিহ্ন হলাে এই যে, আমি তােমাদের মাঝে নেই। ইমাম আলী (আঃ)-এর সঙ্গীরা বলতেন, “তিনি এসব কথা দ্বারা স্বীয় মৃত্যুর সংবাদ প্রদান করছেন, কিন্তু আমরা বিষয়টি বুঝতে পারছি না।”
এ কারণে তিনি তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলােতে প্রত্যেক রাতে তাঁর একেক জন সন্তানের ঘরে যেতেন। এক রাতে তাঁর পুত্র হাসান (আঃ) এর কাছে এবং আরেক রাতে অপর পুত্র হুসাইন (আঃ) এর কাছে। আবার আরেক রাতে তাঁর কন্যা হযরত যায়নাবের স্বামী আবদুল্লাহ ইবনে জাফারের ঘরে ইফতার করতেন। তিনি তিন লােকমার বেশি খাবার গ্রহণ করতেন না। তার এক সন্তান তার কম খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে ইমাম (আঃ) বললেন, “আল্লাহর নির্দেশ এসে যাচ্ছে, তাই আমি চাই, আমার পেট শূন্য থাকুক। একরাত কিম্বা দুই রাতের বেশি অবশিষ্ট নেই।”
আঘাতপ্রাপ্তির পূর্বরাতে তিনি ইফতারের জন্য তাঁর কন্যা উম্মে কুলছুমের ঘরে মেহমান হলেন। ইফতারের সময় তিনি তিন লােকমা খাবার গ্রহণ করলেন, অতঃপর ইবাদতে নিমগ্ন হলেন ।
রাতের প্রথম ভাগ থেকে ভাের অবধি তিনি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটালেন । কখনাে বা আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন এবং তারকাসমূহের গতিপথ লক্ষ্য করছিলেন। যতই সুবহে সাদেক নিকটবর্তী হচ্ছিলাে ততই তাঁর উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছিলাে, আর তিনি বলছিলেন-
“আল্লাহর শপথ, না আমি মিথ্যা বলছি, আর না যিনি আমাকে খবর দিয়েছেন তিনি মিথ্যা বলেছেন, এই হলাে “সেই রাত যখন আমার শাহাদাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।”
এ প্রতিশ্রুতি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে দিয়েছিলেন। আলী (আঃ) স্বয়ং বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর এক ভাষণে মাহে রামাযানের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার সময় ক্রন্দন করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছেন কেন ? তিনি বললেন, এ মাসে তােমার ওপর যে পরিণতি নেমে আসবে সে জন্য।”
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন-
আমি যেন দেখছি, তুমি নামাযে ব্যস্ত রয়েছে, আর দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্টতম লােকটি — যে সামুদ গােত্রের উস্ত্রী হত্যাকারীর সমতুল্য, উঠে দাঁড়ালাে এবং তােমার মস্তকের ওপর আঘাত হানলাে এবং তােমার দাড়িকে রক্তে রঙিন করে দিলাে।
অবশেষে সে ভয়াল রাত শেষ হলাে এবং আলী (আঃ) ভােরের আঁধারে ফজরের নামায পড়ার জন্য মসজিদ অভিমুখে রওয়ানা হলেন। তার বাড়ীতে যে সব পাতিহাঁস ছিলাে সেগুলাে তাঁর পিছু নিলাে এবং তার কাপড় ধরে ঝুলে পড়লাে । কেউ কেউ সেগুলােকে সরিয়ে দিতে চাইলাে ।
