জীবনবৃত্তান্ত

সৈয়দ গাজিউর রহমান(মা.জি.আ.)

সৈয়দ গাজিউর রহমান(মা.জি.আ.)

সৈয়দ গাজিউর রহমান(মা.জি.আ.)সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত।

আলোকিত নক্ষত্র,নন্দিত রাজনীতিবিদ,ইসলামী ব্যক্তি,লেখক ও গবেষক,সমাজ সেবক সৈয়দ গাজিউর রহমান(মা.জি.আ.) ৬ জানুয়ারী ১৯৪০ সালে হবিগঞ্জের প্রসিদ্ধ সুবারই সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি বংশকৌলীন্য,উঁচুমানের ব্যক্তিত্ব, সততা-নৈতিকতার বিচারে সর্বোপরি একজন ঈর্ষণীয় আইকন। পিতা কামেল অলি জমিদার সমাজ সেবক, মানবদরদী শাহসূফী সৈয়দ মোহাম্মদ ইসমাইল(রঃ)।তরফ ও সিলেট রাজ্য বিজয়ী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ:) এর অধস্থন সিংহ পুরুষ সৈয়দ মোঃ ইসমাঈল (রহ.)থেকে সুরাবই সাহেব বাড়ির বংশধারা শুরু।সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দীন রহঃ থেকে সৈয়দ গাজিউর রহমান(মা.জি.আ.)পর্যন্ত বংশক্রমঃ সৈয়দ নাসিরুদ্দীন রঃ> সৈয়দ সিরাজ উদ্দীন রঃ>সৈয়দ মুসাফির রঃ>সৈয়দ খোদাওন্দ রঃ>সৈয়দ ইসরাইল বন্দেগী শাহ (রহ)>সৈয়দ ইসমাইল (রহ:) >সৈয়দ শাহজালাল(রহ)>সৈয়দ আহমদ(রহ:)>সৈয়দ মাইনুদ্দিন রহ:>সৈয়দ নাজিম উদ্দিন রহ:>সৈয়দ সানাঊল্লাহ রহ:>সৈয়দ নাদির হোসেন রহ:>সৈয়দ মোহাম্মদ নাদে আলী রহ:>সৈয়দ মোহাম্মদ ইসমাঈল রহ:>সৈয়দ গাজিউর রহমান(মা.জি.আ.)।

সৈয়দ গাজিউর রহমান ছোটবেলায় নিজের বাবাকে হারিয়েছেন।তার ডাক নাম ছিল মাকছুদ মিয়া।ছোটবেলা থেকেই নিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন সৈয়দ রহমান।প্রাথমিক পর্যায়ের আরবী, কুরআন‑হাদীসে,বিভিন্ন স্তরের ফিক্বাহ্ শাস্ত্র ও উছূল্ স্বীয় পরিবারের তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন।গ্রামের পাঠশালাতেই সৈয়দ গাজিউর রহমান শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পাঠশালার পড়া শেষ করে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ হাইস্কুলে ভর্তি হন।সৈয়দ গাজিউর রহমান ১৯৫৭ সালে শায়েস্তাগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৯ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে আই.এ ও ১৯৬১ সালে বি.এ পাস করেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বৃন্দাবন কলেজে ছাত্র সংগঠনের পরপর জি.এস এবং ভি.পি ছিলেন। ১৯৬২ সালে লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে তিনি সেলস ম্যানেজম্যন্ট এর উপর লেখাপড়া করেন। পরে স্কুল অব কমার্স‑এ ভর্তি হন।৪ বছর লন্ডনে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি পারটাইম চাকুরি করতেন। তিনি লন্ডনে পাকিস্থান ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের মিডল সেক্স শাখার জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন। ১৯৬৯ সালে মায়ের অসুখের খবর শুনে বিলেত থেকে চলে আসেন।সৈয়দ গাজিউর রহমান ১৯৭০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিবাসী আলহাজ্ব মোঃ আজিজুর রহমান সাহেবের মেয়ে মোসাম্মৎ নাজমা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মরহুম আজিজুর রহমান ব্রাহ্মণ বাড়িয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি M.N.A (পাকিস্থান আমলে মেম্বার অব ন্যাশনাল এসেম্বলী) ছিলেন। কুমিল্লা জেলা মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

সৈয়দ গাজিউর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্থান আর্মি কর্তৃক ধৃত হন অবশেষে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে বেড়ান। সৈয়দ গাজিউর রহমান ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় মোজাফফর ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদের রিলিপ চেয়ারম্যান হন। ১৯৭৩ সালে ইউ.পি. চেয়ারম্যান নির্বাচতি হন। তিনি পর পর চারবার ইউ.পি চেয়ারম্যান ছিলেন। হবিগঞ্জ চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। সিলেট জেলা চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী ছিলেন।চট্টগ্রাম বিভাগ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ছিলেন।জনসেবার জন্য শুধু এলাকাবাসীর ভালবাসাই পাননি ‚সরকারের তরফ থেকেও তাঁর সৎ কর্মের স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি ১৯৭৮ সালে সিলেট জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন। জেলা প্রশাসন থেকে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নের উপর স্টাডি করার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছেন। তিনি ৭ বছর হবিগঞ্জ থানার থানা চেয়ারম্যান ছিলেন। বহু সেবামূলক সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন ও আছেন।জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সদস্য ছিলেন। জেলা শিক্ষা কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট। জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রনের সদস্য। ট্রেড এন্ড কমার্সের সদস্য। স্কাউট হিসেবে চট্টগ্রাম জাম্বুরীতে অংশ গ্রহণ করেন।জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইত্যাদি পদ অলংকৃত করেছেন।তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।অনেক এতিমখানা ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

হতদরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে স্বল্প খরচে ন্যায়বিচারের সুফল পৌঁছে দিতে ‘গ্রাম‑আদালতের’প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়েছিল সেই ১৯৭৬ সালেই। অকার্যকর এই ব্যবস্থাটিতে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে ২০০৬ সালে।সৈয়দ গাজিউর রহমান জীবনে এলাকার অসংখ্য বিবাদের বিচার সালিশ করে নিরপেক্ষতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।সমাজের যে কোন জটিল কলহ বিবাদের সুষ্ঠু ও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রদানে তিনি অদ্বিতীয়।জটিল টেকনিক্যাল বিষয়গুলাে ধারণ করার ক্ষেত্রে তার আছে অসাধারণ ক্ষমতা, দ্বান্দ্বিক দক্ষতা এবং গভীর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।যে মামলা কোর্ট কাছারীতে আপোষ হয়না সে মামলাও তিনি অবলিলায় নিস্পন্ন করে দেন যেখানে উভয় পক্ষই আনন্দ চিত্তে তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।তিনি সকলের বিশ্বস্থ।তাঁর বিচক্ষণতা ও কঠোর নিরপেক্ষতাই সকলের নিকট তাঁকে গ্রহনযোগ্য করে।যত বড় সমস্যাই হউক না কেন তার নিকট এলে একটা সুরাহা হয়ে যেত।বর্তমান প্রজন্ম তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা গ্রহন করে এগিয়ে যাবে এটাই কামনা।

অত্যন্ত সাহিত্যপ্রেমী মানুষ পারিবারিক পরিপ্রেক্ষিতেই সাহিত্যানুরাগী হয়ে উঠেছিলেন বাল্যকাল থেকেই তারই পরিণতি,সাহিত্য সাধনায় স্পষ্ট ফুটে ওঠে।বাল্যকাল থেকেই তাঁর বই পড়ার দারুণ নেশা ছিল। সেই সময় থেকেই তাঁর ভাষা শেখার আগ্রহ জন্মে। স্কুল জীবনেই তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি এবং ভাষা পড়তে শিখেছিলেন।সৈয়দ গাজিউর রহমান সাহেব প্রচুর বই পড়েন এবং প্রচুর লেখালেখিও করেছেন। কলেজ ম্যাগাজিন ১৯৫৮ সালে শাহজালাল (রঃ) উপর লিখেছেন। জাম্বুরীর উপর ইংলিশ লেখা ছাপা হয়েছে। হবিগঞ্জের পল্লী সাহিত্যের উপর তিনি লিখেছেন। হবিগঞ্জ পরিক্রমা বইয়ের তিনি সম্পদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন।এছাড়া তাঁর বহু লেখা অপ্রকাশিতও রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে ইংল্যান্ড,থাইল্যান্ড,জার্মানি,ইতালি,স্পেন,গ্রীস,বেলজিয়াম,তুরস্ক,মালয়েশিয়া,আরব-আমিরাত,ফিলিপাইন,ব্রুনেই, সিংগাপুর,ফ্রান্স,ভারত,পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ ভ্রমন করেছেন।বর্তমানে অধ্যাপনা,গবেষনা,ধর্মপ্রচার ও পূর্ব পুরুষদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পীর মুরিদির দায়িত্ব পালনে রত আছেন।দেশে বিদেশে তাঁর অসংখ্য ভক্ত মুরিদান রয়েছে।

সৈয়দ গাজিউর রহমানসর্বদা মানুষকে ইসলামমুখী করার ব্যাপারে সচেষ্ট।মানুষের ইসলামী উন্নতির চিন্তা করেন।ধর্মী‌য় বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সহজ ও নম্র ভাষায় বিস্তারিত উত্তর প্রদানে তিনি সমাদৃত।এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রসঙ্গে যুবকদেরকে সম্বোধন করে আলোচনা করেন। তাদের আবেগ‑অনুভূতি ও বিভ্রান্তির বিষয়গুলো তুলে ধরে দরদমাখা ভাষায় সংশোধনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। এ কারণে যুবকদের বড় একটি শ্রেণি তার ভক্ত ও শ্রদ্ধার ব্যক্তিত্ব।

সৈয়দ গাজিউর রহমান সাহেবের সদালাপ, সুন্দর বক্তব্য ও হাস্য রসিকতায় তার জুড়ি পাওয়া ভার।তার আরেকটি শখ শিকার। মাঝে মধ্যে তিনি শিকারে পাহাড়ে চলে যান।সাংসারিক জীবনে সৈয়দ গাজিউর রহমান ৩ ছেলে ৩ কন্যার জনক। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক সৈয়দ গাজিউর রহমান নিঃসন্দেহে পরিবার তথা দেশ ও সমাজের গৌরব।

মন্তব্য

Leave a Reply to Anonymous