প্রবন্ধ

হিংসা এবং লোভ

Written by Sipahsalar

হিংসা এবং লোভ

মানুষের অন্যতম একটি খারাপ গুণ হল হিংসা। ইসলামে হিংসা বা বিদ্বেষ পোষনকারীকে খুবই নিকৃষ্ট চোখে দেখা হয়েছে। হিংসুকের জীবন কখনই সুখের হয় না। হিংসুক ব্যক্তি সমাজের অন্যান্য সন্মানিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বকে হেয় করার চেষ্টা করে। কেননা তার দৃষ্টিতে সে একাই সমাজে সন্মানিত ব্যক্তি, বাকিরা সবাই তারচেয়ে নগন্য। হিংসুক ব্যক্তি না স্রষ্টার দৃষ্টিতে ভাল আর না সৃষ্টির দৃষ্টিতে। হিংসুককে কেউ ভাল দৃষ্টিতে দেখে না, সবার মাঝে তার প্রতি একটা খারাপ ধারনা জন্ম নেয়। সমাজে অন্য সবার সাথে বসবাস করলেও মানুষের মনে কোন স্থান তার নেই। কোরআন ও হাদীসেও হিংসা এবং হিংসুককে কঠিণ ভাবে নিন্দা করা হয়েছে।
ইমাম আলী আঃ বলেছেন, ‘হিংসা ও বিদ্বেষকারী শোকার্ত হয়’। তিনি আরো বলেন, ‘হিংসা ও বিদ্বেষ মানুষের কোন উপকারে আসে না’।
স্বয়ং আল্লাহ্‌ পাক এই বলে আমাদেরকে পানাহ চাইতে বলেছেনঃ “এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে”।
ইমাম বাকির আঃ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যেভাবে আগুন কাঠকে ভক্ষণ করে, হিংসাও সেভাবে ঈমানকে ভক্ষণ করে’।
ইমাম সাদিক আঃ বলেছেন, ‘একে অপরের সাথে হিংসা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা হিংসা হল কুফরের ভিত্তি স্বরূপ’।
হযরত লোকমান আঃ স্বীয় পুত্রকে বললেন, ‘হিংসুকের তিনটি চিহ্ন রয়েছে : পিঠ‑পিছনে গীবত করে, সামনা সামনি তোষামোদ করে এবং অন্যের বিপদে আনন্দিত হয়।’

লোভ মানুষের অধপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিগণিত। লোভ মানুষের জীবন থেকে সুখ কেড়ে নেয়। আল্লাহ তায়ালা যে সকল নেয়ামত তাকে দান করেছেন তার শুকরিয়া কখনই সে আদায় তো করেই না, বরং আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তার চেয়ে সে বেশী চায় এবং যদি সেটা পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে সে আবার নতুন করে আর একটি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে, যদি সে লোভী হয় এবং আল্লাহর শুকুর গোযার না হয় সবসময় তার এই চিন্তা থাকে যে, আরো উন্নত একটি বাড়ি ভাড়া নিতে হবে। যখন পূর্বের চেয়ে আরো উন্নত বাড়ি সে ভাড়া নিতে সক্ষম হয়, তখন সে আবার নতুন করে ভাবে, যদি সুন্দর একটা বাড়ি বানাতে পারতাম। একটা বাড়ী হয়ে গেলে দ্বিতীয়টির চিন্তা করে। এভাবেই চলতে থাকে তার লোভের চক্র। আর কখনই সে এ সমস্ত নেয়ামত যা আল্লাহ্ তাকে দিয়েছেন তাকে যথেষ্ঠ ভেবে শুকুর আদায় করে না।
ইমাম সাদিক আঃ বলেছেন, ‘লোভী দু’টি উৎকৃষ্ট গুণ হতে বঞ্চিত, ফলশ্রুতিতে সে দু’টি দোষের অধিকারী; সে পরিতৃপ্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত ফলে প্রশান্তিকে হাতছাড়া করেছে, আর সন্তুষ্টি হতে বঞ্চিত ফলে বিশ্বাসকে খুইয়েছে’। ইমাম আলী আঃ বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ধনী যে লোভের বন্দি নয়’। ইমাম সাদিক আঃ বলেছেন, “আমিরুল মু’মিনীন আঃ বলতেন যে, ‘হে আদমের সন্তানেরা! যদি তুমি দুনিয়া হতে পরিমাণ মত চাও তাহলে সেটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যদি পরিমাণের চেয়ে বেশী চাও, সমস্ত দুনিয়াও তোমার জন্য যথেষ্ঠ নয়’।
মহানবী সঃ এর হাদীসে বর্ণিত আছে, “হে আলী জেনে রাখ! ভয়, কৃপণতা ও লোভ একই প্রকারের, আর তাদের মূলে হল খারাপ ধারণা পোষন করা”।

@sat

About the author

Sipahsalar

মতামত দিন