কিন্তু ইমাম (আঃ) বললেন-
“তাদেরকে তাদের নিজেদের অবস্থায় ছেড়ে দাও। অবশ্যই এরা ফরিয়াদকারী, যার পরে রয়েছে গভীর শােক।” ইমাম হাসান (আঃ) বললেন, “এ কোন ধরনের অশুভ ভবিষ্যদ্বাণী যা আপনি ইঙ্গিত করছেন?” তিনি বললেন, “হে পুত্র ! আমি অশুভ ভবিষ্যদ্বাণী করছি না। বরং আমার মন সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আমি নিহত হবাে।”
উম্মে কুলসুম ইমাম (আঃ)- এর কথায় ব্যথিত হলেন এবং বললেন, “আপনি নির্দেশ দিন। জা‘দাহ্ মসজিদে যাক এবং লােকদের সাথে নামায আদায় করুক।” ইমাম বললেন, “আল্লাহর ফয়সালা থেকে পালানাে যায় না।” অতঃপর তিনি তার কোমরের বাঁধনকে শক্ত করে বেঁধে নিলেন এবং গুগুন্ করে নিমােক্ত দ্বিপদী দু’টি আবৃত্তি করতে করতে মসজিদের পানে চললেন।
নিজ কোমরকে মৃত্যুর জন্য শক্ত করে বাঁধাে
কারণ মৃত্যু তােমার সাথে সাক্ষাত করবেই
আর মৃত্যু থেকে চিৎকার‑ফরিয়াদ করাে না
যখন সে তােমার দিকে ধেয়ে আসে…
ইমাম (আঃ) মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং নামাযে দাঁড়ালেন। তাকবীরাতুল ইহরাম দ্বারা নামায শুরু করে কিরাআতের পরে সিজদায় গেলেন। এমন সময় ইবনে মুলজেম চিৎকার করে বলে উঠলো (বিচার‑ফয়সালা ও হুকুমতের অধিকার একমাত্র আল্লাহর, তােমার নয়, হে আলী) বলে ইমাম (আঃ)-এর পবিত্র শির মােবারকের ওপর বিষাক্ত তলােয়ারের আঘাত হানলাে।
ঘটনাক্রমে তলােয়ার দিয়ে সেখানে আঘাত হানলাে যেখানে ইতিপূর্বে ‘আমর বিন আবদূদ‑এর তলােয়ার আঘাত হেনেছিলাে। ফলে তাঁর পবিত্র মস্তক কপাল পর্যন্ত ফেটে যায়। ইমাম আলী (আঃ) সিজদারত থাকাকালে ইবনে মুলজেম তাঁর পবিত্র মস্তকে আঘাত হানে। ইবনে মুলজেম ইমাম আলী (আঃ) কে যে নামাযের মধ্যে তলােয়ারের আঘাত হানে, তার প্রথম রাকা‘আতে তিনি সূরাহ্ আল্-আম্বিয়া’র এগারটি আয়াত তেলাওয়াত করেন। ইবনে মুলজেম ইমাম আঃ এর শির মোবারকে আঘাত হানে এবং পালিয়ে যায়।
মেহরাবের মধ্যে হযরত আলী (আঃ)-এর মাথা থেকে রক্ত প্রবাহিত হলাে এবং তাতে তাঁর পবিত্র দাড়ি রঞ্জিত হয়ে উঠলাে। এ অবস্থায় ইমাম (আঃ) বললেন-
“ফুজতো বে রাব্বিল কা‘বা”
“কা’বার রবের শপথ, আমি বিজয়ী হয়েছি।”
অতঃপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন- তােমাদেরকে এ (মাটি) থেকে সৃষ্টি করেছি, এতেই আবার তােমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটাবাে, আর পুনরায় এ থেকেই তােমাদেরকে উথিত করবাে।
ইমাম আলী (আঃ) যখন আঘাতপ্রাপ্ত হলেন তখন চিৎকার করে বলে উঠলেন, “তাকে আটক করাে।” লােকজন ইবনে মুলজেমকে ধাওয়া করলাে । যে কেউ তার নিকটবর্তী হচ্ছিলাে সে স্বীয় তলােয়ার দিয়ে তাকেই আঘাত করছিলাে। অতঃপর কুসাম ইবনে আব্বাস সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাকে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দিলেন। তাকে আলী (আঃ)-এর কাছে আনা হলে তিনি তাকে বললেন-
