পবিত্র রমযান মাস অতি মর্যাদাপূর্ণ মাস, আল্লাহ তায়ালা নিজের বন্দাদের নিজেই নিজেই মেজবান হয়ে তাঁর বান্দাদের আপ্যায়ন করেন। এই মাসের অনেক আদব আছে যেগুলো স্বাধরণতঃ আমাদের দেশে সে সব আদব ও শিষ্টাচারকে গ্রাহ্য করা হয় না। আশা আছে আমরা নিজেরদের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসব এবং গত কালের থেকে আগামিকালকে আরো উত্তম করে তুলব সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই এবছর রমযান শুরু করবো, ইন‑শা আল্লাহ।
আপনাদের সামনে পবিত্র রমযান মাস সম্পর্কিত কিছু হাদিস উস্থাপন করা হলো :
১- ইসলামের ভিত্তি
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটি নামায, জাকাত, হজ, রোযা এবং বেলায়াত। (ফুরুয়ে কাফি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬২, হাদিস নং ১ )
২- রোযার দর্শন
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: আল্লাহ ধনি গরিবের মাঝে অসমতা দূর করার জন্য রোযাকে ওয়াজিব করেছেন। (মান লা ইয়াযারুহুল ফাকিহ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩, হাদিস নং ১)
৩- রোযা ইখলাসের পরিক্ষা স্বরূপ
হযরত আলি (আ.) বলেছেন: আল্লাহ তার বান্দার পরিক্ষা নেয়ার জন্য রোযাকে ওয়াজিব করেছেন। (নাহজুল বালাগা, হিকমত নং ২৫২)
৪- রোযা কেয়ামতকে স্মরণ করায়
ইমাম রেযা (আ.) বলেছেন: মানুষের উপরে রোযাকে এজন্য ফরজ করা হয়েছে যেন তারা ক্ষুধা, তৃষ্ণাকে অনুভব করার মাধ্যেমে কেয়ামতের কষ্ট ও দুর্দশাকে উপলব্ধি করতে পারে। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪, হাদিস নং ৫)
৫- রোযা দেহের জাকাত স্বরূপ
রসূল (সঃ) বলেছেন: প্রত্যেকটি জিনিষের জাকাত রয়েছে আর দেহের জাকাত হচ্ছে রোযা। (কাফি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬২, হাদিস নং ৩)
৬- রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ
রসূল (সঃ) বলেছেন: রোযা হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুনের জন্য ঢাল স্বরূপ। (কাফি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৬২)
৭- রোযার গুরুত্ব
রসূল (সঃ) বলেছেন: গরমে রোযা রাখা হচ্ছে জিহাদের সমতুল্য। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৬, পৃষ্ঠা ২৫৭)
৮- প্রকৃত রোযা
হযরত আলি (আ.) বলেছেন: প্রকৃতপক্ষে রোযা হচ্ছে হারাম সমূহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা যেমনটি রোযাদার নিজেকে পানাহার থেকে বিরত রাখে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ২৪৯)
৯ – সর্বত্তোম রোযা
ইমাম আলি (আ.) বলেছেন: পেটের রোযার চেয়ে জিহবার রোযা উত্তম এবং জিহবার রোযার চেয়ে অন্তরের রোযা উত্তম। (গুরারুল হেকাম, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১৭, হাদিস নং ৮০)
১০- হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) থেকে বলেছেন: যে ব্যাক্তি নিজের জিহবা, চোখ, কান সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সংযত করতে পারে না তার রোযা কোন কাজেই আসবে না। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ২৯৫)
১১- রোযা এবং ধৈর্য
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: তোমরা নামায ও ধৈর্যর মাধ্যমে সাহায্যে কামনা কর। এখানে ধৈর্য হচ্ছে রোযা। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৯৮)
১২- সাদকা এবং রোযা
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: এক দিরহাম সাদকা দেয়ার চেয়ে একদিন মুস্তাহাব রোযা রাখার চেয়ে উত্তম। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২১৮)
১৩- রোযার পুরস্কার
রসূল (সঃ) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: রোযা হচ্ছে আমার ইবাদত সুতরাং আমি এর পুরস্কার দিব। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৯৪)
১৪- রোযাদারদের জন্য খুশির খবর
রসূল (সঃ) বলেছেন: ধন্য হচ্ছে ঐ সকল রোযাদার যারা আল্লাহর জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় থাকে। তারা কেয়ামতে পরিতৃপ্ত হবে। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৯৯)
১৫- রোযাদারদের জন্য সুসংবাদ
