জীবনবৃত্তান্ত

সৈয়দ ইলিয়াস কুদ্দুস (রহঃ) কুতুবুল আওলিয়া

সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন (রহঃ)এর পঞ্চম অধস্থন পুরুষ। সিপাহসালার থেকে তাঁর বংশক্রমঃ সৈয়দ নাসির উদ্দীন(রঃ)> সৈয়দ সিরাজ উদ্দীন(রঃ)> সৈয়দ মুসাফির(রঃ)> সৈয়দ খদাওন্দ(রঃ)সৈয়দ ইস্রাঈল(রঃ)> সৈয়দ ইলিয়াস কুদ্দুস (রহঃ) কুতুবুল আউলিয়া। উল্যেখ্য যে ইলিয়াস কুদ্দুস(রঃ)এর পিতা সৈয়দ ইস্রাঈল (রঃ) পৈত্রিক হাবেলী লস্করপুর থেকে সরে গিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘরগাঁও এ নিজ হাবেলী স্থাপন করে ছিলেন।

সৈয়দ ইলিয়াস একদা স্বীয় হাবেলীর কাছাকাছি কোন এক স্থানে বসে বিশেষ কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা মগ্ন ছিলেন। এদিকে দুপুর গড়িয়ে অপরাহ্ন হয়ে গেল, কিন্তু তিনি দুপুরের খাবার খেতেও তোষাখানায় যান নি বিধায় দাসী এসে তাকে বল্ল- ‘হুজুর, দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল, আর কত? এবার নিজের ঘরে চলুন’। দাসীর মুখে এ কথাটা শোনা মাত্রই তিনি চমকে উঠলেন। বাড়বার বলতে লাগলেন- ‘হায় হায়! দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা সমাগত! অথচ মাবুদের কোন বন্দেগীই আমার এখনও হোল না’। এ কথা বলতে বলতে আপন মাবুদের টানে সম্মুহিত হয়ে তিনি চলতে থাকেন। চলতে চলতে নিজ গ্রাম ঘরগাঁও থেকে বেশ দূরে এসে খোয়াই নদীর তিন মাইল উত্তরে নির্জন একটি জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে এসে বসে পড়েন; আর মশগুল হয়ে যান আপন স্রস্টার সুগভীর ইবাদতে। তখন ছিল অমাবস্যা তিথি, অন্ধকার রাত্রে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন দুরের এই জঙ্গলে সহসাই উজ্জ্বল চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে দেখে সেখানে গিয়ে তারা ঘরগাঁওয়ের সৈয়দ ইলিয়াস কুদ্দুস সাহেবকে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন অবস্থায় আবিস্কার করে। সেই থেকে এই স্থান ‘চন্দ্রচুরি’ নামে অভিহিত হয়। অদ্যাবধী চন্দ্রচুরি গ্রামে তাঁর সেই চিল্লাখানা বিদ্ধমান আছে। কিন্তু তিনি তাঁর প্র‑প্রপিতামহ সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন(রহঃ)এর মাজারের পাশে চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন।

সৈয়দ ইলিয়াস কুদ্দুস কুতুবুল আউলিয়া (রহঃ) বাংলা, হিন্দি, ফার্সি ও আরবি ভাষার সংমিশ্রণে বেশ কিছু আধ্যাত্নিক সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। তাঁর রচিত সঙ্গীত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীন সম্পদ বলে স্বীকৃত হয়েছে। এর একটি সঙ্গীতকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইসহাক সাহেব বাংলা ভাষায় অনুবাদ বা ভাষান্তর করেছিলেন যা নিচে উপস্থাপন করা হলঃ

মুই তোর কি দোষ কৈলুঁরে জানম, মুই তোর কি দোষ কৈলুঁ

আরজু ফরদম রুহে তু দিদম, তন্ মন পাগল ভৈলু।

হামচুঁ মজনু বাহরে তু লাইলী, ভাবিয়া ব্যাকুল হৈলুঁরে জানম।

ইমরুজ ফজরে দিলবরে জানম, আসিবায় বলিয়া গেলে

রোজ গুজাশতা শাম রসিদা আবতক, তুই ঘরে না আইলেরে জানম।

জুলফে কুশাদী জানম বুঁদি, ভূলিয়া রইলে মোরে।

রোজ না খুরদম শবনা খুফতম, রাইত কেনে না আইলায়রে জানম।

চশমে তু আহি চুঁনি বুলন্দ, দান্দানে তু দানারে আনার।

এশকে তোমহারা ছিনা গুফতার হিতক, পুড়িলে মোরে বা জানম।

হরফে আলাস তু মেরা না উঁমেদি, কালু বালা চিত্তে রইলুঁ।

আলেমুল গায়েব তু রহিম রওশন, মুইঁ তর অন্ত না পাইলুঁরে জানম।

লা তাকনাতু মির নাহমতুল্লাহে, কুতুবে মান্দারে হিয়া

ইল্লাল্লাহু ইয়াগফেরি জুনুবা, ভূলিয়াছনি তুমি জানম

মুইঁ তর কি দোষ কৈলুঁ?

বাংলা ভাষারূপঃ

আমি কি দোষ করলাম, হে আমার প্রাণপ্রিয়, আমি কি দোষ করলাম?

আমি আশা করেছি তোমাকে দেখব, দেহ মন পাগল হল।

মজনু যেরুপ লাইলীর জন্য পাগল, আমি তোমার জন্য ভেবে ভেবে ব্যাকুল হলাম।

হে প্রাণপ্রিয়, বলে গেলে আজ মনভুলানো ফজরের সময় আসবে।

দিন গেল, সন্ধ্যা নামল, এখন পর্যন্ত তুমি এলে না।

প্রাণপ্রিয় আমার, কেশের বেণী মুক্ত করে প্রাণ নিয়ে গেলে তবু ভূলে রইলে।

দিনে খাইনি, রাতে ঘুমাইনি, প্রাণপ্রিয়, রাতে কেন এলেনা?

তোর চোখ হরিণের মত বড়, দাঁত আনারের দানার মত ঝকঝকে।

তোর প্রেমে আমার হৃদয় বন্দী, প্রাণপ্রিয়, আমাকে দহন করলে!

আমি কি তোমাদের প্রভূ নহি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমায় নিরাশ করে।

কিন্তু হ্যা, নিশ্চয় আপনি আমাদের স্রস্টা এই কথা অন্তরে আশার সঞ্চার করে।

তুমি অজানাকে জান, তুমি দয়ায় সমোজ্জল,আমি তোমার অন্ত পেলাম না।

আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না,তোমার এই বাণী,

কুতুব তার মনের কোণে রেখে দিল,

নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন, একথা ভূলেছিলাম।

হে প্রাণপ্রিয়, আমি কি দোষ করলাম, কোন দোষে দোষী হলাম?

@sat

মন্তব্য

মতামত দিন