“তুমি মুলজেমের পুত্র?” সে বললাে, “হ্যা।”
আঘাতকারী ইবনে মুলজেমের প্রতি পুত্র ইমাম হাসান আঃ কে শালিন ব্যাবহারের আদেশ ইমাম আলী আঃ এর। কুফার চিকিৎসকদের ইমাম আঃ এর আঘাতকে পরিক্ষা করা ও পরামর্শ দেওয়া।
ইমাম যখন আঘাতকারীকে চিনতে পারলেন তখন স্বীয় পুত্র হাসানকে বললেন, “তােমার শত্রুর দিকে লক্ষ্য রাখবে তাকে পেট ভরে খেতে দেবে এবং শক্ত করে বেঁধে রাখবে।অতঃপর যদি আমি মৃত্যুবরণ করি তাহলে তাকেও আমার সাথে মিলিত করে দেবে। আমার রবের নিকট তার বিরুদ্ধে নালিশ করবাে। আর যদি বেঁচে থাকি তাহলে হয় তাকে ক্ষমা করবাে না হয় কিসাস করবাে।”
ইমাম হাসান ও হুসাইন (আঃ) বানী হাশেমের লােকদেরকে সাথে নিয়ে আলী (আঃ) কে একটি গালিচার ওপরে রেখে ঘরে নিয়ে গেলেন। পুনরায় ইবনে মুলজেমকে ইমামের কাছে আনা হলাে। আমীরুল মু‘মিনীন (আঃ) তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, “আমি যদি মৃত্যুবরণ করি তাহলে তাকে হত্যা করবে যেভাবে সে আমাকে হত্যা করলাে। আর যদি বেঁচে থাকি তাহলে দেখবাে যে, তার ব্যাপারে আমার মতামত কী হয়।”
তখন ইবনে মুলজেম মুরাদী বললাে, “আমি এই তলােয়ারটিকে এক হাজার দেরহাম দ্বারা ক্রয় করেছি এবং আরাে এক হাজার দিরহাম দিয়ে বিষ মাখিয়েছি। কাজেই ওটি যদি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন।”
এ সময় উম্মে কুলসুম তাকে বললেন, “হে আল্লাহর দুশমন! আমীরুল মু‘মিনীনকে হত্যা করেছাে?” অভিশপ্ত মুরাদি বললাে, “আমি আমীরুল মু‘মিনীনকে হত্যা করি নি, বরং তােমার পিতাকে হত্যা করেছি।”
উম্মে কুলসুম বললেন, “আশা করি যেন তিনি এ আঘাত থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন।” ইবনে মুলুজেম পুনরায় নৃশংসতার সাথে বললাে, “আমি দেখছি যে, তুমি তার জন্য ক্রন্দন করছাে । আল্লাহর শপথ, আমি তাকে এমন এক আঘাত হেনেছি সেটাকে যমিনের সকল অধিবাসীর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হলে তা সকলকেই ধ্বংস করে দেবে।”
ইমাম (আঃ)-এর জন্য কিছুটা দুধ আনা হলাে। তিনি তা থেকে কিছুটা পান করলেন এবং বললেন, “বন্দীকেও এই দুধ থেকে দাও। আর তাকে কোনোরূপ কষ্ট দিও না।”
ইমাম (আঃ) যখন আঘাতপ্রাপ্ত হলেন তখন কুফার চিকিৎসকরা তাঁর শিয়রে জমা হলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ চিকিৎসক ছিলেন আছীর ইবনে আমর। তিনি আঘাত পরীক্ষা করে দেখলেন। যখন তিনি আঘাতটি লক্ষ্য করলেন তখন বললেন, “একটি দুম্বার ফুসফুস নিয়ে এসাে যা এখনাে গরম রয়েছে। অতঃপর তিনি তা থেকে একটি রগ বের করে এনে ইমামের আঘাতের স্থানে রাখলেন, এরপর সেটা বের করে এনে বললেন-