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: যে ব্যাক্তি আল্লাহর জন্য অত্যন্ত গরমের দিনে রোযা রাখে এবং তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে আল্লাহ তার জন্য হাজার ফেরেস্তাকে নিযোগ করে তারা যেন রোযাদার ব্যাক্তির মুখে হাত বুলিয়ে দেয় এবং ইফতারির সময় পর্যন্ত তাকে সুসংবাদ দিতে থাকে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ২৪৭)
১৬- রোযাদারদের জন্য বেহেস্তে বিশেষ দরজা
রসূল (সঃ) বলেছেন: বেহেস্তে একটি দরজা রয়েছে সেখান থেকে শুধুমাত্র রোযাদারগণ প্রবেশ করবে। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৯৫)
১৭- রোযাদারদের দোয়া
ইমাম কাযিম (আ.) বলেছেন: ইফতারির সময় রোযাদারদের দোয়া কবুল করা হয়। (বিহারুল আনওয়ার খন্ড ৯২, পৃষ্ঠা ২৫৫)
১৮- মুমিনদের বসন্তকাল
রসূল (সঃ) বলেছেন: শীতকাল হচ্ছে মুমিনদের জন্য বসন্তকাল। তারা দীর্ঘ রাতে ইবাদত করে এবং ছোট দিনে রোযা রাখে। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩০২)
১৯- মুস্তাহাব রোযা
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: মানুষ যে সকল সৎ কর্ম করে তার দশগুণ সওয়াব তাকে দান করা হয়। অনুরূপভাবে যদি কেউ প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা রাখে তাহলেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১৩)
২০- ইফতারি খাওয়ানো
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: যদি কেউ রোযাদারকে ইফতারি খাওয়ায় তাহলে তাকেও আল্লাহ রোযাদারের সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন। (কাফি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৮)
২১- রমযানের রোযা ভাঙ্গা
যদি কেউ রমযান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভাঙ্গে তাহলে তার ঈমান হ্রাস পাবে। (মান লা ইয়াহযারুহুল ফাকিহ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৩)
২২- রমযান হচ্ছে আল্লাহর মাস
ইমাম আলি (আ.) বলেছেন: রমযান আল্লাহর মাস, শাবান রসূল (সঃ) এর মাস এবং রজব হচ্ছে আমার মাস। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৬৬)
২৩- রমযান হচ্ছে রহমতের মাস
রসূল (সঃ) বলেছেন: রমযানের প্রথম ১০ দিন হচ্ছে রহমত, পরের ১০ দিন হচ্ছে বরকত এবং শেষের ১০ দিন হচ্ছে মাগফেরাত এ দিনগুলোতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে জাহান্নারে আগুন থেকে পরিত্রাণ দান করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ৩৪২)
২৪- রমযান মাসের ফযিলত
রসূল (সঃ) বলেছেন: আসমানি দরজা সমূহ রমযান মাসের প্রথম রাতে খুলে দেয়া হয় এবং শেষ রাতে বন্ধ করা হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ৩৪৪)
২৫- রমযান মাসের গুরুত্ব
রসূল (সঃ) বলেছেন: যদি বান্দারা রমযান মাসটির গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত থাকতো তাহলে তারা চাইতো যেন সারা বছর রমযান থাকুক। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ৩৪৬)
২৬- কোরআন এবং রমযান মাস
ইমাম রেযা (আ.) বলেছেন: রমযান মাসে একটি আয়াত তেলাওয়াত করলে অন্যান্য মাসে কোরআন খতমের সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ৩৪৬)
২৭- ভাগ্যের রজনি
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: লাইলাতুল কদর হচ্ছে এমন এক রজনি যে রাতে আগামি বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৫৮)
২৮- উত্তম রজনি হলো লাইলাতুল কদর
ইমাম সাদিক (আ.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো: কিভাবে লাইলাতুল হাজার রাতের চেয়েও উত্তম? ইমাম (আ.) বলেন: উক্ত রাতে সকল ভাল কাজ হাজার মাসের তুলনায় উত্তম কেননা ঐ মাসগুলোতে শবে কদর নেই।(ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৫৬)
২৯- ভাগ্যলিপির রজনি
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: ১৯ রমযান আমল সম্পাদিত হয় এবং ২১ তারিখে অবলোকন করা হয় এবং ২৩ তারিখে তা নির্ধারণ করা হয়। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৫৯)
৩০- রমযানের ফেতরা:
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: যেমনটি রসূল (সঃ) এর প্রেরিত দরুদ নামাযকে পূর্ণতা দান করে। অনুরূপভাবে রোযা জাকাত দানের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২২১)
মতামত দিন