“হে আলী আপনার শেষ ওসিয়তসমূহ বলে যান। কেননা এ আঘাত মস্তিষ্কে পৌঁছে গেছে। চিকিৎসায় কোনাে লাভ হবে না।” এ সময় ইমাম (আঃ) একটি কাগজ ও কলম চাইলেন, এবং তার দুই পুত্র ইমাম হাসান ও হুসাইন (আঃ)-এর উদ্দেশে স্বীয় ওসিয়ত লিখলেন। এ ওসিয়তটি যদিও ইমাম হাসান ও হুসাইন (আঃ)-এর উদ্দেশে লেখা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা দুনিয়ার শেষ পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য।
ইমাম হাসান ও হুসাইন (আঃ)-এর উদ্দেশে ইমাম আলী আঃ এর ওসিয়ত।
দুই পুত্র ইমাম হাসান ও হুসাইন (আঃ)-এর উদ্দেশ্যে ইমাম আঃ এর ওসিয়ত। এই ওসিয়তটি যদিও ইমাম হাসান ও হুসাইন (আঃ)-এর উদ্দেশে লেখা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা দুনিয়ার শেষ পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য-
(১) আমি তােমাদেরকে খােদাভীতি ও তাকওয়ার জন্য নসিহত করছি, আর তােমরা দুনিয়ার অন্বেষণ করাে না, যদিও দুনিয়া তােমাদেরকে অন্বেষণ করে বেড়ায়। আর দুনিয়ার যা কিছু হারাও তাতে দুঃখ করাে না। সত্য কথা বলবে এবং (খােদায়ী) পুরস্কার ও প্রতিদান লাভের জন্য কাজ করবে। আর যালেমের শত্রু এবং মযলুমের সহায় হবে।
(২) আমি তােমাদেরকে এবং আমার সকল সন্তানসন্ততি ও বংশধরকে, আর যাদের কাছে আমার এই ওসিয়তনামা পৌছবে তাদের সকলকে নসিহত করছি তাক্বওয়া ও খােদাভীতির প্রতি এবং কর্মশৃঙ্খলার প্রতি, আর পারস্পরিক সম্পর্ক সংশােধন ও মীমাংসার প্রতি। কেননা, আমি তােমাদের নানাকে বলতে শুনেছি যে, জনগণের মধ্যে সংশােধন ও মীমাংসা করা এক বছর নামায‑রােযার চেয়ে উত্তম।
(৩) তােমাদেরকে আল্লাহর দোহাই ইয়াতিমদের ব্যাপারে; এমন না হয় যে, তারা কখনাে পরিতৃপ্ত আবার কখনাে ক্ষুধাপীড়িত থাকে। এমন না হয় যে, তােমাদের লক্ষ্য না করার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। তােমাদেরকে আল্লাহর দোহাই প্রতিবেশীদের সাথে সদাচারের ব্যাপারে। কেননা তাদের সম্পর্কে তােমাদের নবী এমনভাবে সুপারিশ করেছেন যে, আমরা ভাবতাম শীঘ্রই বুঝি তিনি তাদের জন্য উত্তরাধিকার বরাদ্দ করবেন।
(৪) তােমাদেরকে আল্লাহর দোহাই, কোরআনের প্রতি মনােযােগী হও। এমন না হয় যে, অন্যরা তার প্রতি আমলের ক্ষেত্রে তােমাদের চেয়ে এগিয়ে যায় । তােমাদেরকে আল্লাহর দোহাই নামাযের ব্যাপারে। নামায হলাে তােমাদের দ্বীনের স্তম্ভ। তােমাদেরকে আল্লাহর দোহাই তােমাদের প্রতিপালকের ঘরের ব্যাপারে । যতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে আছাে, তা শূন্য হতে দিও না। যদি শূন্য হতে দাও তাহলে তােমাদেরকে কোনাে সময় দেয়া হবে না; ঐশী দুর্যোগ তােমাদেরকে গ্রাস করবে।
(৫) তােমাদেরকে আল্লাহর দোহাই আল্লাহর রাস্তায় নিজ জান, মাল ও জিহ্বা দ্বারা জিহাদের ব্যাপারে। তােমাদের ওপর আবশ্যক হলাে বন্ধুত্ব ও ভালােবাসার বন্ধনগুলােকে শক্তিশালী করা আর দান করতে ভুলে না যাওয়া, আর পরস্পরকে পশ্চাৎ প্রদর্শন ও সম্পর্ক ছিন্নকরণ থেকে বিরত থাকা । সৎ কাজের প্রতি আদেশ আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করাকে পরিত্যাগ করাে না। অন্যথায় অসৎ লােকেরা তােমাদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করবে; তখন যা কিছুই দো‘আ করবে গ্রাহ্য হবে না।”
(৬) হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধররা, এমন না হয় যে, আমার শাহাদাতের পর তােমরা তােমাদের হাতকে আস্তিন থেকে বের করে আনবে এবং মুসলমানদের রক্তে নিমজ্জিত করবে, আর বলবে আমীরুল মু‘মিনীন নিহত হয়েছেন। এটা যেন রক্তপাতের একটি অজুহাত হয়ে না দাঁড়ায়।
(৭) সাবধান, আমার হত্যার কিসাস হিসেবে শুধু আমার হত্যাকারীকেই হত্যা করবে। দেখবে, যদি এ আঘাতেই আমার মৃত্যু ঘটে তাহলে তাকে কেবল একটাই আঘাত করবে যাতে একটি আঘাতের বদলে একটি আঘাত হয় আর কখনোই তার নাক, কান ও অন্যান্য অঙ্গকে কাটবে না। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, নাক, কান ও অঙ্গ কর্তন। করা থেকে বিরত থাকো, এমনকি ক্ষেপা কুকুরের বেলায়ও।
ইমাম (আঃ)-এর সন্তানগণ নিশ্ৰুপ বসেছিলেন। শােকের কষ্টে যখন তাঁদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিলাে তখনাে তারা ইমামের এ হৃদয়গ্রাহী ও মনােরম কথাগুলাে কান পেতে শুনছিলেন। এ বক্তৃার শেষ ভাগে ইমাম (আঃ) সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। যখন পুনরায় সংজ্ঞা ফিরে পান তখন চোখ খুলে বলেন-
(৮) প্রিয় হাসান! তােমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আজকের রাতটি হলে আমার জীবনের শেষ রাত। আমার মৃত্যুর পর তুমি নিজের হাতে আমাকে গােসল দেবে এবং কাফন পরাবে। তুমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেই আমার কাফন ও দাফনের কাজ সম্পন্ন করবে এবং আমার জানাযার নামায আদায় করবে। আর রাতের আঁধারে আমার লাশকে কূফা শহর থেকে দূরে গােপনে সমাধিস্থ করবে যাতে কেউ সে খবর জানতে না পারে।”
আঘাতপ্রাপ্তির পর ইমাম আলী (আঃ) দুই দিন বেঁচে ছিলেন। অবশেষে ৪০ হিজরীর ২১শে রামাযান রাতে অর্থাৎ রামাযান মাসের শেষ দশ দিনের প্রথম দিনের রাতেই – যা ছিলাে জুম’আর রাত – ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইহলােক ত্যাগ করেন । তাঁর প্রিয় পুত্র ইমাম হাসান (আঃ) নিজ হাতে তাঁকে গােসল দেন এবং তাঁর নামাযে জানাযা পড়ান। আর ওসিয়ত অনুযায়ী সকল কাজ পরিপূর্ণ করেন।
এতো সুন্দর গুছিয়ে লেখা আমি কোনদিন পায়নি।
অনেক তথ্য সমৃদ্ধি । লেখা গুলি যেন কথা বলছে।তাই মাননীয় গবেষক-উপস্থাপক উপর অশেষ সালাম ???